প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৯ মার্চ : লক্ষ লক্ষ টাকা লুট করে নিয়ে বালির গাড়ির টোল ট্যাক্স আদায়ের দুটি অফিসে আগুন ধরিয়ে দেবার অভিযোগে গ্রেপ্তার হল দুই দুস্কৃতি। পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ থানার পুলিশ বুধবার রাতে শশঙ্গা এলাকা থেকে কৃষ্ণ রায় ও হেমন্ত রায় নামে ওই দুই দুস্কৃতীকে গ্রেপ্তার করে ।সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ বৃহস্পতিবার দুই ধৃতকে বর্ধমান আদালতে পেশ করে। ঘটনায় জড়িত বাকি দুস্কৃতিদের নাগাল পেতে তদন্তকারী অফিসার দুই ধৃতকে ১০ দিন পুলিশি হেপাজতে নিতে চেয়ে এদিন আদালতে আবেদন জানায়।বিচারক ধৃতদের পুলিশ হেপাজত মঞ্জুর করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,বালির গাড়ি থেকে টোল আদায়ের একাধিক কাউন্টার রয়েছে খণ্ডঘোষের শশঙ্গা অঞ্চলে। টোল আদায়ের লিজ অনুমোদন করেছে শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েত।বুধবার দুপুরে এমনই দুটি টোল কাউন্টারে চড়াও হয় দুস্কৃতী দল।টোল কাউন্টার গুলির মালিক ফিরোজ হোসেন বলেন, বালির গাড়ি থেকে এক বছর টোল আদায়ের জন্য খণ্ডঘোষের শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েত গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দরপত্র জমা দেওয়ার দিন নির্দিষ্ট করে। তিনটি জায়গায় টোলা আদায়ের কাউন্টার বসানোর জন্য তিনি ৪ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা দরপত্র দিয়ে পঞ্চায়েত থেকে টোল আদায়ের জন্য মনোনীত হন। চলতি বছরের ৩ মার্চ পুরো টাকাটা পঞ্চায়েত অফিসে জমা দিয়ে তিনি টোল আদায়ের অনুমতি পত্র হাতে পান। টোল আদায়ের জন্য জনা কুড়ি পঁচিশ ছেলেকে তিনি নিয়োগ করেছেন । কর্মীদের থাকা, খাওয়া ও বিশ্রামের জন্য টোল কাউন্টার গুলির কাছে অস্থায়ী ঘর তৈরি করা হয়েছে।
ফিরোজ হোসেনের অভিযোগ,বুধবার দুপুর আড়াইটা নাগাদ তার দুটি টোল কাউন্টার অফিসে এলাকার একদল দুষ্কৃতী চড়াও হয় । তারা টোল কাউন্টারে থাকা কর্মীদেরকে ব্যাপক মারধর করার পাশাপাশি তিনটে বাইকে ভাঙচুর করে। এমনকি কর্মীদের কাছে থাকা মোবাইল ফোন,আই ফোন গুলিও কেড়ে নেয়। এরপরে কর্মীদের থাকার দুটি ঘরে ঢুকে গিয়ে ব্যাপক লুটপাট চালায়। গত দুদিন টোল আদায় বাবদ সংগৃহীত যে ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা টোল অফিসে ছিল সেই পুরো টাকাটা দুষ্কৃতীরা লুট করে নিয়ে চলে গেছে বলে ফিরোজ হোসেন অভিযোগে জানিয়েছেন। একই সঙ্গে ফিরোজবাবু এও বলেন দুষ্কৃতী হামলার খবর পেয়েই খন্ডঘোষ থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই দুস্কৃতীকে পাকড়াও করে ।
এলাকার বাসিন্দারা আবার হামলার ঘটনা নিয়ে ভিন্ন কথা শুনিয়েছেন।তাদের কথায় জানা যায়, পঞ্চায়েত থেকে টোল আদায়ের ছাড়পত্র পাওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকেই ফিরোজ হোসেন তার দলবলকে দিয়ে বালির গাড়ি থেকে টোল আদায় করা শুরু করে দিয়েছিল । এই কাজে তিনি এলাকার কিছু দুষ্কৃতীদের সহায়তা নিয়েছিলেন। পরে ছাড়পত্র পাওয়ার পর ওইসব দুষ্কৃতীদের আর পাত্তা না দেওয়ায় তারা মনে মনে ক্ষুব্ধ ছিলেন। এদিনের ঘটনা সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
শশঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রকাশ ঘোষ বলেন, যা ঘটেছে সেটা অত্যন্ত নক্কারজনক ঘটনা। প্রকাশ বাবু জানান । বুধবার হোলির দিন এলাকার কিছু মদ্যপ দুষ্কৃতী টোল কাউন্টার গুলিতে গিয়ে টাকার দাবি করে। তা নিয়ে গোলযোগ অশান্তি বাঁধে।ওই সময় মদ্যপ দুষ্কৃতীদল টোল কাউন্টারের অফিসে হামলা ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় বলে তিনি জানতে পেরেছেন। ছাড়পত্র পাওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকে ফিরোজ হোসেন লোকজন লাগিয়ে টোল আদায় করছিল বলে যে অভিযোগ উঠেছে সেই প্রসঙ্গে পঞ্চায়েত প্রধান প্রকাশ ঘোষ বলেন, ইজারাদার একাধিক অ্যাকাউন্ট থেকে লিজের ৪ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা মিটিয়েছিল। সেটা যেহেতু নিয়মবহির্ভূত তাই তাকে তখন ছাড়পত্র না দিয়ে টোল আদায় করা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে নিয়ম মেনে ইজারাদার তার নিজস্ব নামের তহবিল থেকে লিজের পুরো টাকাটা পঞ্চায়েতে জমা করলে তারপর তাকে টোল আদায়ের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। হামলাকারী দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে রাতেই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়ে বলে প্রধান জানিয়েছেন।জেলা পুলিশের এক কর্তা কথায়, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । বাকীদের সন্ধান চালানো হচ্ছে ।।