এইদিন ওয়েবডেস্ক,হলদিয়া,১৮ মে : ভাইপোকে জেলে পাঠানো এবং পিসিকে কালীঘাটের মন্দিরের সামনে বাটি নিয়ে বসানোর শপথ নিলেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী অভিজিৎ গাঙ্গুলীর সমর্থনে শুক্রবার রাতে হলদিয়ায় জনসভা করেন শুভেন্দু । আগের দিন বৃহস্পতিবার তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্যের সমর্থনে খড়গপুরে জনসভায় শুভেন্দু অধিকারীকে “গদ্দার” বলে আক্রমণ করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি । শুক্রবারের রাতের জনসভাতে মূলত তারই প্রতিক্রিয়া দেন শুভেন্দু । নন্দীগ্রাম আন্দোলনে মমতা ব্যানার্জির ভূমিকা নিয়ে নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন । মুখ্যমন্ত্রীকে “ড্রামা বাজ” ও ‘চকলেট, ক্যাডবেরি ও স্যান্ডউইচ খেয়ে’ অনশনের নামে মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার অভিযোগ তোলেন । অন্যদিকে অভিষেক ব্যানার্জির সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেন ‘কালীঘাটের পুতি গন্ধময় নালায় জন্ম’ বলে ।
মমতা-অভিষেকের উদ্দেশ্যে শুভেন্দু বলেন,’আমার নেতা নরেন্দ্র মোদী, আমার অভিভাবক অমিত শাহ, আমি যদি তাদের শিষ্য হয়ে থাকি, সিপিএমের সূর্য মধ্য গগনে,আমি লক্ষণ বাবুকে হারিয়েছি এক লাখ ৭৩ হাজার ভোটে । মমতা ব্যানার্জি ২১১ সিট পাচ্ছে, সেদিন আমি তাকে হারিয়েছি ১৯৫৬ ভোটে । আমি আপনাকে প্রাক্তন করবো বলে গেলাম । কেষ্টকে বলেছিলাম, কেষ্ট ভিতরে গেছে। বালুকে বলেছিলাম, বালু ভিতরে গেছে। শাহজাহান বলেছিল আমার ছাল চামড়া তুলবে, আমরা ওর ছালচামড়া তুলে নিয়েছি। আজকে বলে গেলাম কুমারজানার মাটিতে দাঁড়িয়ে, বিরাজবাবুর মাটিতে দাঁড়িয়ে বলে গেলাম আপনার ভাইপোকে জেলে পুরবো আর আপনাকে কালীঘাটের মন্দিরের সামনে বাটি নিয়ে বসাবো….বলে গেলাম আপনাকে।’
নন্দীগ্রামের ভূমি আন্দোলনে মমতা ব্যানার্জির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’আপনি কোথায় ছিলেন? নন্দীগ্রামের পটভূমি হয়েছে ২০০৬ সালের ৩ নভেম্বর…সোনাচুড়াতে… জমি রক্ষা কমিটির নামে । ডিসেম্বর মাসে নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে মিটিং। আপনার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীকে জিজ্ঞেস করে নেবেন। ৩ জানুয়ারি ভূতামোড়ে আন্দোলনের শুরু। সেদিন কোথায় ছিলেন আপনি? টাটাকে তাড়ানোর জন্য চকলেট, ক্যাডবেরি, স্যান্ডউইচ খেয়ে অনশন করছিলেন না? এই রাজ্যের নেত্রী বটে শিল্প পাঠান গুজরাটে । তৈরি হওয়া কারখানাতে ডিনামাইট দিয়ে তুলে দিয়েছেন বেকারের স্বপ্ন ধ্বংস করেছেন । আপনি গড়তে জানেন?
সেদিন বামনচকে আমি ছিলাম আর আপনি ছিলেন উডল্যান্ড নার্সিংহোমে । ৭ জানুয়ারি, তার আগের দিন হলদিয়া উৎসব, গুলি চললো পানের বরজ থেকে । ভরত মন্ডল,বিশ্বজিৎ মাইতি মারা গেল । ৩৮ বছরে যুবক শেখ সেলিম, যদুবাড়ি চর, দুটো হাত আর দুটো পা বেঁধে পাঁকে পুঁতে রেখেছিল। রাস্তা কাটা আমি মোটরসাইকেল চালিয়ে এসে সাড়ে দশটার সময় সেলিমের দেহ তুলেছিলাম। হাসপাতালে আমি নিয়ে গিয়েছিলাম । আপনি কোথায় ছিলেন মাননীয়া?
