এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৭ মার্চ : তৃণমূল জামানায় বাড়ছে ঋণের বোঝা! তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাজ্যে ঋণের পরিমাণ ছিল প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা। বর্তমানে রাজ্য সরকারের ঋণের বোঝা বেড়ে প্রায় ৭ লক্ষ কোটি টাকা হতে চলেছে। চলতি বছরে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য যে বাজেট পেশ করেছেন তাতে রাজ্যের মোট ঋণের অঙ্ক বলা হয়েছে, ৬ লক্ষ ৯৩ হাজার কোটি টাকা। এক বছর আগে, অর্থাৎ ২০২২-২৩ অর্থ বছরে যার পরিমাণ ছিল ৫ লক্ষ ৭৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি বছরে হু হু করে বেড়ে চলেছে রাজ্যের ঋণের বোঝা । অথচ গত বছর রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী ব্যাখ্যা করেন যে করোনা মহামারীর পর দেশের অন্যান্য রাজ্যের পাশাপাশি বাংলার অর্থনীতিও ধাক্কা লাগা সত্ত্বেও এরাজ্যের ঋণ এবং জিডিপির অনুপাত কমে গেছে । তার দাবি যে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাজ্যে ঋণ ও জিডিপির অনুপাত যেখানে ৪০ শতাংশ ছিল, সেখানে বর্তমানে সেই অনুপাত কমে দাঁড়িয়েছে ৩৩ শতাংশে । কিন্তু এনিয়ে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে নিশানা করে “পরিসংখ্যান নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতারণা এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের ফাঁদ” শীর্ষক একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন নিজের এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।
শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী রাজ্যগুলির ঋণ নেওয়ার সীমা নির্ধারিত হয় রাজ্যের আভ্যন্তরীণ উৎপাদন অথবা গ্রস স্টেট ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট (GSDP) এর মাধ্যমে। এই সুযোগকে অসৎ ভাবে কাজে লাগিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মত ঋণের ওপর নির্ভরশীল কিছু রাজ্য জিএসডপি-এর পরিসংখ্যান ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বাড়িয়ে দেখিয়ে বাজার থেকে বেশি পরিমাণ ঋণ নিয়েই চলেছে আর ঋণের পাঁকে আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছে। কিন্তু পরিসংখ্যান নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই কারসাজি ধরা পরে গেছে ভারত সরকারের পরিসংখ্যান ও পরিকল্পনা রুপায়ন মন্ত্রকের সম্প্রতি রাজ্যওয়ারী জিএসডপি-এর পরিসংখ্যানের প্রকাশিত হওয়ার পর।’
তিনি লিখেছেন,’২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অন্তর্বর্তী বাজেটে দাবী করা হয়েছিল, যখন কোভিডের কারণে সারা দেশের অর্থনীতির বৃদ্ধির হার কমে গিয়ে ঋণাত্মক হয়ে গেছে সেখানে নাকি পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি ১.২০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু গত ১৫ই মার্চ ২০২৪-এ ভারত সরকারের পরিসংখ্যান মন্ত্রকের প্রকাশিত রাজ্যওয়ারী জিএসডপি-এর পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে মহামারীর বছরে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি আসলে মাইনাস ৭.৫৮ শতাংশ হারে ভয়াবহ সঙ্কোচনের মুখোমুখি হয়েছিল।’
বিরোধী দলনেতা মন্তব্য করেছেন,’আদতে পরিসংখ্যান নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই কারসাজি নতুন কিছু নয়, অথবা শুধুমাত্র ২০২০-২০২১ আর্থিক বছরেই এমন দাবী করা হয়েছে তা নয়। কোরোনা মহামারীর আগের বছরে, অর্থাৎ ২০১৯-২০ সালের বাজেট নথিতে দাবি করা হয়েছিল যে রাজ্যের জিএসডপি ১০.৪২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, অথচ ভারত সরকার তথ্য প্রকাশ করেছে যে বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ৩.১০ শতাংশ । অর্থাৎ, রাজ্যের জিএসডপি বাড়িয়ে দেখানো এবং সেই বর্ধিত জিএসডপি-এর ভিত্তিতে বাজার থেকে ঋণ নিয়ে চলার এই ভয়ঙ্কর প্রবণতা পশ্চিমবঙ্গকে ক্রমশ ঋণের পাঁকে ডুবিয়ে দিচ্ছে।’।