এইদিন ওয়েবডেস্ক,কৃষ্ণনগর,০৪ মে : অর্থের বিনিময়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার মামলায় তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদকে লোকসভা ভোটের পর সিবিআই গ্রেফতার করতে চলেছে বলে ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । ভোটের পর মহুয়াকে ব্যাগ গুছিয়ে রাখার পরামর্শ দেন শুভেন্দু । আজ কৃষ্ণনগরের পলাশিপাড়ায় দলীয় প্রার্থী রাজমাতা অমৃতা রায়ের সমর্থনে আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেওয়ার সময় একই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্রকে উদ্দেশ্য করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’মহুয়া মৈত্র আপনি একটা এক্স এমপির লেটার প্যাড এখন থেকে ছাপাতে দিয়ে দেন । আপনার হয়ে গেছে । টাটা বাই বাই ।’ এরপর তিনি বলেন,’আপনার লজ্জা লাগে না? চারটে লিপস্টিক, দুটো ভ্যানিটি ব্যাগ, চারটে দামি জুতো, একটা বিদেশি কুকুরের জন্য পার্লামেন্টের পাসওয়ার্ড বিক্রি করে দিয়েছেন । আজ সাংসদ নেই। সাংসদ পথ খারিজ হয়ে গেছে । সিবিআই আর ইডি ভোট বলে হয়তো ছেড়ে রেখেছে । ভোটের পরে ব্যাগ গুছিয়ে রাখুন। তেলেঙ্গানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাওয়ের মেয়ের যে অবস্থা হয়েছে আপনারও হয়তো তাই হবে। বেশিদিন আর নেই ।’ তিনি আরও বলেন,’নুপুর শর্মা একটা কথা বলেছেন তার জন্য বিজেপি তাকে সাসপেন্ড করেছে । কিন্তু মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে মমতা ব্যানার্জি কোন ব্যবস্থা নিয়েছে ? যেদিন তিনি বলেছিলেন মা কালী মদ খায়, মা কালী গাজা খায়, তারাপীঠের মা মদ খায় । মমতা ব্যানার্জি ব্যবস্থা নিয়েছে? ব্যবস্থা নেয়নি । এইখানেই তফাৎ মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বিজেপির ।’
এরপর মমতা ব্যানার্জিকে নিশানা করে বিরোধী দলনেতা বলেন,’এই বাংলাকে ১৩ বছরে মমতা ব্যানার্জি ধ্বংস করে দিয়েছে । আজ শিক্ষাব্যবস্থা কোথায় চলে গেছে৷ এবারে মাধ্যমিকের দেড় লক্ষ ছাত্রছাত্রী অকৃতকার্য হয়েছে । শুধু এবারই নয়, ২০২৩ সালে মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড নেয়নি চার লক্ষ ছাত্রছাত্রী । উচ্চমাধ্যমিকে অ্যাডমিট নেয়নি দু লক্ষ ছাত্রছাত্রী । কলেজগুলোতে অনার্স থেকেও ভর্তি হচ্ছে না । ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ফাঁকা । কেন এটা হয়েছে? কারণ ১২ মাসের মধ্যে ৮ মাস স্কুল বন্ধ । এই উন্মাদরানী, আকাশরানী, যখন ইচ্ছা হয় তখন স্কুল বন্ধ করে দেয় । গরম পড়েছে বন্ধ, বন্ধ তো বন্ধই, খোলার নাম নেই । বর্ষা পড়েছে বন্ধ ৷ যখন তখন বন্ধ । এর কারণ তিনি শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মী নিয়োগ করতে পারছেন না ।’ তিনি বলেন,’কেন বন্ধ? ওনার মিড ডে মিলের চাল দরকার । কেন্দ্র চার পাঠাচ্ছে আর সেই টাকাগুলো ঝারছে । তৃণমূলের শুধু টাকা দরকার । তাই পশ্চিমবঙ্গে ৮২০০ স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে ।’
রাজ্যের শিল্প নিয়ে শুভেন্দু বলেন,’শিল্পের দফারফা করে দিয়েছে । একটাও শিল্প নেই। ২০২১ সালের ৫ মে শপথ নেওয়ার পরে কোন্দলপাড়া জুট মিল, ভদ্রেশ্বর জুটমিল, নৈহাটি জুট মিল, ডানকুনির বিস্কুট কারখানা, গুপ্তপাড়া বলাগড়ের সুতো তৈরীর কেশরাম রিয়ন, সব বন্ধ হয়ে গেছে । ডাবরের কারখানা পশ্চিমবঙ্গ থেকে উঠে মধ্যপ্রদেশ চলে গেছে। আর সিঙ্গুরে টাটাতে তৈরি কারখানায় ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে সর্ষের চাষ করেছিলেন । একটা সর্ষে গাছ জন্মায়নি, ফুল তো দূরের কথা । পরিবর্তে তিনি আমাদের দিয়েছেন ২১ হাজার মদের দোকান । এই কাজ মমতা ব্যানার্জি করেছে ।’
