আজিজুর রহমান,গলসি(পূর্ব বর্ধমান),২৯ মে : লকডাউনে কর্মহীন অসহায় মানুষের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে কমিউনিটি কিচেন চালু করেছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার গলসির এক মুসলিম দম্পতি । জাহির আব্বাস মন্ডল ও ফজিলা বেগম নামে ওই দম্পতি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ক্ষুধার্ত্ব মানুষের একবেলার অন্নসংস্থানের ব্যবস্থা করছেন । দম্পতির ব্যক্তিগত উদ্যোগে চালু হওয়া এই কমিউনিটি কিচেন আজ “ফজিলা-জাহিরের রান্নাঘর” বলে পরিচিত এলাকায় । প্রতিদিন শতাধিক মানুষের ক্ষুধা নিবৃত্তি হচ্ছে এই রান্নাঘর থেকে । দম্পতির এই প্রকার মানবিক উদ্যোগের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন এলাকাবাসী ।
জানা গেছে,গলসির বাসিন্দা জাহির আব্বাস মন্ডল ওরফে সিপাই দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যুক্ত । তাঁর স্ত্রী ফজিলা বেগম গলসি-১ পঞ্চায়েত সমিতির পুর্ত কর্মাধ্যক্ষা ।

জাহির আব্বাস জানিয়েছেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসায় রাজ্যে আংশিক লকডাউন চলছে । চালু হয়েছে কঠোর বিধিনিষেধ । তার ফলে বহু খেটে খাওয়া মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন । তিনি খবর পান এলাকার ওই সমস্ত মানুষদের দু’বেলার খাবার পর্যন্ত জুটছে না । তাই তাঁদের সাহায্য করার জন্য তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছিলেন । কোনও প্রকার সাহায্যের প্রয়োজন হলে অসহায় মানুষগুলো যাতে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন তার জন্য তিনি নিজের মোবাইল নম্বরও দিয়েছিলেন ওই পোস্টে ।
তিনি বলেন, ‘আমার ওই পোস্ট দেখে প্রথম দিনই এলাকার ত্রিশজন মানুষ খাবারের সাহায্য চেয়ে ফোন করেন । তারপরই তাদের প্রতিদিনের খাবার যোগাতে আমাদের খামার বাড়িতে রান্নার ব্যবস্থা করি । পরে আস্তে আস্তে সংখ্যা বাড়তে থাকে । বর্তমানে একশ’র অধিক মানুষের খাবার ব্যবস্থা করা হচ্ছে । আমার স্ত্রী ও স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের সক্রিয় সহযোগিতার কারনেই আজ অভূক্ত মানুষের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে পারছি ।’
জানা গেছে, প্রতিদিন দুপুরে জাহির আব্বাসদের খামার বাড়িতে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা হচ্ছে । বসে খাওয়ানোর পাশাপাশি অসুস্থ মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌছানোর ব্যবস্থাও করা হচ্ছে । শুধু বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থাই নয় এলাকার কোভিড আক্রান্ত রোগীদের অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থার পাশাপাশি নিজেদের খরচায় স্যানিটাইজার ও মাস্ক বিলি করছেন ওই দম্পতি ।

ফজিলা বেগম বলেন, ‘এলাকার খেটে খাওয়া মানুষরা আজ খুব কষ্টে আছেন । এই দুঃসময়ে একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে বাড়িতে বসে থাকতে পারিনা । তাই তাঁদের পাশে দাঁড়াতে যথাসাধ্য চেষ্টা করছি ।’
জানা গেছে, ওই দম্পতির উদ্যোগকে সম্মান জানাতে গ্রামবাসীরাই “ফজিলা- জাহিরের রান্নাঘর” নামকরন করেন । কমিউনিটি কিচেন হলেও প্রতিদিন খাবারের মেনুতেও থাকছে বৈচিত্র । কোনদিন থাকছে মাছভাত । কোনদিন মাংস তো কোনদিন থাকছে ডিমভাতের আয়োজন । আবার কোন কোনও দিন খিচুরিরও আয়োজন করা হচ্ছে । এলাকা ছাড়িয়ে ভিন গ্রাম থেকেও বহু মানুষ “ফজিলা ও জাহির”-এর রান্নাঘর থেকে দুপুরের খাবার নিয়ে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা ।
গলসির বাসিন্দা জীবন্নেশা আনসারী,পার্শ্ববর্তী রামগোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা সন্তু দেরা বলেন,
‘আমরা খুব গরীব মানুষ । লকডাউনের পর থেকে বাড়িতে অভাব । তাই প্রতিদিন এখান থেকে খাবার নিয়ে যাচ্ছি । এখানে খাবার না পেলে খুব সমস্যার মধ্যে পড়তে হত ।’।