প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১২ জুলাই : বাংলায় প্রশাসন ও তৃণমূল মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে বলে প্রায়শই অভিযোগ তুলে থাকেন বিরোধী দলের নেতাারা । সেই অভিযোগেই এবার যেন সিলমোহর দিয়ে বসলো খোদ রাজ্যের কৃষি দপ্তর।রীতিমত ফ্লেক্স তৈরি করে তৃণমূল কংগ্রেস দলের ২১ শে জুলাইয়ের শহীদ কর্মসূচি সফল করার প্রচার চালাচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লক কৃষি দপ্তর।এমনই ছবি শুক্রবার ধরা পড়েছে জামালপুর ব্লকের সহ- কৃষি অধিকর্তার দপ্তরে ঢোকার দরজার সামনে।সেখানেই ঝোলানো থাকে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জির ছবি সহযোগে তৈরি ২১ শে জুলাইয়ে শহীদ সভার সমর্থনে ফ্লেক্স। যার নেচে বড় বড় অক্ষরে লেখা রয়েছে, প্রচারে- কৃষি দপ্তর , জামালপুর ব্লক, পূর্ব বর্ধমান ।’ আর এমন ফ্লেক্স নিয়ে তৈরি হয়েছে তুমুল বিতর্ক।প্রতিবাদে স্বোচ্চার হয়েছে বিরোধীরা ।
রাজ্যে ক্ষমতায় আসার অনেক আগে থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ২১ শে জুলাই কলকাতার ধর্মতলায় শহীদ স্মরণ সভা হয়ে আসছে।বাম সরকারে অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস দল বাংলায় ক্ষমতায় আসে। তার পর থেকে তৃণমূলের ২১ শে জুলাইয়ের শহীদ স্মরণ কর্মসূচী আরও ব্যাপকতা লাভ করে।সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে বাংলার ২৯ আসনে জয়লাভের পর ২১ শে জুলাই কে সামনে রেখেই হতে চলেছে তৃণমূলের প্রথম বড় জনসভা।তাই উন্মাদনার জোয়ারে ভাসছে তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকরা। সভায় রেকর্ড জমায়েত করার জন্যে পূর্ব বর্ধমান সহ রাজ্যের জেলায় জেলায় চলছে জোরদার প্রচার। তা দেখেই যেন অতি উৎসাহিত পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর ব্লকের কৃষি দপ্তর।তারাও তৃণমূলের ২১ শে জুলাইয়ের শহীদ স্মরণ সভার সমর্থনে প্রচারের জন্যে ব্যানার-ফেস্টুন তৈরি করে একেবারে দপ্তরে সামনেই ঝুলিয়ে দিয়েছে।যা দেখে এদিন তাজ্জ্বব বনে যান দপ্তরে কাজ মেটাতে যাওয়া মানুষজন।
সরকারী কৃষি দপ্তরের রাজনৈতিক দলের প্রচারে নামা নিয়ে জামালপুর ব্লকের কৃষি আধিকারিক সঞ্জিবুল ইসলাকে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন,“বিষয়টি কাঙ্খিত নয়। ওইরকম ’ফ্লেক্স’ সরকারী দপ্তরে ঝোলানোটা টিক কাজ হয়নি । আমি জানতাম না। বিষয়টি জানার পরেই আমি ওই ফ্লেক্স দপ্তরের দেওয়াল থেকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।“আর জেলা কৃষি আধিকারিক নকুল চন্দ্র মাইতি কে ওই ফ্লেক্সের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,“ভুল করে ওটা হয়েছে।ওটা নিয়ে ভাবার কিছু নেই বলে জেলা কৃষি আধিকারিক মন্তব্য করেন।“ যদিও জামালপুর ব্লকের তৃণমল বিধায়ক আলক মাঝি দাবি করেন,বিতর্ক তৈরি করতে কেউ চক্রান্ত করে এমন ফ্লেক্স কৃষি দপ্তরের দেওয়ালে ঝুলিয়ে দিয়ে থাকতে পারে ।
তবে কৃষিদপ্তরের কর্তারা এবং তৃণমূল বিধায়ক বিষয়টিকে হালকা ভাবে দেখানোর চেষ্টা করলও ফ্লেক্স কাণ্ডকে হালকা ভাবে নিতে নারাজ বিরোধীরা। জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র বলেন,“বাংলায় প্রশাসন ও তৃণমূল কংগ্রেস পার্টি যে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে সেটা আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। তৃণমূলের ২১ শে জুলাইয়ের রাজনৈতিক কর্মর্সূচি নিয়ে খোদ জামালপুর ব্লক কৃষি দপ্তরের ফ্লেক্স তৈরি করে প্রচারে নামাটাই প্রমাণ করে দিল,আমরা যে অভিযোগ করে আসছি সেটা সত্য।বাংলার প্রশাসন এখন তৃণমূলের দলদাস হয়ে গেছে বলে মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র মন্তব্য করেন।
সিপিএমের জামালপুর ১ এরিয়া কমিটির সম্পাদক সুকুমার মিত্র বলেন,’তৃণমূলের রাজত্বে এই সবই স্বাভাবিক ঘটনা।শুধু ফ্লেক্সেই নয়,বাংলায় যে কোন নির্বাচনেও প্রশাসন ও তৃণমূলের আঁতাত গাড় ভাবে ধরা পড়ে ।’ জেলা কংগ্রেস নেতা গৌরব সমাদ্দার বলেন,’প্রশাসনে তৃণমূলীকর সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে।রাজ্যে যে কোন ভোটে এই সরকারী কর্মচারীরাই তৃণমূলের জয়ের অন্যতম কাণ্ডারী।জামালপুর ব্লক কৃষি দপ্তরের সরকারী কর্মচারীরা তৃণমূলের শহিদ স্মরণ সভার সমর্থনে প্রচার ফ্লেক্স তৈরি করে সেই সত্যেরই জানান দিয়েছেন ।’।