ঈশ্বর পাঁচুগোপালবাবুর প্রতি সুবিচার করেন নাই একথা তিনি বিবাহের পরেই উপলব্ধি করিলেন। কথায় আছে স্ত্রী ভাগ্যে ধন। কিন্তু পাঁচুগোপালের ধনের পরিবর্তে স্ত্রী-এর ধমকানি এবং মুখ ঝামটা দিয়া দিন শুরু হয়। শ্বশুরকূল বেশ বুঝিয়া শুনিয়াই তাহাদের কন্যার নাম নিস্তারিনী রাখিয়াছিল। সংসারে পান হইতে চুন খসিলেই পাঁচুগোপালের আর নিস্তার নাই। গৃহিণীর অমাইক গর্জনে কাক শালিক পর্যন্ত বসেনা। উদয়ান্ত আফিসে বলদসম পরিশ্রমের বিনিময়ে উপার্জিত অর্থ পুরোটাই মাসের প্রথমে স্ত্রীর হস্তে সমর্পণ করিতে হয় পাঁচুগোপালকে। তার ভাগ্য এতটাই খারাপ যে মাস মাহিনার দিন কোনো পকেটমার তাহার উপর সদয় হয়না। উপরন্তু প্রতিদিন হাতখরচ হিসাবে স্ত্রী তাহাকে ৫০ টাকা করিয়া দেয় তখন নিঃশব্দে পকেটমার অতি যত্নে তাহার পকেটটি মারিয়া দেয়।
এতশত ভাবিয়া পাঁচুগোপাল স্থির করিল বাংলার অবহেলিত অত্যাচারিত গোবেচারা স্বামীদের লইয়া একটি সংগঠন করিবে। চিরুনি তল্লাশি করিয়াও একটিও প্রতিবাদী স্বামী সদস্য জুটিলনা। প্রত্যেকেই নিজের অঙ্গটি সুরক্ষিত রাখিবার জন্য অর্ধাঙ্গিনীর ভয়ে জুজু ।
অতঃপর পাঁচুগোপাল রাগে ক্ষোভে গুরুদেবের গানকে সহায় করিয়া আহার নিদ্রা ত্যাগ করিল। দিনের পর দিন এমনরূপ অতিবাহিত হওয়ার ফলে পাঁচুগোপালের শরীর স্বাস্থ্য দুর্বল হইয়া পরে। এইবার স্ত্রী নিস্তারিনীর কপালে দুশ্চিন্তার আশঙ্কা দেখা দিল। স্বামীর সুস্বাস্থ্য কামনায় চলিল পূজাপাঠ ও কবিরাজ বাড়ি।
এক প্রত্যূষে পাঁচুগোপাল উপলব্ধি করিল স্ত্রী নিস্তারিনী তাহার মাথায় হাত বুলাইয়া বলিতেছে, ‘ওগো! তুমি তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাও, তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে? আমি কথা দিচ্ছি তোমার সাথে আর ঝগড়া করবনা ।’ পাঁচুগোপাল মৃদু হাসিয়া মনে মনে বলিল,’এও এক প্রতিবাদের ফল’।
এরপর হইতে পাঁচুগোপাল ঘোষ অত্যাচারিত প্রতিবাদী বঙ্গ স্বামীকূলের বুদ্ধিদাতা হিসাবে সুখ্যাতি লাভ করিল ।।