এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতাড়,১৫ ফেব্রুয়ারী : “বহিরাগত বিধায়ক হঠাও,ভাতাড় বাঁচাও” পোস্টার ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়াল ভাতাড় বিধানসভা এলাকায় । সোমবার সকালে ভাতাড় বাজারের একাধিক জায়গায় এই পোস্টার দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা । যদিও এই পোস্টার কারা দিয়েছে তা জানা যায়নি । তবে বিজেপি ও সিপিএমের দাবি শাসকদলের আভ্যন্তরীণ কলহের কারনেই এই পোস্টার পড়েছে । এদিকে বিধানসভা ভোট আসন্ন । তার আগে ভাতাড়ে বিধায়ক বিরোধী এই পোস্টার শাসকদলের কাছে অশনি সঙ্কেত বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল ।
সোমবার সকালে ভাতাড় বাসস্ট্যান্ড ,বিডিও অফিস সংলগ্ন এলাকায় বিধায়ক বিরোধী একাধিক পোস্টার দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা । ভাতাড় বাসস্ট্যান্ডে একটি ছোটখাটো ব্যানারও লক্ষ্য করা যায় । ওই পোস্টার ও ব্যানারে লেখা, “ভাতাড়বাসীর উন্নয়নের স্বার্থে ভূমিপুত্র বিধায়ক চাই । বহিরাগত বিধায়ক হঠাও,ভাতাড় বাঁচাও । প্রচারে : ভাতাড় বিধানসভা সাধারন নাগরিকবৃন্দ ।” এদিকে এই পোস্টার নজরে পড়তেই ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায় ।
এই বিষয়ে মতামত নেওয়ার জন্য ভাতাড়ের বিধায়ককে ফোন করা হয় । কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ না করায় তাঁর কোনও মতামত পাওয়া যায়নি । তবে ভাতাড়ের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক বনমালী হাজরা বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা ছিল না । আজ যখন ভাতাড় হাসপাতালে কাজে গিয়েছিলাম তখন কয়েকজনের মুখ থেকে ওই পোস্টারের বিষয়ে জানতে পারলাম । তবে এটা কারা করেছে তা সঠিক করে বলতে পারবো না ।’
তবে ভাতাড়ের ‘সাধারন নাগরিকবৃন্দ’ নয় বরঞ্চ তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দের জেরেই এই পোস্টার পড়েছে বলে দাবি স্থানীয় সিপিএম ও বিজেপি নেতৃত্বের । সিপিএমের ভাতাড় ব্লক কৃষক সভার সম্পাদক নজরুল হকের দাবি, ‘তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই পোস্টার পড়েছে । ওদের যার পাতে ঝোল পড়বে না সেই চেঁচাবে । যদিও এটা ওদের আভ্যন্তরীণ বিষয় । এই বিষয়ে বিশেষ মন্তব্য করা অনুচিত হবে ।’
পাশাপাশি ভাতাড় ব্লকে বিজেপির ৩৩ নম্বর জেডপি মন্ডলের সভাপতি রাজকুমার হাজরাও একই দাবি করেছেন । তিনি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আগে তৃণমূলের ৪০০-৫০০ কর্মী ওদের দলীয় বিধায়ককে ঘিরে ধরে শ্লোগান দিয়েছিল “সুভাষ তুমি ভাতাড় ছাড়ো।” পুলিশ গিয়ে বিধায়ককে উদ্ধার করে নিয়ে আসে । তাই এটা নিশ্চিত যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দের জেরেই এই পোস্টার পড়েছে ।’
জানা গেছে, ভাতাড়ে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দের পুরনো ইতিহাস রয়েছ । ২০১১ সালে নির্বাচনে বনমালী হাজরাকে প্রার্থী করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । খুব অল্প ভোটের ব্যাবধানে তিনি জিতেছিলেন । ভোটে জেতার অব্যবহিত পরেই জনপ্রিয় তৃণমূল নেতা মানগোবিন্দ অধিকারী গোষ্ঠীর সঙ্গে বিধায়ক গোষ্ঠীর বিবাদ শুরু হয় । ইতিমধ্যে ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচন এসে যায় । তখন ভাতাড়ের তৃণমূল কর্মীরা আশা করেছিলে মানগোবিন্দ অধিকারীকে টিকিট দেওয়া হবে । কিন্তু টিকিট দেওয়া হয় গুসকরা শহরের বাসিন্দা সুভাষ মন্ডলকে । স্থানীয় তৃণমূল কর্মীদের অভিযোগ, সুভাষবাবু বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর বনমালী হাজরা ও মানগোবিন্দ অধিকারীর মধ্যে দ্বন্দ্ব মেটাতে কোনও উদ্যোগই নেননি । উপরন্তু তিনি সমান্তরাল সংগঠন তৈরি করতে উঠে পড়ে লাগেন বলে অভিযোগ । এদিকে বিধায়কের এই অভিসন্ধি টের পেয়ে কাছাকাছি আসতে শুরু করেন বনমালী ও মানগোবিন্দ গোষ্ঠী । বর্তমানে এই দুই গোষ্ঠীর সঙ্গে বিধায়ক গোষ্ঠীর বিশেষ বনিবনা নেই ৷ তারই মাঝে ‘বহিরাগত বিধায়ক হঠিয়ে’ ‘ভূমিপুত্র’কে বিধায়ক করার দাবিতে পোস্টার পড়ায় অস্বস্তিতে শাসকদল । এখন এই পরিস্থিতিতে ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কাকে টিকিট দেন সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন ৷
বিজেপি নেতা রাজকুমার হাজরার দাবি, ‘বিগত দশ বছরের তৃণমূল জমানায় ভাতাড়ের কোনও উন্নয়নই হয়নি । তাই পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনে ভাতাড়ে স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাঁড়ালেও হারবেন । এখানকার মানুষ বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতে চান ।’।