এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৭ আগস্ট : বাংলাদেশ জুড়ে ব্যাপক নাশকতা চালাচ্ছে জামাত ইসলামীর জঙ্গিরা । শেখ হাসিনার বাসভবন, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর স্মরণে ইন্দিরা ভবনে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে তারা । অসংখ্য হিন্দু মন্দিরে ভাঙচুর ও অগ্রি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে । জামাত জঙ্গিদের নাশকতার হাত থেকে রেহাই পেলেন না বাংলাদেশকে জাতীয় সংগীত উপহার দেওয়া কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও । বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় কবিগুরুর মূর্তি এবং নামাঙ্কিত প্লেট গুলিকে নষ্ট করে দিয়েছে জঙ্গিরা । এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া নিন্দা করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । সল্টলেকের রাজ্য বিজেপি কার্যালয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কবিগুরুর মূর্তি ভাঙায় যুক্তদের ‘অর্বাচীন,বর্বর, উগ্র মৌলবাদী’ বলে নিন্দা করেন তিনি । পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বার্তা দেন, ‘৩১ সালের মধ্যে লরাজ্যকে আর একটা সুরাবর্দির হাতে যাওয়া থেকে আটকাতে বাংলাদেশের ঘটনাক্রম দেখে সতর্ক হন ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে পূর্ববঙ্গ বা আজকের বাংলাদেশে কবিগুরুর মূর্তিগুলোকে গত আড়াই দিন ধরে ভাঙ্গা হচ্ছে । এই অর্বাচীন, বর্বর, উগ্র মৌলবাদ এর সমর্থক এবং যাদের নত্তসত্ত্ব জ্ঞান নাই, এই সমস্ত পশুবৃত্তির সম আচরণকারী একদল মানুষ আজকেও বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তিগুলোকে বা তার নাম যেখানে খোদাই করা আছে অন্যান্য মূর্তিগুলোর সাথেও সেগুলোকে ভাঙছে এবং বিকৃত করছে। এই যন্ত্রণা পরিতাপের বিষয় ।’
রাজ্যের রবীন্দ্রপ্রেমী বুদ্ধিজীবীদের উদ্দেশ্যে তিনি কটাক্ষ করেন,’আমরা অপেক্ষা করে আছি তথাকথিত রবীন্দ্রপ্রেমী সেজে যারা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উচ্ছিষ্ট খেয়ে বুদ্ধিজীবী নাম পরিবর্তন করে এখন ভাতাজীবী হয়েছেন, কবে তারা রবীন্দ্রভারতী থেকে একটি মোমবাতি নিয়ে পদযাত্রা শুরু করবেন । আর কবে আমরা আহ্বান পাব অন্তত সেই পদযাত্রায় পিছনে হাঁটার জন্য । সেই অপেক্ষায় আছি ।’
তিনি বলেন,’আমাদের দেশের সাথে সাথে কবিগুরুর তৈরি করে দেওয়া সংগীত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসাবে সমাদৃত হয় । আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে । আমরা নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান….ভিন্ন ধরনের ধর্মে বিশ্বাস করলেও আমাদের অবিভক্ত বঙ্গের অন্তত কিছুটা মেলবন্ধন ছিল। তার মধ্যেও কবিগুরুর সম্ভারটাও অন্যতম। সেই সম্ভার আজকে আক্রান্ত হয়েছে। আমরা দেখেছি জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিও ভেঙে ফেলা হয়েছে । সেখানে সবকিছু নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হচ্ছে ।’ তিনি বাংলাদেশের জিহাদিদের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন,’ঠিক আছে, শেষ তো আছেই । আগের ইতিহাস ও আমরা দেখেছি এবং নিউটন তো বলে গেছেন প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে । পৃথিবীটা গোল, তাই সেটাও হবে ।’ কিন্তু আজকে বাইশে শ্রাবণ অবিভক্ত বাংলায় কবিগুরুর মূর্তিকে ভেঙে ফেলা হচ্ছে,বিকৃত করা হচ্ছে, তাকে অসম্মান করা হচ্ছে, আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি ।
শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন যে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত সাহার কাছে আবেদন জানিয়েছেন যাতে বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির ও হিন্দুদের রক্ষা করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয় । স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে আশ্বস্ত করেছেন যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে সর্ব দলীয় বৈঠক করে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে । তিনি বলেন,’আমি আর একটা বিষয় উত্থাপন করেছি, সিএএ নিয়ে যারা বিরোধীতা করেছিলেন, আজ সিএএ কত প্রাসঙ্গিক সেটা তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ।’
শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে সপরিবারে খুন করার সময়েও পাকিস্তানের হাত ছিল । আজকে যে ছবিগুলো আসছে, আমি হাজার হাজার ফোন পাচ্ছি, বেশকিছুর উত্তরও দিচ্ছি, তাতে এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল স্বৈরতন্ত্রকে সরানো এবং গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করা,কিন্তু এখন ওরা ওদের আন্দোলনের জায়গায় নেই । যা দেখছি তা হল মন্দির ভাঙো, হিন্দু ভাগাও আর ভারত বিদ্বেষী এই তিনটি মন্ত্রে এই আন্দোলন হচ্ছে । স্বাভাবিকভাবে পাকিস্তান প্রেমীরা একটু উল্লসিত হবে ।’
তিনি মুখ্যমন্ত্রী ও কলকাতা পুলিশের সমালোচনা করে বলেন,’ভারত বিরোধী বা প্রধানমন্ত্রীর বিরোধী স্লোগান দেওয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশের ডেপুটি হাই কমিশনারের অনুমতি নিয়ে আমি যখন কুড়ি জন বিজেপি বিধায়ককে নিয়ে যখন যাচ্ছিলাম তখন আমাকে মমতা ব্যানার্জির পুলিশ বাধা দেয় । অথচ গত পরশুদিন নিউমার্কেটে এলাকায় চিকিৎসার জন্য ভারতে আসা কিছু বাংলাদেশী যখন বিজয় মিছিল করে, উল্লাস প্রকাশ করে তখন মমতা ব্যানার্জির পুলিশ তথা কলকাতা পুলিশ তাদেরকে বাধা দেয়নি । উল্টে তারা যাতে কলকাতার রাজপথে আনন্দ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে পারে সেই সুযোগ করে দেয় ।’ শুভেন্দু অধিকারীর তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী সমর সড়কদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘পশ্চিমবাংলায় যারা রাষ্ট্রবাদের পক্ষে, ভারতীয় সংস্কৃতির পক্ষে, যারা ১৫ ই আগস্ট জাতীয় পতাকা তোলা এবং বন্দেমাতরম গাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন অথচ তৃণমূলকে ভোট দেন, তারা দয়া করে একটু সজাগ হন । আমরা গণভবনের যে দৃশ্য ভিডিওতে দেখেছি, লুটেরাদের দৃশ্য । এই দৃশ্য ২০২১ সালের নির্বাচনে বিজেপি পরাজিত হওয়ার পরে এই মডেল আমরা পশ্চিমবঙ্গে দেখেছিলাম । তাই পশ্চিমবঙ্গের যারা এখনো ভাবছেন যে আমরা ভাতা তো পাই আমার কি, তাদের বলব ৩১ সালের জন্য প্রস্তুত হন । যদি আপনারা এখনো সজাগ না হোন তাহলে আর একটা সুরাবর্দির হাতে এই বাংলাও যাবে ।’।