জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,বর্ধমান,০৬ জুন : নিয়ম মেনে আজ বৃহস্পতিবার ( ৬ জুলাই ২০২৩) বিকেল ৫ টায় শেষ হল পঞ্চায়েতের ভোট প্রচার। আড়ালে আবডালে মিডিয়ার চোখ এড়িয়ে হয়তো পাড়ার গলিতে প্রচার হতেও পারে,যদিও সেটা কিছুটা কষ্টকর । এখন হাতের মোবাইল হয়ে উঠছে রিপোর্টার এবং সামাজিক মাধ্যম হল মিডিয়া । অবশ্য রাজনৈতিক দলের নেতারা এসব তোয়াক্কা করে না। রেডিমেড অজুহাত – অতি উৎসাহে দলের নীচু তলার কর্মীরা এসব করে ফেলেছে। অথবা দলের অতি উৎসাহি কর্মীদের আবদারে নির্দিষ্ট সময়ে প্রচার শেষ করে ফেরার পথে নেতা বা নেত্রী কিছুক্ষণের জন্য ওদের সঙ্গে কথা বলার জন্য দাঁড়ালেও প্রচার করেনি ।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক এবং এখনো চলছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে গোটা রাজ্য জুড়ে নাকি সন্ত্রাসের রাজত্ব শুরু হয়েছে। অতএব রাষ্ট্রপতি শাসন চাই । কেউ বলছে না সন্ত্রাস হলে বিপুল সংখ্যক আসনে বিরোধীরা প্রার্থী দিল কি করে? একইসঙ্গে মৃত্যুর ঘটনাও সত্য। প্রচারের ময়দান ছেড়ে সন্ত্রাসের ইস্যু নিয়ে শাসক বিরোধীরা আদালতের স্মরণাপন্ন হয়েছে। আশা পূরণ হয়নি। আবার নতুন বিতর্ক শুরু হচ্ছে। কখন শেষ হবে হলফ দিয়ে কেউ বলতে পারবেনা।
২০১৮ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের স্মৃতি মাথায় রেখে শুরু হয়েছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কাজ। জমা নেওয়ার কেন্দ্রে ছিল কঠোর নিরাপত্তা। কিছু অভিযোগ এলেও, বিগত পঞ্চায়েত ভোটের তুলনায় অনেক কম।
শাসক ও শাসক বিরোধী দলগুলো পরস্পরের প্রতি অভিযোগ পালটা অভিযোগ এনে মিডিয়ার ফুটেজ খাবে এবং অবান্তর প্রসঙ্গ এনে নিজেদের প্রাসঙ্গিক রাখার চেষ্টা করবে। একইসঙ্গে সাধারণ মানুষকে বোকা বানানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। এতদিন যারা লক্ষীর ভাণ্ডার সহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে ঠাট্টা করত তারাই বলছে পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় এলে দু’হাজার টাকা ‘ভাতা’ দেবে। কিন্তু কিভাবে পঞ্চায়েত প্রশাসন এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেবে সেটা স্পষ্ট করছেনা । আমরা ধরে নিতে পারি ভোটের প্রচারে এইসব বলা হয়েই থাকে। যেমন বিজেপি বছরে দু’কোটি এবং তৃণমূল ডবল ডবল চাকরির কথা বলে। অথবা নারদা কাণ্ডে ক্যামেরার সামনে হাতে টাকা নেওয়া ব্যক্তি দুর্নীতি মুক্ত পঞ্চায়েত গড়ার ডাক দেন ।
পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে এতগুলো প্রাণ যে চলে গেল তার দায় কে নেবে? ভোট আসবে, নিরাপত্তার ঘেরাটোপে থাকা নেতারা উস্কানিমূলক কথা বলবে, ওদিকে প্রাণ যাবে সাধারণ মানুষের। দলকে ভালবাসা এক কথা, নেতাদের কথা শুনে হিংসার আশ্রয় নেওয়া অন্য বিষয়। সেক্ষেত্রে একজন সন্ত্রাসবাদীর সঙ্গে তফাৎ কোথায় ? আজ পর্যন্ত কোনো কর্মীকে দেখা গেল না দলের নেতাদের হিংসাত্মক ভাষণের প্রতিবাদ করতে। নেতা থাকবে দূরে। স্বজন হারানো প্রতিবেশী থাকবে পাশে। তার কান্নার আওয়াজ যখন কানে আসবে তখন কি হবে?
সভায় হাজির হওয়া সবাই কিন্তু সংশ্লিষ্ট দলের একনিষ্ঠ সমর্থক নয় এবং তাদের সংখ্যাটাও নিছক কম নয় । হিংসা বন্ধ করার দায়িত্ব ওই সমস্ত সাধারণ মানুষকেই নিতে হবে। ঘোষণা করতে হবে যে দল হিংসায় মদত দেবে তাকে ভোট নয়। প্রয়োজনে বয়কট করতে হবে উস্কানি দেওয়া দলের পাড়ার নেতাদের। যদিও মুখে বলা যত সহজ বাস্তবে ততটা নাহলেও অসম্ভব নয়। ইতিহাস সাক্ষী।।