এইদিন ওয়েবডেস্ক,মঙ্গলকোট(পূর্ব বর্ধমান),০৯ মে : ছেলে বিজেপির কর্মী । ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকেই সে ঘরছাড়া । এরই মাঝে ওই বিজেপি কর্মীর মায়ের দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে । ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব বর্ধমান জেলার লাখুড়িয়া অঞ্চলের আমডোব বাসস্ট্যান্ড এলাকায় । রবিবার ভোরে স্থানীয় বাসিন্দারা দেখতে পান রুনু বৈরাগ্য নামে ওই বিধবা মহিলার দোকান ঘরটি সম্পুর্ন ভস্মীভূত হয়ে গেছে । ঘটনার কথা জানাজানি হতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায় । ক্ষতিগ্রস্থ ওই মহিলার ছেলে অভিজিৎ বৈরাগ্যের অভিযোগ,বিষয়টি মঙ্গলকোট থানায় জানানো হলেও কোনও ব্যাবস্থা নেয়নি পুলিশ । এনিয়ে পুলিশের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত মহিলা ও তাঁর ছেলে । অন্যদিকে মহিলার দোকানে অগ্নিসংযোগের অভিযোগ অস্বীকার করেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ।
আমডোব গ্রাম ঢোকার মুখেই রয়েছে রুনু বৈরাগ্যদের দু’তলা পাকা বাড়ি । বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দুরে আমডোব বাসস্ট্যান্ড । সেখানে নতুনহাট-গুসকরা সড়কপথের ঠিক পাশেই রয়েছে ইঁটের দেওয়াল খড়ের ছাউনি দেওয়া রুনুদেবীর মিষ্টির দোকান । এদিন ভোরে প্রতিবেশী এক মহিলার কাছ থেকে দোকানে আগুন লাগার কথা জানতে পারেন রুনুদেবী । এরপর তিনি সেখানে গিয়ে দেখেন সম্পুর্ন ভস্মীভূত হয়ে গেছে তাঁর দোকানঘরটি ।
রুনুদেবীর অভিযোগ, ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকেই তাঁদের উপর অত্যাচার শুরু হয়েছে । সোমবার সকালে তাঁদের বাড়িতে ভাঙচুর চালায় তৃণমূলের লোকজন । বাড়ির জানালার সমস্ত কাঁচ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় । এরপর ওইদিন রাতে দোকানে লুটপাট চালায় দুষ্কৃতিদল । ছেলে প্রাণ বাঁচাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে নিরাপদ জায়গায় গিয়ে আত্মগোপন করে । বউমাকেও তাঁর বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । এরপর এদিন দেখেন দোকানে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ।
এই বিষয়ে জানতে রুনুদেবীর ছেলে অভিজিৎ বৈরাগ্যকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকেই গ্রামের বিজেপি কর্মী ও সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি হামলা ও লুটপাট চালাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতিরা । গত সোমবার আমাদের বাড়ি ও দোকানে ভাঙচুরের পাশাপাশি ওরা দোকানে লুটপাট চালিয়েছে । তারপর থেকে আমার মতো বহু বিজেপি কর্মী সমর্থক প্রাণ বাঁচাতে গোপন ঠিকানায় আশ্রয় নিয়েছেন । রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশত তৃণমূলের লোকজনই শনিবার গভীর রাতে আমাদের দোকানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলে আমাদের সন্দেহ । লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে । বিষয়টি ফোনে পুলিশকে জানিয়েছি । অথচ কোনও ব্যাবস্থা নেওয়া হয়নি ।’
জানা গেছে,লাখুড়িয়া অঞ্চলের আমডোব গ্রামের বাসিন্দা রুনু বৈরাগ্যর স্বামী ধনঞ্জয় বৈরাগ্যে বছর ত্রিশ আগে মারা যান । আমডোব বাসস্ট্যান্ডে মিষ্টির দোকান ছিল ধনঞ্জয়বাবুর । ধনঞ্জয়বাবু যখন মারা যান তখন তাঁদের একমাত্র ছেলে অভিজিতের বয়স ছিল প্রায় দেড় বছর । স্বামী মারা যাওয়ার পর দোকানের দায়িত্ব পড়ে রুনুদেবীর উপর । মাস দেড়েক আগে ছেলের বিয়ে দিয়েছেন রুনুদেবী । দোকানের আয় থেকেই মূলত তিনজনের অন্নসংস্থান হয় । বর্তমানে ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে পরিবারটি । এদিকে বিপুল পরিমান ক্ষয়ক্ষতি সামলে ফের কিভাবে ব্যাবসা শুরু করবেন এনিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছেন অসহায় ওই বিধবা মহিলা ।
অন্যদিকে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি,ওই মহিলার দোকানে কিভাবে আগুন লাগলো তা তাঁদের জানা নেই । এই ঘটনার সঙ্গে তাঁদের দলের কোনও সম্পর্ক নেই ।।