এরপর অভিষেক ব্যানার্জিকে নিশানা করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’আর কি করেছে? এই মমতা ব্যানার্জির চোর ভাইপো সব লটারি বন্ধ করে দিয়ে ডিয়ার লটারি আমদানি করেছেন । আর খেটে খাওয়া মানুষরা ১০০ টাকা রোজগার করলে ৮০ টাকা লটারি টিকিট কাটছে । যারা ছাতা খাটিয়ে টুল আর টেবিল নিয়ে বসেছেন সে সমস্ত বেকারদের প্রতি আমার কোন রাগ নেই। তাদের জিজ্ঞেস করবেন, বিক্রি হওয়ার টিকেটে লটারি লাগে না অবিক্রিত টিকিটে লটারি লাগে? যে টিকিট বিক্রি হয় না তাতেই লটারি লাগে। এখনো পর্যন্ত যে বিখ্যাত লোকেরা কোটি টাকা পেয়েছেন দাদার নাম শুনবেন? এক, কেষ্ট মন্ডল । দুই, তার কন্যা সুকন্যা মণ্ডল । তিন নলহাটির টিএমসির এমএলএ রাজেন্দ্র সিংএর ভাই পাপ্পু সিং। চার,হচ্ছে জোড়াসাঁকো টিএমসির বিধায়ক বিবেক গুপ্তার স্ত্রী । এরাই ১ কোটি টাকা করে পেয়েছে ।’
বেকারত্ব নিয়ে শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য সরকারকে নিশানা করে বলেন,’আজ এ রাজ্যে দুকোটি বেকার । কর্ম বিনিয়োগ কেন্দ্রে তালা পড়ে গেছে । কেউ চাকরি পাচ্ছে না । মমতা ব্যানার্জি কেবলই বলে বিজেপি মামলা করে চাকরি দিতে দিচ্ছে না । আমি তাকে বলি পিএসসি থেকে কেস আছে? চাকরি হয় না কেন? মিউনিসিপাল সার্ভিস কমিশনের চাকরি হয় না কেন? চাকরি হয় না কেন কো-অপারেটিভ সার্ভিস কমিশনে? সাড়ে তিন লক্ষ পুলিশের পথ ফাঁকা । কেন পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে চাকরি হয় না? কারণ মমতা ব্যানার্জি এই রাজ্যকে দেউলিয়া করে দিয়েছেন। সিপিএম রেখে গিয়েছিল ১ লক্ষ ৯৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ । মমতা ব্যানার্জি করেছে ছয় লক্ষ ৯৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ । একটা শিশু ৬৪ হাজার টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে ।’
এরপর তিনি বলেন ‘এই রাজ্যকে বাঁচাতে হলে ডবল ইঞ্জিন ছাড়া গতি নেই । গতবারে ১৮ পেয়েছিলাম এবারে ৩৫ পেলে ২৪-এই ভোট করে দেবো আমরা । আমাদের উপর ভরসা রাখুন ।’
শুভেন্দু বলেন, মুখ্যমন্ত্রী এর আগে বেতাইয়ে এসেছেন কিন্তু লোক হয়নি। আর যখন বীরনগরে উনি সভা করেন তখন আমি নবদ্বীপে সভা করছি । ওনার মিটিং এ ৩,০০০ লোক আর ৪,০০০ পুলিশ । আমাদের মিটিং এ ১৫ হাজারের বেশি লোক হয়েছিল । মুখ্যমন্ত্রী তার আজকের সভাতে বলছেন ১৯ লক্ষ ইভিএম উধাও হয়েছে । মারাত্মক অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রী এখন এই জেলাতেই আছেন । আমি ওনাকে জিজ্ঞেস করতে চাই ১৯ লক্ষ ইভিএম যদি চুরি হয় তাহলে আপনি সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্ট যাচ্ছেন না কেন? আপনি যখন ২০২১ সালে জিতেছিলেন তখন ইভিএম ভালো ছিল । আর এখন যখন মোদীজি জিততে চলেছেন তখন ইভিএম এর ঘাড়ে এখন থেকেই দোষ চাপাচ্ছেন? যাতে আপনার আর আপনার ভাইপোর দোকান টা খোলা থাকে, বলবেন ইভিএম হ্যাক করে জিতে গেছে ।’ ভয় পেয়েছে । কারণ নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপিতে মধ্যে দুটো আসন পেয়েছে। এক গুজরাটের সুরাট । দুই মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর ।’।