এইদিন ওয়েবডেস্ক,জলপাইগুড়ি,১১ জানুয়ারী : জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স চড়া ভাড়া দাবি করায় ছেলের সাথে মৃত স্ত্রীর শব কাঁধে করে নিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন জনৈক প্রৌঢ় । তাঁদের এই অসহতার খবর পেয়ে মৃতদেহ বিনামূল্যে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসে স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা । আর ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এই অপরাধের জন্য থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সংগঠন । সেই অভিযোগের ভিত্তিতে অবশেষে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধারকেই গ্রেফতার করল পুলিশ ।
গ্রীন জলপাইগুড়ি নামে ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সম্পাদক অঙ্কুর দাসকে গ্রেফতারের পর বুধবার আদালতে তুলে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আবেদন জানিয়েছিল কোতোয়ালি থানার পুলিশ । সেই আবেদনের ভিত্তিতে তাঁকে ৪ দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতের অনুমতি দিয়েছেন বিচারক । এদিকে পরোপকারী এই ব্যক্তিকে এভাবে গ্রেফতার করায় ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকার বাসিন্দারা । পাশাপাশি বেশি ভাড়া দাবি করেও জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক ইউনিয়ন এবং তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত আইএনটিটিইউসির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ।
নিহত মহিলার নাম লক্ষ্মীরানী দেওয়ান । তাঁর বাড়ি জলপাইগুড়ি জেলার কান্তি এলাকায় । তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল । কিন্তু গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয় ।মৃতার ছেলে রামপ্রসাদ দেওয়ান সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেছেন,’হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা ৩,০০০ টাকার নিচে ভাড়া যেতে রাজি হয়নি । তখন আমার কাছে কাছে ১,২০০ টাকা ছিল । ওই টাকা দিয়ে মায়ের মৃতদেহ বাড়ি পৌঁছে দিতে অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা অস্বীকার করলে শেষে আমি আর বাবা মিলে মায়ের শব কাঁধে করে নিয়ে যাচ্ছিলাম ।’
গ্রিন জলপাইগুড়ির সম্পাদক অঙ্কুর দাস বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে শব কাঁধে করে নিয়ে যাওয়ার কথা কেউ আমাকে ফোনে জানায় । তারপর আমি চালককে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে চলে আসি এবং নিখরচায় মৃতদেহ বাড়ি পৌঁছে দিই । সেই সময় ময়নাগুড়ির একজনের আত্মহত্যার খবর কভার করতে হাসপাতালে গিয়েছিল কয়েকজন সাংবাদিক । তাঁরা ঘাড়ে করে শব বহনের দৃশ্য ভিডিও করেছেন। আমি কোনো ভিডিও রেকর্ড করিনি ।’
জানা গেছে,এদিকে এই ঘটনায় চক্রান্তের অভিযোগ তোলে জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স সংগঠন । সংগঠনের পক্ষ থেকে অঙ্কুর দাসের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয় । সেই অভিযোগের ভিত্তিতে অঙ্কুরবাবুর বিরুদ্ধে আইপিসির ৫০৫(২) সহ একাধিক ধারায় মামলা রজু করে পুলিশ । শেষ পর্যন্ত তাঁকে গ্রেফতার করা হয় ।
গ্রেফতারির আগে অঙ্কুর দাস সংবাদ মাধ্যমের কাছে বলেন,’জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স অ্যাসোসিয়েশনের বিরুদ্ধে
দাদাগিরি বা গাফেলতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের । আর এটা ধামাচাপা দিতেই জানুয়ারীর ৬ তারিখে আমার ও কয়েকজন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছিল হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সংগঠন ।’ পাশাপাশি তিনি বলেছেন,’হাসপাতাল থেকে লক্ষ্মীদেবীর বাড়ির দূরত্ব ৩০ কিমি । মারুতি ওমনি ভ্যান এই ৬০ কিমি রাস্তার জন্য ৪০০ টাকা ভাড়া নেয় । মৃতার পরিবার ১২০০ টাকা দিতে চেয়েছিল । ওই টাকায় গেলে তাতেও ওদের লাভ ছিল ।’ তাঁর অভিযোগ,’আমাদের সংগঠন বিনামূল্যে পরিষেবা দেয় বলে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স সংগঠনের আমাদের উপর খুব রাগ । এর আগেও আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল ওরা । তবে একদিন ধর্মের জয় হবেই ।’ এদিন গ্রেফতারির কান্নায় ভেঙে পড়েন অঙ্কুরবাবু ও তাঁর পরিবার ।।