এইদিন ওয়েবডেস্ক,ভাতার(পূর্ব বর্ধমান),১২ জানুয়ারী : ‘আপনার বাড়ির মেয়েকে যখন তুলে নিয়ে গিয়ে জোর করে ধর্মান্তরিত করবে তখনও কি বলবেন মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান, হিন্দু তার নয়নমণি মুসলিম তার প্রাণ ?’ জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ভাতারে বিজেপির উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় এই কথাই বললেন অম্বিকানন্দ মহারাজ । স্বামী বিবেকানন্দের ১৫৯ তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এদিন সকালে ভাতার বাজারে মহাপ্রভু তলার কাছে একটি সভার আয়োজন করা হয় । স্থানীয় বিজেপি নেতা মহেন্দ্রনাথ কোঁয়ারের উদ্যোগে আয়োজিত ওই সভায় স্বামী বিবেকানন্দের প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও বন্দনা করেন বিজেপি কর্মীরা ।
এদিনের সভায় মূল বক্তা ছিলেন অম্বিকানন্দ মহারাজ । তিনি বলেন,’কেউ কেউ বলে আমার ধর্মকে যে বিশ্বাস করে না সে অমানুষ । যে বিশ্বাস করে না তার মুন্ডুছেদ করবো । তারা বন্দেমাতরম বলেন না,কারন ওটা নাকি কাফেরদের শব্দ । এই হল ভারতবর্ষ ! বহুত্ববাদের ভারতবর্ষ ! একই বৃন্তে দুটি কুসুম ? এই পরিনতি ও পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আজকে আমরা এগিয়ে চলছি ।’
তিনি বলেন,’আপনার বাড়ির মেয়েকে যখন তুলে নিয়ে গিয়ে জোর করে ধর্মান্তকরণ করবে তখনও কি বলবেন মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান, হিন্দু তার নয়নমণি মুসলিম তার প্রাণ ? তাই আগামী ১০০ বছর পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে বন্ধ থাকবে এই কথা । বলবেন আমি উসকানি দিয়েছি, হ্যাঁ দিয়েছি । তার কারণ পরিস্থিতি সেই দিকে এগুচ্ছে । আমাদের আবার সম্মুখ সমরের জন্য তৈরি হতে হবে । কারা বাংলাকে গ্রেটার বাংলা বানানোর চক্রান্ত করছে,তাদের যারা মদত দিচ্ছে আর তাদের হয়ে যারা চাপলুসি করছেন, তাদের বলছি অ্যায়সা দিন নাহি রহেগা ।’
এদিন রাজ্যের বর্তমান শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ও সিপিএমকে কার্যত তুলোধোনা করেন অম্বিকানন্দ মহারাজ । তিনি বলেন,’আমরা সেই বাংলায় বাস করি, যেখানে রাজা রামমোহন রায় প্রাসঙ্গিক নন । স্বামী বিবেকানন্দ প্রাসঙ্গিক নন । দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন প্রাসঙ্গিক নন । রামকৃষ্ণ পরমহংস প্রাসঙ্গিক নন । এখন বাংলায় একটাই গল্প, সব জায়গায় সেই দাঁত বের করা ছবি । আর আপনি মার খেয়ে পদানত হয়ে থাকলেই আপনি মানুষ, নচেৎ আপনি অমানুষ ।’
অম্বিকানন্দ মহারাজের বক্তব্য শুনুন
সিপিএমকে নিশানা করে অম্বিকানন্দ মহারাজ বলেন,’বিবেকানন্দকে নতুন নতুন ভাবে উপস্থাপনা করা হচ্ছে । বিগত ৩৪ বছরের শাসনকালে কাঁচা পাকা চুলের নেতারা বলেছিলেন বিবেকানন্দ সাম্যবাদী । যাকে এক সময় ওরা ভন্ড সন্ন্যাসী বলতো, আর সেই ভন্ড সন্ন্যাসীর ব্যাঙ্গ চিত্রে সারা কলকাতার রাস্তা ভরিয়ে দিত,আজ তারা বিবেকানন্দকে সাম্যবাদী প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন । তাঁর ইতিহাসকে বিকৃত করেছেন । এরাই এক সময় সুভাস বোসকে তোজোর কুকুর বলে ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছিল । এরা ভারতের খায়,ভারতের পড়ে, ভারতের মধ্যে থাকে,ভারতের নিয়ে বড়বড় কথা বলে কিন্তু চীনের চেয়ারম্যান ওদের চেয়ারম্যান হয়ে যায় । তাদের কাছ থেকে শুনতে হবে স্বামী বিবেকানন্দের কথা ? তাদের কাছ থেকে হবে দেশের অসহিষ্ণুতার কথা ? ভিয়েতনাম ওদের দেশ হয়ে যায়, তখন ভারতের কথা মনে পড়েনা । তাদের কাছ থেকে শিখতে হবে দেশ কিভাবে তৈরি হয় ? কতকগুলো অসভ্য,বর্বর । ওরা বিবেকানন্দের থেকে সুরাবর্দিকে বড় নেতা মনে করেন ।’
সিপিএমের উদ্দেশ্যে তাঁর প্রশ্ন,’সেই ১৯৪৬ সালে কলকাতায় কারা কারা শ্লোগান দিয়েছিলেন ‘মুখ মে লেকর বিড়ি-পান,লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’ ? আজকে সেই বিচ্ছিন্নতাবাদের গন্ধ পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি প্রান্ত থেকে পাওয়া যাচ্ছে । এক বিচ্ছিন্নতাবাদী চক্রান্ত । এই ভাতার এলাকাতেও অনেক জায়গায় হচ্ছে,সব খবরই পাই ।’
তিনি বলেন,’সমস্ত অত্যাচার, নিপীড়নের শিকার আমরা বাঙালি হিন্দু আজ স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন পালন করছি । ধিক্কার আমাদের,লজ্জা পাওয়া দরকার আমাদের । যে মানুষটা নিজের ধর্ম ও দেশের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন,আর আমরা এই একটা দিন ছাড়া বছরের ৩৬৪ দিন ধরে মেতে আছি কূপমন্ডুকতা, সমালোচনা আর পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতিতে । ইদানিং একটা প্রচার শুরু হয়েছে । দেশে একটা রাষ্ট্রবাদী সরকার চলছে, তারা সনাতন ধর্মের কথা বলছে,অন্যদিকে তখন কিছু মানুষের ভাতের দরকার পড়ে গেছে । হাসপাতালের দরকার পড়ে গেছে ।’
এদিন বিজেপির পাশাপাশি আরএসএসের উদ্যোগে জাতীয় যুব দিবস উদযাপন করা হয় । এদিন সকালে আরএসএসের তরফ থেকে ভাতার বাজারের মহাপ্রভু তলা থেকে একটি বাইক র্যালি বের করায় । র্যালিটি বলগোনা-গুসকরা রোড ধরে গুসকরা হয়ে পুনরায় একই পথে মহাপ্রভু তলায় এসে শেষ হয় । অন্যদিকে বিজেপির উদ্যোগে এদিন বিনামূল্যে চক্ষু ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা শিবিরেরও আয়োজন করা হয়েছিল ।।