জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,১৯ মে : দু’একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া আপাতত মোটামুটি নির্বিঘ্নে এই রাজ্যে শেষ হয়েছে চতুর্থ দফার লোকসভা নির্বাচন। আশা করা যায় পরবর্তী তিন দফাতেও এই শান্তি বজায় থাকবে। এই রাজ্যে ভোট মানেই খুনোখুনি, রক্তপাত। এটা শুরু হয় ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই। ভোটের দিন সেটা অনেক সময় চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং রেশ থেকে যায় ফল ঘোষণা পর্যন্ত। ২০১৯ এর লোকসভা ও ২০২১ এর বিধানসভা ভোটের পর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ভোট পরবর্তী এই ‘আফটার এফেক্ট’ হিংসাটা মারাত্মক আকার ধারণ করে। ব্যারাকপুরের বিভিন্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায় একদল দুষ্কৃতি। একই দৃশ্য অন্যান্য এলাকাতেও দেখা যায়। ভুক্তভোগী এলাকার বাসিন্দারা সেদিনের কথা ভেবে এখনো আঁতকে ওঠে।
অতিরিক্ত গরম অথবা অন্য যেকোনো কারণে এবারের ভোটের প্রচারে অতীতের উৎসাহ ও চাকচিক্য ভাবের অনেক অভাব দেখা গেছে। দল বেঁধে সেভাবে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের নিজ নিজ এলাকায় বাড়ি বাড়ি প্রচার করতে দেখা যায়নি। পাড়ার মোড়ের মাথায় চায়ের আড্ডায় উঠে আসেনি ভোট নিয়ে আলোচনা। কেমন যেন একটা ম্যাড়ম্যাড়ে ভাব। সাধারণ মানুষ কি ভোটের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে?
এবার ভোটের দিন বিভিন্ন বুথের কাছাকাছি এলাকায় কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মীদের জমায়েত বা ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য তাদের পাশে হাঁটতে দেখা যায়নি। ফলে ভোটের দিন পরিচিত হিংসাত্মক পরিবেশ প্রায় ছিলনা। ভোটের সময় দীর্ঘদিন ধরে খবরের শিরোণামে থাকা বীরভূম বা মুর্শিদাবাদেও কোনো বোমবাজি বা অশান্তি হয়নি। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত একাধিক বুথ অতি উত্তেজনা প্রবণ হিসাবে চিহ্নিত হলেও সেখান থেকেও কোনো অভিযোগ আসেনি। ভোট শেষ হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও শাসক বা বিরোধী কোনো দলের পক্ষ থেকে রিগিং, ছাপ্পা ভোট, ভোটদানে বাধা দেওয়া, বুথ থেকে দলীয় এজেন্টদের তাড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। এমনকি কোনো বুথে পুননির্বাচনের দাবিও ওঠেনি। বলা যেতেই পারে এবারের ভোট শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
আশা করা যায় এই ধরাবাহিকতা বাকি আসনগুলির ক্ষেত্রেও বজায় থাকবে। আশঙ্কা একটাই দক্ষিণের আসনগুলির ফলাফলের উপর অনেক নেতার রাজনৈতিক অস্তিত্ব নির্ভর করছে। হয়তো নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তারা কিছুটা বেপরোয়া হয়ে উঠতে পারে। তবুও সবার শুভবুদ্ধি জাগ্রত হোক এটাই সমগ্র পশ্চিমবঙ্গবাসীর একান্ত কামনা।।