মাননীয় ১৪ ই মার্চ গুলি চলে,আগের দিন আমি নন্দীগ্রামে । আপনার দুটো মহিলা কাউন্সিলর এসেছিলেন । পুরবীদি এসেছিলেন,জিজ্ঞেস করবেন । ১৪ তারিখে গুলি চললো সন্ধ্যেবেলা আপনি এলেন । ক্ষুদিরাম মোড়ে সিপিএম আপনাকে আটকে দিল । আপনি ফিরে গেলেন । বুদ্ধবাবু এই কাজটা করেছিল… আপনার সঙ্গে প্রচুর সিকিউরিটি দিয়েছিল । আপনি এখন যেমন নোংরামিটা করেন না, বুদ্ধবাবু সেই সময়ে আপনার সঙ্গে তেমন নোংরামি করত না । আপনি চন্ডিপুর থেকে ফিরে পালালেন,থাকলেন কোলাঘাটে, পরদিন সকাল দশটায় হসপিটালে এলেন । বাজার খারাপ দেখে অজ্ঞানের ভান করে পালালেন এগারোটায় । আমি এবং শিশির অধিকারী সকাল আটটায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছি । সিপিএম ডেকেছিল বনধ । হরিপুর-খড়গপুর-বালিচক-ডেবরা-কোলাঘাটের ভিতর রূপনারায়ণের চর দিয়ে তমলুকের নিমতলায় উঠে নন্দকুমার এর ভিতর দিয়ে নদী টপকে তালা বন্ধ ট্রেকার খুলিয়ে সাড়ে তিনটায় পৌঁছেছি আমরা । ১৪ টা দেহ ছিল, একটা চিহ্নিত করা যায়নি । ১৩ টা দেহ আমরা পৌঁছে দিয়ে এলাকা পুনঃর্দখল করে এসেছি । কোথায় ছিলেন মাননীয়া? বাকিটা বাগনানে গিয়ে বলব । এরপর উপস্থিত শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,’কথা দিয়ে গেলাম আপনাদের, মেদিনীপুরের ছেলে তো, শুধু আমাকে গাদ্দার বলেনি আপনাদের ও বলেছে, বদলা নেবেন তো?’ শুভেন্দুর মুখ থেকে নন্দীগ্রামের অতীত কাহিনী মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনতে দেখা যায় কয়েক হাজার শ্রোতাকে ।
এদিনের সভায় মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে ক্ষোভ,দুঃখ, ক্রোধ ঝড়ে পড়ে শুভেন্দুর গলার । তিনি মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন,’ড্রামা বাজ মুখ্যমন্ত্রী আগে অজন্তার হাওয়াই চটি পড়তো এখন এডিডাসের হাওয়াই চটি পড়ে । আর লেভেলটা ব্লেড দিয়ে তুলে দেয় ।দাসপুরের একটা সভাতে সবার সামনে চটিতে সেফটিপিন লাগিয়েছে । এর বড় নাটক আমি নন্দীগ্রামে দেখেছিলাম । ভালো পায়ে ব্যান্ডের জড়িয়ে পা দেখিয়ে ঘুরছিল৷ গোটা রাজ্যকে টুপি পরিয়েছে । নন্দীগ্রামও পারেনি, হলদিয়াতেও পারেনি । তাপসী জিতেছে প্রায় ১৫ হাজার ভোটে । আমি জিতেছি ১৯৫৬ ভোটে । আপনারা এসব টুপি পরার লোক নয় আমি জানি ।
একটা মুখ্যমন্ত্রীর মুখে ভাষা কি – “স”,” ব”,”ল”- পুরো শব্দ আমি বলতে পারব না। কি ভাষা! বলছে বাপ বেটা কোথায় ছিল । আরে, মা বেটায় কোথায় ছিলেন আপনারা? আপনারা আলালে দুলাল ২০১১ সালের ২১ জুলাই দিল্লি থেকে নেমেছে । তার আগে লড়াইয়ে কোথায় ছিল? আর নন্দীগ্রামের ইতিহাস? তার উত্তর ২০২১ সালে জনগণ দিয়ে দিয়েছে । আবার ২৫শে মে দিয়ে দেবে ।
শুভেন্দু বলেন,’আমি মমতা ব্যানার্জির কতকগুলো মিথ্যাচারিতা তুলে ধরব । মমতা ব্যানার্জি ২০২১ সালে বলেছিল ডবল ডবল চাকরি হবে । এখন ডবল ডবল চাকরি যাচ্ছে । ২০২১ সালে মমতা ব্যানার্জির দলের যে প্রার্থী, তিনি অকালে মারা গিয়েছিলেন, স্বপন নস্কর, তার এইচএফসি মাঠ যেখানে তিনি ক্ষুদিরাম মেলা করেন, সেই মাঠে কালকে এসেছিলেন, তিনি তার সহকর্মীর নাম একবারও বলেছেন? কি ধরনের মানুষ শুধু লক্ষ্য করুন ।’
