দিব্যেন্দু রায়,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১৯ ডিসেম্বর : ‘অনুব্রত মণ্ডল মার্কা দুষ্কৃতীরা হয় খাঁচায় থাকুক, তা না হলে জঙ্গলে পাঠানো হোক । সভ্য সমাজে তারা থাকবে কেন ? অনুব্রত মার্কা অপদার্থ, দুষ্কৃতীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্নেহধন্য হতে পারে । কিন্তু বাংলার সমাজ জীবনে অপরাধী ছাড়া এদের কোনো ভূমিকা নেই । তাঁকে দিল্লি নিয়ে যাওয়ার জন্য আজ অর্ডার দিয়েছে হাইকোর্ট । যথাযথ করেছে । কোথা থেকে এত ফ্লাট হচ্ছে ? কোথা থেকে এত সম্পত্তি হচ্ছে ? ওগুলো কবে বাজেয়াপ্ত করা হবে ? তারপর শাস্তির ব্যবস্থা করুক । আর দেরি করা ঠিক হচ্ছে না ।’ সোমবার ভাতারে দলীয় কর্মসূচিতে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই ভাষাতেই গরু পাচার মামলায় জেলবন্দি অনুব্রত মণ্ডলকে আক্রমণ করলেন সিপিএমের রাজ্য নেতা সুজন চক্রবর্তী ।
এদিন থেকে ভাতারে সিপিএমের শাখা সংগঠন খেতমজুর ইউনিয়নের দু’দিনের সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে । সম্মেলন উপলক্ষে ভাতার হাউজিং কমপ্লেক্সে সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি প্রকাশ্য জনসভার আয়োজন করা হয় । দলীয় সভায় বক্তব্য রাখার সময় দুর্নীতি ইস্যুতে তৃণমূল সরকারকে কার্যত তুলোধোনা করেন সুজন চক্রবর্তী । তিনি বলেন,’ভাবতেও খারাপ লাগে এতবড় তৃণমূল দল, তার কত সব নেতা । ঘাটে ঘাটে টাকা তুলছে । বিধানসভায় পার্থ চট্টোপাধ্যায় বা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উলটো দিকে বসতাম । বিশ্বাস করুন দু’এক সময় নিজেকে খারাপ লাগে,ছিঃ । বুঝতেই পারলাম না পার্থবাবু, এই ছিল আপনার মনে ? একটা দুটো না,গন্ডায় গন্ডায় বান্ধবী ? অনেক বান্ধবীর মধ্যে একজনের নাম অর্পিতা না কি একটা যেন । তার অনেক ফ্লাট । দুটো ফ্লাটে পঞ্চাশ কোটি,মানুষের রক্ত জল করা টাকা ওখানে যারা ঢুকিয়েছে,ওই টাকা আসবে,কড়ায় গন্ডায় বার করে নিয়ে এসে গরীব মানুষকে ফেরত দেওয়া আমাদের কাজ । যতবড় মাতব্বরিই করো না কেন ছাড় কেউ পাবে না ।’
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য শুনুন
তিনি তৃণমূল কংগ্রেসকে নিশানা করে বলেন,’একটা অসম্ভব অপদার্থের দল, তারা রাজ্য চালাবে ? আর আমাদের বসেবসে সব শুনতে হবে,মানতে হবে? ওদের যতবড় নেতা তত বড় কুকথার অধিকারী৷ তত অসভ্যতা করে । ততবড় দুর্নীতি করে । ততবড় দুষ্কৃতীর মত চলে ।’
পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার সার্ভের কাজে আইসিডিএস বা আশাকর্মীদের ব্যবহারের তীব্র বিরোধিতা করেন সুজন চক্রবর্তী । এই বিষয়ে তিনি বলেন,’আইসিডিএস বা আশাকর্মীদের দিয়ে এই কাজ করানো অনুচিত । পঞ্চায়েত প্রধান,বিডিও, ডিএমরা জেনে বুঝে লিস্ট করলো তাদের কোনো দোষ নেই,আর আশাকর্মী ১২০০ টাকা ১৪০০ টাকা করে পায় তার ঘাড়ের উপর বন্দুক রেখে ফায়ার করছে,এটা করতে দেওয়া যাবে না । আইসিডিএস বা আশাকর্মীদের উপর যদি চাপ সৃষ্টি করে আমাদের তার পাশে দাঁড়াতে হবে ।’ সেই সঙ্গে সিভিক ভলান্টিয়ারদের চাকরি স্থায়ী করার দাবি তোলেন সুজন । তিনি বলেন,’সিভিক পুলিশকে দিয়ে যে কাজ করানো হচ্ছে তা তাদের কাজ নয়,রিস্ক আছে । ওদের চাকরি পাকা নয়। ওদের চাকরি স্থায়ী করা হোক ।’
পুলিশকে তুলে আছাড় মারা নিয়ে রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্নাকেও এক হাত নেন সুজন চক্রবর্তী । তিনি বলেন,’একজন মন্ত্রী কাল পুলিশকে বলেছে তুলে আছাড় মারবো,বেচারাম মান্না৷ পুলিশ মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এই বোধ শক্তিও তাদের নেই,পুলিশকে আছাড় মারা মানে পুলিশ মন্ত্রীকেও আছাড় মারা হয় । কেন বশংগত হয়ে পুলিশ চলছে না ? কেন চাকর বাকরের মত পুলিশ চলবে না ? কেন বিডিও আর ডিএমরা কথায় কথায় উঠবস করবে না ? একটু এদিক ওদিক হলে ওরা সহ্য করতে পারছে না ।’
ভাতার-১ নম্বর খেতমজুর ইউনিয়নের উদ্দোগ্যে সোমবার থেকে দু’দিনের সম্মেলনটির আয়োজন করা হয়েছে । উদ্বোধনীর দিনে উপস্থিত ছিলেন সুজন চক্রবর্তী, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক অমিয় পাত্র,দলের পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক গনেশ চৌধুরী প্রমুখ ।।