তোমাকে দেখেছি ‘অলীক’স্বপ্নে
এসেছিলে তুমি নিজের মতো গভীর রাতে,
কষ্ট চাপা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে। বার বার এসে ফিরে যাচ্ছ খালি হাতে ।
আজ যে তুমি বড়ই একা ,
বাঁচা হলো না তোমার।
আমার যে কর্তব্য এখনো শেষ হয়নি ।
কি করে তোমার হাতটা ছোঁবো ?
বুক কেঁপে ওঠে আতঙ্কে ।
আমি তখন আটমাসের অন্তঃস্বত্তা , যেদিন তুমি কিছু না বলে চলে গেলে, সেদিন আমি ব্যালকানিতে……. দাঁড়িয়ে অঝোরে শুধু কেঁদেই গেছি। তোমার সামনে আমাকে সেদিন কেউ যেতে দেয়নি। আমার এই সন্তানের কথা ভেবে সেদিন সবার কথা শুনতে হয়েছিল। ঠিক যেদিন তোমার শ্রাদ্ধের কাজ ছিল, সেইদিনই তোমার সন্তানের জন্ম দিয়েছিলাম। নিয়তির কি লীলা খেলা দেখো। ঠিক মতো তোমার কাজটুকুও করতে পারিনি। যন্ত্রণায় কুঁকড়ে গিয়েছিলাম। কতটা শাস্তি আমার জন্য ভগবান বরাদ্দ করেছে জানো ?
ছেলের জন্য সেদিন কিছুই করতে পারিনি আজ ও
ছেলে যে অনেকটাই ছোটো ওকে কোথায় রেখে যাবো ?
দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়ে আজ তুমি তো মুক্ত।
আর আমি ??
ভেবে দেখেছো কেমন করে পথ চলবো ?
বাবা ( শ্বশুর মশাই) চলে যাবার পর প্রত্যেক মাসে ব্যাঙ্কে যেতে হয় মায়ের (শাশুড়ি মা) পেনশন তুলতে।
তুমি তো জানো, মা তো বহু আগেই প্যারালাইসড হয়ে বিছানায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। বাবার পেনশনের টাকা দিয়েই সংসার চলে। টাকার অভাব কোনোদিনই ছিলো না । তবে তোমার অভাবটাই আমাকে বেশি কষ্ট দিচ্ছে ।
তোমার ওই ব্যবসাটুকু আমার ঘাড়ে চাপিয়ে বেশ আনন্দেই আছো। আমি ব্যবসার কি বুঝি বলো ?
তোমার চোখের জল তো আমি দেখতে পাই না কখনো।
কিন্তু আমার চোখ যে শুকনো হয়ে গেছে মরুভূমির মতো ।
বুকের পাঁজর আজো তোমার কারণে হাহাকার করে।
প্রতিমুহূর্তে ছেলেকে কৈফিয়ৎ দিতে হয় নানান প্রশ্নের।
পুরোনো স্মৃতি কি মনে পড়ে তোমার?
সেই…… সেই দিনের কথা !!
যখন তোমার আর আমার চার হাত এক হয়েছিলো, কি করে বুঝবো সামান্য এক যন্ত্রণায় তুমি হারিয়ে যাবে।
তুমি কি জানো :
তোমার দেওয়া ঝুমকো জোড়া অতি যত্নে গুছিয়ে রেখেছি ।
প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে সবসময় পড়ে থাকার জন্য যে শাঁখা জোড়া বানিয়ে দিয়েছিলে সেটাও আজ আলমারীর লকারে। সবটুকু স্মৃতি, স্মৃতি আঁকড়েই পড়ে থাকা। না মরে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। কত কিছুই তো, না পেয়ে ছেড়ে চলে গেলে তুমি। সাজানো সংসার, ভালোবাসার মানুষ, বাবা-মা, এমনকি ছেলের মুখটাও দেখতে পেলে না । ভালোবাসার বীজ আঁকড়ে গুমরে মরছি।
তুমি কি জানো :
পুকুরের পাড়টা আজ ও তোমার অপেক্ষায়। বিকাশের চায়ের দোকানে রোজ তুমি চা খেতে খেতে আড্ডা দিতে। চা ছাড়া আর কোনো নেশা তোমায় গ্ৰাস করতে পারেনি। সবই তো রেখে গেলে আমাকে শাস্তি দেবার জন্য ।
বহুদুর চলে গেলে আমাকে নিঃস্ব করে।
তুমি কি জানো :
এখন আমি খুব শক্ত হয়ে গেছি মুচড়ালেও ভাঙব না
বহু টাকা পয়সা কাষ্টমারের কাছে পেতে সবাই তো অস্বীকার করেছে
ভাঙ্গিনি আমি একফোঁটাও
কষ্টের কথা বলে লাভ কি ??
শোনার তো কেউ নেই ।
মায়ের থেরাপী করাতে বাড়িতে এক ভদ্রলোক আসেন ।
অবশ্য উনি আমাকে দয়া করেছেন
এইটুকু বুঝি ।
অনেকবার বলেছি টাকার কথা
উনি একটাই কথা বলেন…. না না উনি আমার মায়ের মতো ।
টাকা পয়সা ছাড়াই রোজ বাড়িতে আসেন ।
তবে খারাপ কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা এখনো বুঝিনি।
উদ্দেশ্য বিহীন ঠিকানার খোঁজ কোথায় পাবো বলতে পারো ?
তোমার হাতটা ধরতে চাই কিন্তু কেমন করে ধরবো? আমি যে আটকে পড়েছি ।
তুমি কি জানো :
দায়িত্ব বড় না ভালোবাসা ??
এর উত্তর আমার জানা নেই ।
তুমি কি ফিরতে পারোনা নতুন করে !!!
তোমার করুণ চাউনি নিস্তেজ শরীর ছুঁতে মন চায়।
অনেকটা সময় তোমাকে ছেড়ে বেঁচে আছি ।
তুমি কি জানো :
সামনে ছেলে বাবাইয়ের আবার পৈতে
কিছুই দেখা হলো না তোমার
আমি একা কি করে সামলাই বলো তো?
তুমি এই ভাবে বার বার আমার অলীক স্বপ্নে ফিরে এসো
আমার যত ‘কষ্ট’ সেগুলো স্বপ্নেই তোমার সাথে ভাগ করে নিতে চাই।
জানি কোনোদিন তুমি ফিরবে না
ক্ষতি কি? যদি তোমার ছায়াটুকু পাই প্রতি রাতে
স্বপ্নেই নয় সবটুকু কথা গুছিয়ে রাখব।
সবার ভাগ্যে তো সব ভালো জোটে না।
সারাদিনের পর ক্লান্তিভেজা রাতটুকুতে স্বপ্নে যেন রোজ তোমাকে একটু ছুঁতে পাই।
এইটুকু চাওয়াতেই না হয় বেঁচে থাকবো বাকিটা জীবন ।।