তিনি বলেন,’আমার উপরে এত ক্রোধ,প্রতিহিংসার কারণ কি জানেন? যতদিন বাঁচবে কানের কাছে বাজবে,হেরেছি… হেরেছি….হেরেছি । ১৯৫৬ -এর জ্বালা মেটার নয় । সূর্যকান্ত মিশ্রকে ২০১১ সালের নবান্নতে ডেকে ফিস ফ্রাই খাইয়ে ম্যানেজ করে নিয়েছিল । সূর্যবাবুর বউ শ্রীমতী ঊষা মিশ্রর এনজিওর বিরুদ্ধে সিআইডি লাগিয়ে তিনবার ভবানী ভবনে ডেকে সূর্য বাবুকে ভয় দেখিয়ে দিয়েছিল, তুমি বাড়াবাড়ি করলে তোমার সহধর্মিনীকে জেলে যেতে হবে । সূর্যবাবু আর বিরোধিতা করেননি । সেটিং অপোজিশন ছিল । ২০১৬ তে কংগ্রেস সেই একই । আর আমি তাপসী মিলে ৭০ টা এমএলএ ওকে বিধানসভায় যা করি পায়ে কাঁটা পড়লে যেমন লাফায়, সেই কান্ড প্রতিদিন বিধানসভায় উনি করেন । বিজেপি নো সেটিং অপজিশন । আমরা তিন বছর ধরে ওনার চাকরি চুরি বন্ধ করেছি৷ এখন তৃণমূলের ত্রাস অভিজিৎ গাঙ্গুলির নামটা মনে পড়লে রাতে ঘুম হয় না ওদের । আমরা কয়লা চোর, বালি চোর,গরু পাচারকারীদেরকে ধরিয়েছি ।’
শুভেন্দু বলেন, কালকে মুখ্যমন্ত্রীর এখানে এসে কি বলেছে? বলেছে এখানে একজন গদ্দার আছে । বলেছে তৃণমূল জন্মের সময় ছিল না । বলেছে নন্দীগ্রামের সময় ১৫ দিন বাপ বেটা বেরোইনি । বলেছে এখানে একজন গদ্দার আছে চাকরি খায়। বলেছেন লোডশেডিং করে ভোটে জিতেছে দেখে নেব, বদলা নেব। আরে কি বদলা আপনি নেবেন? আমি যদি মেদিনীপুরের ছেলে হই তাহলে আপনাকে প্রাক্তন করব আর আপনার ভাইপোকে জেলে ঢোকাবো ।’ শুভেন্দু বলেন,’আমার নামে ৪৫ টা মামলা করেছে। ৩০২, খুনের ধারা থেকে চুরির মামলা কোনটাই বাদ দেয়নি । হাইকোর্টের সুপ্রিম কোর্টে আমি গেছি । বিচার ব্যবস্থা বলেছে শুভেন্দু অধিকারী ২০১৯ এর ডিসেম্বর ২০২০ আগে সাদা ছিলেন, বিজেপিতে যাওয়ার পর কালো হয়ে গেছেন? আর সব মামলা ২ মে-এর পরে নথিভুক্ত করতে হয়েছে? কারণ তিনি মমতা ব্যানার্জিকে হারিয়েছেন,তাই তো? তাই বিচার ব্যবস্থার প্রটেকশন আমি পেয়েছি ।’
তিনি বলেন,’মমতা ব্যানার্জি আপনি বলেছেন আমরা হারতাম। আপনার রাজনৈতিক জন্মের আগে শিশির অধিকারী সত্তর সাল থেকে ভোটে জেতেন,৮২ সালের এমএলএ । আপনার দল প্রতিষ্ঠার আগে আমি ৯৫ সালের কাউন্সিলর । আর আপনি তৃণমূল দল তৈরি করার আগে সিপিএমের মালিনী ভট্টাচার্যের কাছে যাদবপুরে গো হারা হেরেছেন । আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই । মমতা ব্যানার্জি আপনি বলেছেন নন্দীগ্রামে আমরা ছিলাম না। আমি ২৩ তারিখে নন্দীগ্রামে মাটিতে এর উত্তর দেবো । ৪১ জন শহীদ পরিবারকে রেখে দেবো । প্রত্যেক বার আপনি ভাঙা রেকর্ড বাজান।’
মমতা ব্যানার্জি ও অভিষেক ব্যানার্জির সম্পদ ও রাজকোষের টাকা খরচ করে নির্বাচনী প্রচার করাউ বেশ কিছু প্রশ্ন তোলেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন,’গতকাল এখানে আকাশ রানী এসেছিলেন । হেলিকপ্টারে করে উনি এবং ওনার আলালের দুলাল তোলাবাজ ভাইপো । এরা হেলিকপ্টার ছাড়া চড়েন না । একমাস আগে ভাইপো এসেছিল গোল্ডেন রিট্রিটে । কলকাতা থেকে হলদিয়া আসতে গাড়িতে দু ঘন্টা লাগে । কোকড়াহাটি ব্রিজ পেরিয়ে এলে দেড় ঘন্টা লাগে । এইটুকু আসার জন্য গোল্ডেন রিট্রিট হোটেলে ২৭ লক্ষ টাকা বিল হয়েছে। সাড়ে চার হাজার পুলিশ, ১৪৭ জনের মিটিং ।’ তিনি প্রশ্ন তোলেন,’কালীঘাটে আপনার পরিবারে ৩৮ টা প্লট হয় কি করে?’
