এইদিন ওয়েবডেস্ক,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),৩০ এপ্রিল : জমির ধান কাটা নিয়ে বিবাদের জেরে বধূ ও তার মেয়েকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ আত্মীয় পরিবারের বিরুদ্ধে । আজ মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোট থানার ইট্ট্যা গ্রামে। পুলিশ মৃতদের ইট্ট্যা গ্রামের বাসিন্দা ভবানী গড়াই (৫০) ও ফুলকুমারী গড়াই (২৮) হিসাবে চিহ্নিত করেছে । মৃতদের মধ্যে ভবানীদেবীর বড় মেয়ে ফুলকুমারী । তাদের পিটিয়ে মারার অভিযোগে মৃতদের আত্মীয়া মুনমুন গড়াই (৪২) এবং তার দুই মেয়ে লাবনী ও কল্যানীকে আটক করেছে পুলিশ । পলাতক আর এক অভিযুক্ত মুনমুনদেবীর স্বামী গৌড়চন্দ্র গড়াই। পুলিশ তাকে খুঁজছে ।
স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে,ভবানীদেবীর স্বামী এককড়ি গড়াইয়ের নিজের ভাইপো অভিযুক্ত গৌড়চন্দ্র গড়াই । গৌড়চন্দ্রের বাবা লক্ষণ গড়াই সুদের কারবার করতেন । বছর তিনেক আগে লক্ষণ গড়াই মারা যাওয়ার পর সেই কারবার সামলাচ্ছেন গৌড়চন্দ্র । তার কাছ থেকে মাসিক দুই শতাংশ হারে কয়েক দফায় টাকা ধার করেন এককড়ি । কিন্তু হাটে শব্জি বিক্রির ব্যবসা করা এককড়ি কয়েক দফায় ধরে সুদ বা আসল কিছুই শোধ করছিলেন না বলে অভিযোগ ।গৌড়চন্দ্রের স্ত্রী মুনমুনদেবীর দাবি,’দীর্ঘ চারবছর ধরে টাকা দিচ্ছিল না। এদিকে সুদ আসল মিলে প্রায় চার লক্ষ টাকা আমরা পাওনা হই ।’
জানা গেছে,এককড়িদের বিঘা চারেক জমি আছে । দেনার টাকা যাতে কিছুটা পরিশোধ হয়, সেই কারনে তার মধ্যে দুই বিঘা জমিতে এবারে বোরোধান চাষ করতে দেওয়ার জন্য তার কাছে অনুমতি চায় গৌড়চন্দ্র । এককড়ি রাজি হননি । উলটে তিনি গ্রামেরই এক ভসগচাষিকে জমিটি চাষ করতে দেওয়ার জন্য কথাবার্তা চালাচ্ছিলেন । এই দেখে এক প্রকার জোর করে এককড়িদের ২ বিঘা জমিতে এবারে বোরো ধান চাষ করেন গৌড়চন্দ্র । আজ মঙ্গলবার সকালে তিনি সেই ধান কাটতে গেলে দুই পরিবারের মধ্যে তুমুল ঝামেলা বাধে ।
জানা গেছে,সকালেই শব্জি বিক্রি করতে হাটের উদ্দেশ্যে রওনা হন এককড়ি । বাড়িতে ছিলেন তার স্ত্রী ভবানীদেবী ও মেয়ে ফুলকুমারী । তারা ধান কাটার খবর পেতেই মাঠে ছুটে যান । তখন গৌড়চন্দ্র ও তার পরিবারের লোকজন তাদের ভারী কিছু বস্তু দিয়ে নির্মমভাবে পেটায় । খবর পেয়ে মঙ্গলকোট থানার পুলিশ গিয়ে তাদের রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা দু’জনকেই মৃত ঘোষণা করেন । পুলিশ হত্যাকারীদের মধ্যে দু’জনকে ধরতে পারলেও চম্পট দেয় মুল অভিযুক্ত ।
জানা গেছে,এককড়ি গড়াই ও ভবানীদেবীর তিন মেয়ে । মেজ মেয়ে স্বর্ণলতা কলকাতায় পড়াশোনা করেন। ছোট মেয়ে কিরণমালার কয়েকমাস আগে বিয়ে হয়েছে । বাবার বাড়িতেই থাকেন বড় মেয়ে ফুলকুমারী । হাটে সবজি বিক্রি ও চার বিঘা জমির আয় থেকে কোনো রকমে সংসার চালাতেন এককড়ি গড়াই । স্ত্রী ও এক মেয়ের মৃত্যুর পর তিনি শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন ।।