এইদিন ওয়েবডেস্ক,বাঁকুড়া,১২ জুলাই : বাঁকুড়া জেলার খাতড়া থানার রানিবাঁধে দেদুয়া গ্রামের বাসিন্দা বঙ্কু বিহারী মাহাত নামে এক ৬৯ বর্ষীয় বৃদ্ধ বিজেপি কর্মীকে গত মঙ্গলবার রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে । যদিও আজ শুক্রবার আম্বানির ছেলের বিয়ে উপলক্ষে দুদিনের সফরে যাওয়ার পথে দমদম বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সাংবাদিকের সামনে দাবি করেন যে রানিবাঁধের খুনের ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই । একই দাবি করেছে বাঁকুড়া জেলা পুলিশও । প্রাথমিক তদন্তের পর বৃহস্পতিবার বাঁকুড়া জেলা পুলিশ এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছে যে বঙ্কু মাহাতোর মৃত্যুর সঙ্গে রাজনীতির কোনো যোগ নেই, জমিতে গাছ কাটা নিয়ে বিবাদের জেরেই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী এবং পুলিশের এই দাবি মানতে নারাজ নিহতের পরিবার । আজ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী খাতড়া থানার দেদুয়া গ্রামে গেলে নিহতের ছেলে ক্যামেরার সামনে স্পষ্ট বলেছেন যে তার বাবা সেদিন রাতে যখন ভাত খেতে বসেছিলেন সেই সময় ৬ জন তাকে তুলে নিয়ে যায় এবং বাড়ির অদূরেই বাবাকে পিটিয়ে খুন করে । তারা আরও দাবি করেছেন যে তাদের বাবা ২০১৮ সাল থেকে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত এবং সেই আক্রোশেই তৃণমূলের লোকেরা তাদের বাবাকে খুন করেছে ।
এদিকে খাতড়ার দলীয় কর্মীর খুনের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীর এই দাবির পর শুভেন্দু অধিকারী তাকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন । তিনি বলেছেন, ‘আদিবাসী, তপশিলি জাতির মানুষদের খুন করা হচ্ছে মমতা ব্যানার্জির কাজ ।’ পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয় তিনি বলেন,’মমতা ব্যানার্জিকে লাশের রাজনীতি করতে হয় । আমাদের লাশের রাজনীতি করতে হয় না । অপরাধ একটাই যে বঙ্কু বিহারী মাহাতো ২০১৮ সাল থেকে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত । অপরাধ একটাই এবারের নির্বাচনও এই বুথ বিজেপিকে এগিয়ে রেখেছে৷ আমাদের প্রার্থী ডঃ সুভাষ সরকারকে এগিয়ে রেখেছে । এখানকার অঞ্চলের তৃণমূলের সভাপতি তথা উপপ্রধান উত্তম মাহাতো ২০১৮ সালে হেরে যাওয়ার আক্রোশে এই খুন করেছে । পরিবার সাংবাদিকদের সামনে অন ক্যামেরা বলেছে, খুনিরা ৬ জন ছিল । দুজন গ্রেপ্তার হয়েছে । বলেছে আসল আসামী ধরা পড়েনি ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’আজ আসামি গ্রেফতার হয়েছে অথচ কেস ডায়েরী পর্যন্ত আদালতে যায়নি । অথচ রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী ইনভেস্টিগেশন কমপ্লিট করে দিয়েছেন । তার লোকেরা সভায় গিয়ে আদানি আর আম্বানির কথা বলেন । আর আজ আম্বানির ছেলের বিয়েতে ভোজ খেতে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী । আম্বানিদের বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে মুখ্যমন্ত্রী দমদম বিমানবন্দরে সংবাদমাধ্যমের সামনে এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বলেছেন, এটা পারিবারিক বিরোধ থেকে খুন হয়েছে , বিজেপি এটা নিয়ে রাজনীতি করছে । আজ আমরা এই গ্রামের দাঁড়িয়ে আছি । আমরা নিহতের দুই ছেলে জনার্দন ও সনাতনকে এসে শিখিয়ে দিইনি । তার স্ত্রীকে আগাম কিছু বলিনি । সংবাদ মাধ্যমের সামনে প্রশ্ন করেছি তাদের । এখানকার গ্রামের লোকরা খুব সহজ সরল হয় । এদের দারিদ্র আছে ঠিকই কিন্তু এরা প্যাঁচ বোঝেনা । এরা শয়তানি করতে জানেন না । এরা স্পষ্টভাবে সংবাদমাধ্যমের সামনে আমাদের বলল যে অপরাধ একটাই বাবা ২০১৮ সাল থেকে বিজেপি করেন । অপরাধ একটাই এবারের ভোটে এই বুথ থেকে বিজেপির এগিয়ে আছে । আর স্থানীয় পুলিশ আদালতে কেস ডাইরি, চার্জশিট আদালতের জমা দেওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ মন্ত্রী যদি তদন্তে কনক্লুশন টেনে দেন তাহলে পশ্চিমবঙ্গের তদন্ত হবে কি করে ? এই কারণে হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের উপর আস্থা রাখতে পারছে না । তারা প্রতিটি মামলায় সেই কারণে বলছে হয় ভুয়ো এফ আই আর তা না হলে মামলা সিবিআই এন আইয়ের হাতে তুলে দিচ্ছে । পুলিশ মন্ত্রী ৪৮ ঘন্টাও ধৈর্য রাখতে পারলেন না । প্রকাশ্যে তিনি নিজের জাজমেন্ট, ইনভেস্টিগেশন, পানিশমেন্ট, কনক্লুশন টেনে দিয়ে বললেন যে পারিবারিক বিরোধ এর সঙ্গে কোন রাজনীতি নেই । এত বড় মিথ্যাবাদী, অবশ্য মিথ্যা কথা তো উনি সকাল আর বিকালে বলেন।’
নিহত বঙ্কু বিহারী মাহাতর ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন,’প্রায় ৭০ বছর বয়সের এ প্রবীণ ব্যক্তি কি খুনি না গুন্ডা ছিলেন ? না ভোট লুট করতে গিয়েছিলেন ? ওনার অপরাধ একটাই যে এই বুথ থেকে বিজেপিকে লিড দিয়েছে ।’ তিনি বলেন, অজিত প্রসাদ মাহাতো পুরুলিয়াতে বড় বড় কথা বলেন,এটা নিয়ে একটা মিছিল হোক । হলুদ পতাকা নিয়ে একটা মিছিল করুন না ।’ শুভেন্দু বলেন,’আমরা সকলে পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিতে আজ এখানে এসেছি । পরিবারের যাতে মোটা ভাত, মোটা কাপড় জোটে তার জন্য বাঁকুড়া জেলার ৫-৬ জন বিজেপির এমএলএ মিলে গোটা বিজেপি পরিবার এখানে এসেছি ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, নিহতদের পরিবারকে আমরা সুরক্ষা দেব । বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হবে । কারণ মমতা ব্যানার্জি পুলিশ যারা বালি চুরিতে অভ্যস্ত আর তৃণমূলের হয়ে ভোট লুট করতে অভ্যস্ত তারা নিহতের পরিবারকে ভয় দেখাতে পারে । এমনিতেই মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি করা হয়েছে । বিকেল তিনটাতে ময়নাতদন্ত শেষ হলেও মৃতদেহ রাত্রি আটটার আগে ছাড়া হয়নি । যাতে গ্রামের সাধারণ মানুষ বেরিয়ে প্রতিবাদ করতে না পারেন,বিক্ষোভ না করতে পারেন । আমরা নিহতের পরিবারকে সুরক্ষা দিতে চাই । সেই কারণে বাড়ির প্রবেশ এবং প্রস্থান পথে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হবে । মন্ডলের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে প্রতিদিন পরিবারের খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে গেলাম । মহিলা মোর্চার দিদি ও বোনেরা তাদের মায়ের পাশে থাকবেন ।’
পাশাপাশি তিনি বলেন,’সাত দিনের মধ্যে যদি উত্তম মাহাতো ৩০২ ধারায় গ্রেফতার না হয় তাহলে মনে করব পুলিশের উপর আস্থা রাখা উচিত নয় । সেক্ষেত্রে বিকল্প রাস্তা এই মামলা অন্য কোন কেন্দ্রীয় সংস্থাকে হস্তান্তর করার জন্য আমরা আদালতের কাছে আবেদন জানাবো ।’ তিনি আরও বলেন,’ষড়যন্ত্রকারী কারা? শুধু ছজন খুন করেনি । কার নির্দেশে তারা এসেছে ? অরূপ চক্রবর্তী সঙ্গে উত্তম মাহাতো কথা বলে এসেছে কিনা তা তা জানতে ওই দুজনার মোবাইল খতিয়ে দেখা উচিত । হয়তো উত্তম জিজ্ঞেস করেছিল যে খুন করলে গ্রেপ্তার হবো না তো? অরূপ চক্রবর্তী তখন তাকে আশ্বাস দিয়েছিল আমি দেখে নেব । পুলিশ তো আমার পকেটে, এসফি তো আমার ট্যাকে বাঁধা আছে।’ এদের নিহতের পরিবারের হাতে দলীয়ভাবে কিছু আর্থিক সাহায্য তুলে দেন শুভেন্দু অধিকারী ।।