তিনি বলেন,’আপনি যা যা অপকর্ম রাজ্যে করেছেন… আপনি দু’কোটি বেকার তৈরি করেছেন । হলদিয়ার মাটিতে এসে একটা শিল্পের কথা নাই, উদ্বাস্তুদের কথা নেই, কর্মসংস্থানের কথা নাই, শ্রমিকদের ভবিষ্যতের কথা নেই, কি কাজ করবেন তার কথা নেই । আপনার ১৩ বছরের হলদিয়ায় হাসপাতাল তো দূরের কথা প্রাইমারি হেলথ সেন্টার হয়েছে ? উত্তর না । আপনি উলটে হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটির নিজস্ব ফান্ড, ২০০ কোটি টাকা রেখে দিয়ে গিয়েছিলাম আমরা, আমার আগের চেয়ারম্যানের লক্ষণবাবু ১০০ কোটির মত, আমি সেটাকে বাড়িয়ে ২০০ কোটি, সেই রিজার্ভ ফান্ড আপনি ট্রেজারি লিঙ্ক করে এই টাকা তুলে নিয়ে চলে গেছেন । ভাতা আর ভর্তুকি দেওয়ার জন্য । খেলা আর মেলা করার জন্য । আপনি যে এইচএফসি মাঠে কালকে মিটিং করেছেন তার পুনরুজ্জীবিত করার কোন কথা বলেছেন আপনি ? বন্দরের ৫০০০ একর জমি পড়ে আছে,হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি ৭০০ একর জমি পরে আছে । আপনার লোকেরা একটা বালব কাটলে পর্যন্ত লাগায় না । নতুন স্কুল কলেজ তো দূরের কথা একটা বিল্ডিংয়ে দুটো রুম পর্যন্ত আপনার সময় হয়নি। আমাদের চেষ্টায় সিএসআরের টাকায় ইন্ডাস্ট্রিগুলো জনমুখি করা হয়েছিল ।’ হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথোরিটিতেও অর্থের বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ তুলে শুভেন্দু অধিকারী বলেন,’আপনি হলদিয়া পুরসভার ভোট করেননি কেন? নাগরিক পরিষেবা পায়? পায়না । আপনার শুধু হামলা আছে আর মামলা আছে ।’
ফের মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করে তিনি বলেন,’কত বড় মিথ্যাবাদী দেখুন, আগে বলতে সিএএ হলে আধার কার্ড বন্ধ হয়ে যাবে না এবং নাগরিকত্ব চলে যাবে । যেই পরশুদিন সিএএ-এর সার্টিফিকেট অমিত শাহরা দিয়ে দিয়েছেন, এখন আর সিএএর কোন কথা নাই । আজ দাসপুরে বলছে পরিযায়ী শ্রমিক ফিরে এসো, স্বাস্থ্য সাথীর কার্ড দেবো । ওটা ভুয়া কার্ড কেউ নেয় না । যেকোন নার্সিংহোমে গেলে কার্ড দেখালে বলে বেড নাই । পশ্চিমবঙ্গের বাইরে ওই কার্ড কেউ নেয় না।’
তিনি বলেন,’মমতা ব্যানার্জি আপনার মিথ্যাচার বাংলার মানুষ এই নির্বাচনে বুঝিয়ে দেবে । দু কোটি বেকার, কর্ম বিনিয়োগ কেন্দ্রে তালা, ১৩ বছরের একটা ইন্ডাস্ট্রি আনতে পারেননি। ল্যান্ড পলেসি ভুল । আমি ওনার মন্ত্রিসভার যখন সদস্য ছিলাম, বারে বারে বলেছি যে আপনি এই ল্যান্ড পলিসি করলে এই রাজ্যের বিনিয়োগ হতে পারবে না । তিনি বলছেন আমার শিল্প করার দরকার নেই । অ্যাকাউন্টে ৫০০ টাকা দিয়ে দেবো আর মুসলমানদের ভয় দেখাবো, বিজেপি হিন্দুদের পার্টি তোমাদের তাড়িয়ে দেবে ।’
