এইদিন ওয়েবডেস্ক,মালদা, ৩০ মে : একই ঘর থেকে বউদি ও দেওরের মৃতদেহ উদ্ধার করল পুলিশ । মালদা জেলার রতুয়া-১ ব্লকের দেবীপুর অঞ্চলের মাকাইয়া গ্রামের এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় । পুলিশ জানিয়েছে মৃতদের নাম মিনু ঘোষ (২০) ও শিবশংকর ঘোষ । রবিবার মিনুদেবীর শোবার ঘর থেকে তাঁর গলার নলি কাটা রক্তাক্ত দেহটি উদ্ধার করে পুলিশ । ওই ঘরের চালের কাঠামো থেকে তাঁর দেওর শিবশংকরের দেহটি ঝুলতে দেখা যায় । পুলিশ ঘর থেকে একটি রক্ত মাখা ধারাল ব্লেড উদ্ধার করেছে । প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, বধুর গলার নলি ব্লেড দিয়ে কাটার পর নিজের গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন তাঁর দেওর । তবে ঠিক কি কারনে বউদিকে খুন করার পর ওই যুবক আত্মঘাতী হলেন তা নিয়ে ধন্দ্বে পুলিশ । ঘটনার কারন জানতে পুলিশ মৃত বধুর স্বামী শুভঙ্কর ঘোষকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ।
নিহত বধূ মিনু ঘোষের বাপের বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুর-২ ব্লকের দৌলতনগর অঞ্চলের ফতেপুর সংলগ্ন পেমাই গ্রামে ৷ বছর তিনেক আগে মাকাইয়া গ্রামের যুবক পেশায় জনমজুর শুভঙ্কর ঘোষের সঙ্গে তাঁর দেখাশোনা করে বিয়ে হয় ৷ তাদের দু’বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে ৷
স্থানীয় ও পরিবার সুত্রে জানা গেছে, এদিন দুপুরে শুভঙ্কর অন্যের জমিতে কাজে গিয়েছিলেন ৷ এদিকে খাওয়া দাওয়ার পর মেয়েকে নিয়ে নিজের ঘরে ঘুমতে চলে যান মিনুদেবী । কিছুক্ষণ পর মিনুদেবী ও তাঁর দেওর শিবশংকরের মৃতদেহ ওই ঘরে দেখতে পায় পরিবারের অনান্য সদস্যরা । তখন তারা চিৎকার করে উঠলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসে । এরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে রতুয়া থানার পুলিশ । পুলিশ গিয়ে দেখে ঘরের মেঝেতে পড়ে রয়েছে বধুর গলার নলিকাটা দেহটি । ঠিক তার পাশেই তাঁর দেওরের গলায় ফাঁস দেওয়া দেহটি ঝুলছিল । ঘরের মধ্যে পড়েছিল একটি রক্তমাখা ধারাল ব্লেড । এরপর পুলিশ দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা সদর হাসপাতালে পাঠায় । পাশাপাশি উদ্ধার হওয়া ব্লেডটি বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ ।
মৃতা বধুর মামি রিনা ঘোষ বলেন, ‘দাবিমত সব পন দিয়েই মেয়েটার বিয়ে দিয়েছিলাম ৷ বিয়ের কিছু দিন পরেই মিনুর শ্বশুর-শাশুড়ি তাদের আলাদা করে দেয় ৷ সেই কারনে আমার ননদ মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে চলে আসে ৷ এক বছর বাবার বাড়িতেই ছিল মিনু ৷ পরে শুভঙ্কর বাড়ির লোকজনকে নিয়ে গিয়ে মিনুকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় । সেই সময় থানাতেই বিচার হয়েছিল ৷ আজ শুনলাম আমার ভাগ্নির গলায় ব্লেড চালিয়ে দিয়ে খুন করেছে ওর দেওর ৷ দেওরের সঙ্গে ওর কোনও সম্পর্ক ছিল না ৷ এমনকি মিনুদের পারিবারিক ঝামেলাও ছিল না ৷ তাসত্ত্বেও আমাদের মেয়েটাকে কেন খুন করল বুঝতে পারছি না ।’ পাশাপাশি তাঁর অভিযোগ, ‘শুভঙ্কর খুব মদ খায় ৷ মদ খেয়ে মাঝেমধ্যেই স্ত্রীকে মারধর করত ৷ এই ঘটনার সঙ্গে সে জড়িয়ে রয়েছে কিনা তা অবশ্য বলতে পারব না ৷’
মৃত বধুর মা রেখা ঘোষের অভিযোগ, ‘জামাই আমার মেয়েকে দেখতে পারত না । বিয়ের পর থেকেই অশান্তি করত । আজ দুপুরে আমার মেয়ে আমাকে ফোন করে বলে আমাকে গলা কেটে মেরে ফেলে দেবে এরা । শেষ পর্যন্ত মেয়ের আশঙ্কাই সত্যি হল । শিবশংকর কিভাবে মারা গেছে তা আমার জানা নেই । আমি চাই আমার মেয়ের দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।’
মৃতা বধুর সম্পর্কীয় দাদা মুকেশ ঘোষ বলেন, ‘ফোনে শুনলাম মিনুকে নাকি ওর দেওর খুন করেছে৷ খবরটা পেয়ে মাকাইয়া গ্রামের এক আত্মীয়কে ফোন করে ঘটনা সম্পর্কে নিশ্চিত হই ৷ পরে শুভঙ্করও ফোনে গোটা ঘটনা জানায় ৷ তারপর আমরা মাকাইয়া গ্রামে যাই ৷ কিন্তু মিনুর শ্বশুরবাড়ির লোকজন কেউ মুখ খোলেনি ৷ আমাদের অনুমান এই ঘটনার সঙ্গে শুভঙ্কর, তার বাবা-মা এবং তার ছোট ভাইও জড়িত ৷ এমনও হতে পারে, মিনুকে খুন করার পর সবার নজর অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে ওরাই শিবশংকরকে খুন করে ঝুলিয়ে দিয়েছে ৷’
রতুয়া থানার আইসি সুবীর কর্মকার জানিয়েছেন, এনিয়ে এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি ৷ অভিযোগ দায়ের হলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷।