জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, বারাসাত, ২৬ ডিসেম্বর :সাধারণ মানুষের বিশ্বাস ২৫ শে ডিসেম্বর পবিত্র বড়দিনের প্রাক্কালে কল্পনার সান্তা ক্লজ উপহার সামগ্রী নিয়ে আমাদের কাছে হাজির হবেন। তারপর আমাদের হাতে তুলে দেবেন সেগুলি। মানুষের মন খুশিতে ভরে উঠবে। এসব অবশ্য কল্পনাবিলাসীদের কল্পনা হলেও বাস্তব বড় কঠিন, বড় রূঢ়। সেই কঠিন মাটিতে নেমে আসেনা কোনো সান্তা ক্লজ। তার মধ্যেও নিজেদের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে রক্তমাংসে গড়া বাস্তবের ওরাই হয়ে উঠেছিল ঐসব অসহায় মানুষদের কাছে সান্তা ক্লজ।
সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। বড়দিন উপলক্ষ্যে বারাসতের চার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু বৃষ্টি, লিলি, নবনীতা ও ববি বেরিয়ে পড়ে রাস্তায়। এবার ওদের সঙ্গে ছিল তন্ময়। ওরা সব ‘খোলা জানালা’র সদস্য। লক্ষ্য পবিত্র বড়দিনে কিছু খুশি কুড়িয়ে নেওয়া। একে বড়দিন, তার উপর ঠান্ডা ভালই জাঁকিয়ে বসেছে এবং আবহাওয়া দপ্তরের ইঙ্গিত শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে। তাই সঙ্গে নিয়েছিল কম্বল, কেক ও জয়নগরের মোয়া।
বারাসতের বাসিন্দারা অবাক হয়ে দেখে ওই পাঁচটা মানুষ কিছু একটা খুঁজতে খুঁজতে হেঁটেই চলেছে। চলার পথেই তারা পেয়ে যায় সেই সব অসহায় মানুষদের জীবনটা যাদের কাছে রঙিন ক্যানভাসে আঁকা সাদা-কালো ছবির মত। চলার পথে ওদের চোখে পড়ে যায় বেশ কয়েকজন শিশু, গর্ভবতী মা, অসহায় বৃদ্ধা-বৃদ্ধা ও একজন অন্ধ মানুষকে। ওদের গায়ে নাই ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচার জন্য উপযুক্ত কোনো পোশাক। কেউ বা ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া খাবার কুকুরদের সঙ্গে লড়াই করে খুঁটে খুঁটে খাচ্ছে। সত্যিই আজকের দিনে ওদের জন্য দরকার ছিল সান্তাক্লজের। চোখের জল সামলে নিয়ে নিজেদের সঙ্গে আনা সামগ্রী তুলে দেয় ওদের হাতে। এই সামান্য কিছু পেয়ে ঐসব মানুষদের মুখে ফুটে ওঠে হাসি। এইভাবে প্রায় চারঘণ্টা ধরে হেঁটে হেঁটে বারাসতের বুকে ওরা খুঁজে পায় জনা কুড়ি অসহায় মানুষকে।
খোলা জানালার পক্ষ থেকে বৃষ্টি রায় বললেন, ‘প্রতি বছর এই দিনে আমরা পিকনিক করি। অথবা কোনো রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করি। কিন্তু এবার অন্য কিছু করতে মন চাইল। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে যেটুকু পারলাম সেটাই করলাম। ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে বাচ্চা ছেলেটা যখন একটা চাদরের জন্য জড়িয়ে ধরল অথবা ঐ বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা যখন তাদের আশীর্বাদের হাত আমাদের মাথার উপর রাখলেন তখন সত্যিই খুব আনন্দ হলো। মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো। অন্যদের কণ্ঠে একই সুর শোনা গেলো ।’।