দিব্যেন্দু রায়,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),২৫ এপ্রিল : পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটে অজয় নদ থেকে উদ্ধার হল বিষ্ণুর বামন বা ত্রিবিক্রম অবতারের শিলামূর্তি । সোমবার সকালে মঙ্গলকোট থানার খেরুয়াগ্রামের পাশে অজয় নদে মাছ ধরার সময় জেলেদের জালের সঙ্গে ওই শিলামূর্তিটি উঠে আসে । ওই মূর্তির সঙ্গে আরও একটি শিলামূর্তি উঠে আসে বলে জানা গেছে । তবে সেটি ছিল ভাঙা অবস্থায় । বর্তমানে গ্রামের একটি মন্দিরে রাখা হয়েছে মূর্তি দুটি । মঙ্গলকোটের বিডিও জগদীশচন্দ্র বাড়ুই বলেন,’জেলা শাসককে বিষয়টা জানানো হয়েছে । আর্কিওলজিকাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে ।’
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে,এদিন সকালে অজয় নদে জাল ফেলে মাছ ধরছিলেন খেরুয়া গ্রামের কয়েকজন জেলে । তাঁদের মধ্যে সন্ন্যাসী ধীবর নামে এক জেলের জালে ওঠে ওই দুটি বিষ্ণু মূর্তি । তার মধ্যে ফুট দুয়েকের বড় বিষ্ণু মূর্তিটি চতুর্ভূজ । চার হাতে রয়েছে শঙ্খ, চক্র, গদা ও পদ্ম । নীচের দিকে দুই পাশে আছেন লক্ষ্মী ও সরস্বতী । দুই দেবীর পাশেই আছেন তাঁদের দুজন পরিচারিকা ।
ইতিহাস গবেষক স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন ঠাকুর বলেন,’মূর্তি দুটিই বিষ্ণুর বামন বা ত্রিবিক্রম অবতারের শিলামূর্তি । সেন যুগে তৈরি বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান । কিন্তু একই জায়গায় এত মূর্তি কোথা থেকে এল সেটাই প্রশ্ন ।’
প্রসঙ্গত,পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রাচীন জনপদগুলির মধ্যে অন্যতম মঙ্গলকোট । এলাকা থেকে উদ্ধার হয়েছে বহু প্রাচীন নিদর্শন । অজয় নদের জল থেকে অথবা এলাকার বিভিন্ন জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ির সময় আজও বেরিয়ে আসে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি । ২০১৬ সালে খেরুয়া গ্রামের পাশে অজয় নদ থেকে দুটি বিষ্ণুমূর্তি উদ্ধার হয়েছিল । তার আগেই বেশ কিছু মূর্তি উদ্ধার হয়েছে । ফের একই জায়গা থেকে উদ্ধার হল পাথরের তৈরি দুটি বিষ্ণু মূর্তি ।
কিন্তু একের পর এক প্রাচীন বিষ্ণুমূর্তি উদ্ধার হওয়ায় এলাকাবাসীর মনে বিভিন্ন প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে । স্থানীয় বাসিন্দা দেবু ধারার প্রশ্ন ‘এত মূর্তি আসছে কোথা থেকে ? তাহলে কি প্রাচীন কালে এলাকাবাসীরা বিষ্ণুর উপাসক ছিলেন ? তাহলে মন্দিরও থাকার কথা । যদি তাই হয়,তাহলে সেই সমস্ত মন্দিরের কি হল ? একমাত্র প্রশাসনিকভাবে গবেষণা ছাড়া এসব প্রশ্নের উত্তর জানা সম্ভব নয় ।’ তিনি জানিয়েছেন,বিগত কয়েক বছরে ছোট-বড় বা ভাঙা মিলিয়ে মোট ৬ টি মূর্তি উদ্ধার হয়েছে এলাকা থেকে । মূর্তিগুলির প্রাচীন ইতিহাস উদ্ধারের জন্য অবিলম্বে প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণা শুরু করার দাবি তুলেছেন দেবু ধারাসহ এলাকার বাসিন্দারা ।।