এইদিন ওয়েবডেস্ক,কক্সবাজার(বাংলাদেশ),০৮ এপ্রিল : সবে তখন সন্ধ্যা নেমেছে । সারাদিন রোজার ধকল । বাড়িতে যাচ্ছিলেন ইফতার করতে । আর ঠিক সেই সময় আততায়ীদের একটা দল এসে ঘিরে ধরে । তাদের হাতে লাঠি ও ধারালো অস্ত্রসস্ত্র । সকলেই তাঁর প্রতিবেশী । তাই ক্লান্ত অবসন্ন বছর আটত্রিশের ওই যুবক বিষয়টি বুঝতে পেরে আততায়ীদের কাছে কাতর আবেদন জানিয়েছিলেন, ‘আমি রোজা রেখেছি, একটু পর ইফতার করবো। বেশি ক্লান্ত লাগছে, ইফতার শেষ করলেই তোমরা আমায় মেরো ।’ কিন্তু মন গলেনি হামলাকারীদের । তারা ওই যুবককে ঘিরে ধরে নৃশংসভাবে পিটিয়ে ও কুপিয়ে খুন করে পালিয়ে যায় । এমনই এক নৃসংস বর্বরোচিত ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে । নিহত যুবকের নাম মোরশেদ আলী ওরফে বলী মোরশেদ (৩৮) । কক্সবাজার সদরের পিএমখালী ইউনিয়নের মাইজপাড়ায় তাঁর বাড়ি । আর বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাড়ির অনতিদূরেই চেরাংঘর বাজারে খুন হন মোরশেদ । তাঁকে তড়িঘড়ি কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আইসিওতে ভর্তি করা হয় । কিন্তু রাত্রি ৮ টা নাগাদ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় ওই যুবকের । ঘটনার পর ক্ষোভে ফুঁসছে গোটা গ্রাম ।
নিহত যুবকের ভাই জয়নাল আবেদীন জানিয়েছেন,গ্রামে সরকারি সেচ প্রকল্প পরিচালনার ইজারা দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের পরিবার পেয়ে এসেছে । আর তা নিয়েই তাঁর দাদা মোরশেদ আলীর সঙ্গে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা আলালের বিরোধ চলছিল । ওই নেতা সরকারি সেচ প্রকল্পের ঠিক পাশেই জোর করে নিজেদের পাম্প বসানোর চেষ্টা করার চেষ্টা করছিল । সেই সঙ্গে সরকারি সেচ প্রকল্প নিজের আয়ত্বে আনার চেষ্টা চালাচ্ছিল সিরাজুল । আর এনিয়ে তাঁর দাদা প্রতিবাদ করত । তাই ওই নেতা তাঁর দাদাকে টার্গেট করেছিল । তিনি বলেন,’ওই সেচ প্রকল্প নতুন করে ইজারা হওয়ার কথা রয়েছে । তাই আমরা ফের ইজারা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলাম । আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে ওই নেতা ।’
আইনজীবী জাহেদ আলী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে মোরশেদ ইফতার কিনতে চেরাংঘর বাজারে গিয়েছিলেন । তার আগেই ওই নেতার নির্দেশে সেখানে ওৎ পেতে ছিল একই গ্রামের বাসিন্দা মাহমুদুল হক,জয়নাল আবেদিন হাজারি, কলিম উল্লাহ, আবদুল মালেকসহ ১৫-২০ জনের একটি দল । তারা লোহার রড, ছুরি ও লাঠি নিয়ে এরশাদ আলীর উপর হামলা চালায় । রোজায় ক্লান্ত মোরশেদ রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন । ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী,মোরশেদ হামলাকারীদের বলছিলেন, ‘সারাদিনের রোজায় আমি খুব ক্লান্ত । মারতে চাইলে ইফতারের পর মেরো আমায় ।’ এরপর তিনি ইফতার পর্যন্ত সময় দেওয়ার জন্য হামলাকারীদের অনুরোধ করেন । কিন্তু তাতেও তাদের মন গলেনি ।
জানা গেছে,হামলাকারীরা মোরশেদকে মাটিতে ফেলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নৃসংসভাবে লাঠি দিয়ে পেটানোর পাশাপাশি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে থাকে । প্রায় ২০ মিনিট ধরে উপর্যুপরি হামলার অচেতন হয়ে পড়েন মোরশেদ । তিনি মরে গেছেন মনে করে হামলাকারীরা পালিয়ে যায় । হামলাকারীরা দাগি দুষ্কৃতী হওয়ায় ভয়ে কেউ তাদের বাঁধা দিতে আসেনি । শেষে স্থানীয় ও পরিবারের লোকজন ওই যুবককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করে । কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি । কক্সবাজার সদর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস জানিয়েছেন,শুক্রবার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে । ঘটলনায় জড়িতদের সন্ধানে তল্লাশি অভিযান চলছে ।।