তিনি বলেন,’কি ভাষা, বাপ বেটা? আপনার পার্টিটা তো উঠে গিয়েছিল মাননীয়া । ২০০১ সালে ‘হয় এবার নয় নেভার’ । কেউ দিতো না জায়গা । আপনি ভুলে গেছেন ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতাতে কোন হল পাননি । নেতাজি ইন্ডোর, নজরুল মঞ্চ, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র বামফ্রন্ট সরকার আপনাকে দেয়নি মিটিং করতে । ২০০৩ সালের ফেব্রুয়ারীতে শিশির অধিকারী কাঁথির অরবিন্দ স্টেডিয়ামে আপনার পার্টির সম্মেলন করিয়েছিল । আপনি ভুলে গেছেন মমতা ব্যানার্জি ২০০৩ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি তমলুকের জেলা শাসকের অফিসের সামনে, তখন দীপক ঘোষ অবিভক্ত জেলার কনভেনার, আপনি এসেছিলেন সভা করতে, তারপর আমাকে বলেছিলেন ৯ আগস্ট সভা করব, কে দায়িত্ব নেবে, আমি তখন জেলা তৃণমূলের যুব সভাপতি ছিলাম, ভুলে গেছেন আপনি ? লক্ষণ বাবুরা সব তালাচাবি লাগিয়ে দিয়েছিল। এক গ্লাস জল ওকে দেয়নি । চৈতন্যপুর থেকে প্যান্ডেল, মহিষাদল থেকে মাইক, কাঁথি পৌরসভার জলের গাড়ি, ভাষণ দিয়েছিলেন আপনি । ফেরার সময় নন্দকুমার এর টার্নিং-এ,সুকুমার দে সাক্ষী, গাড়ির কাঁচ নামিয়ে আমাকে বলেছিলেন নির্মলেন্দু দা ৯৮ সহ দু’বার বার লড়েছে এবারের লক্ষণ সেঠের বিরুদ্ধে লড়তে চাইছে না, তুই কি লড়বি? ভুলে গিয়েছিলেন না? ২০০৪ সালে আপনি তো প্রার্থী পাননি । আমি তো লড়েছি । আপনি ভুলে গেছেন না জঙ্গলমহল কোন দিক দিয়ে যেতে হয়? রাস্তা জানতেন না । আমি নন্দীগ্রামে পাঁচ জন শহীদের নাম বলতে পারবেন ?’
শুভেন্দু বলেন,’আপনারা আমাকে চার সাল থেকে দেখছেন । আমার কোন পরিবর্তন আছে? হাতে আংটি আছে? গলায় হার আছে? আমার জুতো থেকে জামায় কোন পরিবর্তন আছে? ২০০৪ সালে দেখেছেন, ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দেখেছেন, ক্ষমতায় না থাকা অবস্থায় রেখেছেন।’
তবে অভিষেক ব্যানার্জিকে এদিন নজিরবিহীন ভাষায় আক্রমণ করেন শুভেন্দু অধিকারী । তিনি বলেন, ‘আরে, এই আলালের দুলাল…বাপ-বেটা…কি ভাষা! একটা নিম্ন মেধা । কালীঘাটের পুতি গন্ধময় নালায় জন্ম । যে যেখান থেকে উঠে আসে তার মানসিকতা তাই হয় । জঙ্গলের জানোয়ারকে চিড়িয়াখানায় আনলে জানোয়ার কখনো ভদ্র হয় না ।’ ফের মমতা ব্যানার্জিকে নিশানা করে তিনি বলেন,’আমরা মেদিনীপুরের লোক । আপনি গাঁয়ের পান্তা খাওয়া লোককে অপমান করবেন ? দিদি থেকে দিদিমা হতেন, নন্দীগ্রাম না হলে কোনদিন মুখ্যমন্ত্রী হতে পারতেন না। আপনাকে প্রাক্তন করব আমি বলে গেলাম ।’।