এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৪ আগস্ট : মহিলা বন আধিকারিককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়ে নিজেই মন্ত্রীত্ব খোয়ালেন রাজ্যের কারামন্ত্রী তথা রামনগরের তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরি । তৃণমূল নেতা সাংসদ সুব্রত বক্সী আজ রবিবার দুপুরে ফোন করে অখিল গিরিকে পদত্যাগ ও নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা যায় ৷ এরপর অখিল গিরি ঘোষণা করেন যে সোমবার তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেবেন । তবে তিনি জানিয়েছেন যে তিনি ক্ষমা চাইবেন না । তিনি সাফ বলেছেন,’ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। অসহায় মানুষগুলোর যাতে কোনো প্রকার বঞ্চিত না হয় তাই ওদের পাশে রয়েছি ।’
গোটা ঘটনার সূত্রপাত পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুরে দোকান বসানোকে কেন্দ্র করে। দুর্যোগের ফলে সমুদ্রের পাড়ে থাকা প্রায় বাইশটি দোকান ভেঙে যায়। সেই সমস্ত দোকানগুলিকে কয়েক মিটার পিছিয়ে একটি জায়গায় বসার জন্য বলেন এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী অখিল গিরি। তবে তিনি যে জায়গায় দোকান বসার জন্য বলেন সেটি বন দপ্তরের জায়গা। আর তাতেই বিপত্তি। বন দপ্তরের তরফ থেকে সমস্ত দোকান উঠিয়ে দেওয়া হয়। একপ্রকার অবৈধভাবে মন্ত্রী অখিলগিরি যে দোকান বসার অনুমতি দিয়েছিলেন তার প্রতিবাদ করে বন দপ্তর। শনিবার সকালে যখন তাজপুরের ওই এলাকায় মন্ত্রী অখিল গিরি এবং কাঁথির রেঞ্জ অফিসার মনীষা সাউ গিয়ে পৌঁছান তখনই কার্যত মন্ত্রী বনাম রেঞ্জ অফিসারের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়। সেখানেই একের পর এক বিরূপ মন্তব্য করেন মন্ত্রী। বন আধিকারিককে ’জানোয়ার -বেয়াদপ’ বলে কটুক্তি এবং এমনকি তাঁকে “ডাং“ নিয়ে পেটানোর হুঁশিয়ারি পর্যন্ত দেন রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি । মন্ত্রী ওই মহিলা অফিসারকে বলেন,’আপনি সবাইকে নিয়ে চলার চেষ্টা করুন না হলে আপনার আয়ু ৭-৮ দিন। বন দপ্তরে কত দুর্নীতি এবং বিট অফিসারের বিরুদ্ধে কি আছে আমি কিন্তু সব জানি ফাঁস করে দেব।’ পাশাপাশি তিনি আরও বলেন,’এই স্পট আমরা নিলাম। এরপর যদি আসেন আপনি ফিরে যেতে পারবেন না। আপনি সরকারি কর্মচারী মাথা নিচু করে কথা বলবেন। এরকম বেয়াদব, জানোয়ার রেঞ্জার আগে কখনো আসেনি । ভদ্রভাবে হবেনা ডাং নিয়ে যখন পেটাবো বুঝবেন ।’ একুশের মঞ্চ থেকেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিবেকবান হওয়ার কথা বলেছিলেন । আর সেই দলেরই মন্ত্রীর মুখে এহেন কুকথায় নিন্দার ঝড় ওঠে সব মহলে ।
বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল মন্ত্রীর এই প্রকার মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে । প্রতিক্রিয়া তিনি বলেছেন,’ইনি সেই তৃণমূল বিধায়ক তথা কারামন্ত্রী অখিল গিরি যিনি দেশের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর রূপ নিয়ে ‘অপমান জনক’ মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু তার কোনো শাস্তি হয়নি । ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে একজন মহিলা বনদফতরের অফিসারকে হুমকি দিচ্ছেন।একজন মহিলা অফিসারকে ‘জানোয়ার’এবং ‘বেয়াদপ’ বলে আক্রমন করছে । মহিলা অফিসারকে হুমকি দিয়ে বলছে আপনি রাতে বাড়ি ফিরতে পারবেন না । ছিঃ এটাই তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রিদের সংস্কৃতি।মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজত্বে বাংলার মহিলারা আজ অসুরক্ষিত। আমি কুর্নিশ জানাই,এই মহিলা অফিসারকে যিনি তৃণমূল বিধায়কের চোখে চোখ রেখে প্রতিবাদ করেছে ।’।