অখন্ড ভারত বা অবিভক্ত ভারত হল একটি ঐক্যবদ্ধ বৃহত্তর ভারতের ধারণা । হিন্দুত্ববাদীরা দাবি করে যে আধুনিক আফগানিস্তান , বাংলাদেশ , ভুটান , ভারত , মালদ্বীপ , মায়ানমার , নেপাল , পাকিস্তান , শ্রীলঙ্কা এবং তিব্বত এক সময়ে এক জাতি ছিল । তারা ফের এক জাতি গঠনের কথা বলে । কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপির নেতাদের মুখে বারবার পাকিস্তান অধিকৃত জম্মু-কাশ্মীরকে অন্তর্ভুক্তির কথা শোনা যায় । কিন্তু এদিকে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলে উপত্যকার বিচ্ছিন্নতাবাদী ইসলামি নেতারা । পাঞ্জাবকে পৃথক খালিস্থান গড়ার কথা বলছে খালিস্তানি বিচ্ছন্নতাবাদীরা । তামিলনাড়ুকে দ্রাবিড় রাষ্ট গঠনের কথা ওঠে মাঝে মধ্যে । মনিপুরসহ উত্তর পূর্বের রাজ্যেও দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নতাবাদ মাথা চাড়া দিচ্ছে । অখন্ড ভারতের স্বপ্ন দেখা সরকারের ভারতকে ফের খন্ডিত হওয়া থেকে বাঁচাতে আদপেই কি কোনো পরিকল্পনা আছে ?
কাশ্মীর যে সব সময় ভারতের কাছে থাকবে তা নিশ্চিত করার জন্য ভারত সরকার কী করছে ? বড় জোড় আগামীকাল কাশ্মীরি পণ্ডিতদেরকে তাদের জমি জায়গা ফিরিয়ে দেওয়া হবে । কিন্তু কাশ্মীরি পণ্ডিতদের উচ্ছেদের পর যে জনবিন্যাসের আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে সেনিয়ে সুস্পষ্ট কোনো পরিকল্পনা আছে সরকারের ? উত্তর পূর্বও হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে ৷ কিন্তু উত্তর পূর্ব যাতে সর্বদা ভারতের সাথে থাকে তা নিশ্চিত করার কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই।
অন্যদিকে যদি ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে দেখা যায় তাহলে তারা গাজা নিয়ে পরিকল্পনা মাফিক এগিয়ে যাচ্ছে । পশ্চিম তীর যাতে সর্বদা ইসরায়েলের সাথে থাকে তার জন্য জনবিন্যাসের পরিবর্তন করার জন্য সবকিছু করছে । বিশ্বের যেকোন কোণ থেকে ইহুদিদের তুলে নিয়ে এসে পশ্চিম তীরে বসতি গড়ছে ইসরায়েল । চীনেরও একটি পরিকল্পনা রয়েছে যে মুসলিম অধ্যুষিত জিনজিয়াং প্রদেশ যাতে সর্বদা চীনের সাথে থাকে এবং কেবল তারা এনিয়ে মৌখিক বিবৃতি দিয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকেনা,বরঞ্চ রীতিমতো পরিকল্পনা মাফিক কাজ করে চলেছে শি জিংপিং সরকার ।
একইভাবে পাকিস্তানকে সম্পূর্ণ অমুসলিম শূন্য করার জন্য হিন্দুদের নির্মূল করা হয়েছে এবং সংবিধানে এই বিধানটিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যে একজন অমুসলিম রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী হতে পারবেন না । একই কথা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও । শুধুমাত্র একজন মুসলিমই রাষ্ট্রনায়ক হতে পারে এই বিধানটি অন্তর্বর্তী সরকার বা পরবর্তী সরকার স্থাপন করতে পারে । বাংলাদেশ সরকার এবং ইসলামি কট্টরপন্থী দলগুলি জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলাদেশের বাকি অংশকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের মত গঠন বন্ধ করতে পারে ।
আমেরিকা, যা সারা বিশ্বে ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থার পক্ষে, তারা জনসংখ্যার পরিবর্তনকে আরও ভালভাবে বোঝে, সে কারণেই এটি বিদেশের যে কোনও কোণে কাজ করা মিশনারিদের সমর্থন করে এবং কখনও কখনও তাদের অর্থায়ন এবং তাদের পক্ষে আওয়াজ তোলার মতো কাজও করে। আমেরিকার সহযোগিতায় ইন্দোনেশিয়া অর্থাৎ ইসলামিক দেশ পূর্ব তিমুরে অল্প সময়ের মধ্যে জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে, যা নিজের মধ্যেই বিস্ময়কর। কারণ এটা বিশ্বাস করা হয় যে একটি ইসলামিক দেশে জনসংখ্যাগত পরিবর্তনকে বাদ দিয়ে, এমনকি কিছু লোকের ধর্মান্তরিত হওয়াও দূরের স্বপ্ন। সেখানে, আমেরিকা গোপনে একজন সরকারী কর্মকর্তাকে তার ধর্মপ্রচারকদের সাথে পাঠায় এবং এলাকাটিকে ধর্মান্তরিত করে এবং একটি পৃথক স্বাধীন দেশ হিসাবে ঘোষণা করে।
একইভাবে, সেন্ট মার্টিনস আয়ারল্যান্ড সম্পর্কে যা বলা হয় তা বাংলাদেশের তুলনায় ভারতের সাথে বেশি সত্য হতে পারে, কারণ ভারতের উত্তর-পূর্বে বাংলাদেশের চেয়ে বেশি জনসংখ্যা রয়েছে।নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয় সম্পূর্ণ খ্রিস্টান রাজ্যে পরিণত হয়েছে, মণিপুরে সমতা আছে, কিন্তু মিশনারিদের অর্থশক্তির আগে হিন্দুরা কতদিন টিকে থাকবে এবং তারপর সিকিম, ত্রিপুরা এবং অরুণাচলও অপেক্ষার তালিকায় রয়েছে… কিছুটা অসুবিধা হতে চলেছে আসামেও ।
এটি একটি বিষয়ও প্রমাণ করে যে, যে রাজ্যে হিন্দু-মুসলিম উত্তেজনা চরমে, সেখানে খ্রিস্টান ধর্মান্তর করা খুবই কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়ায়। যে রাজ্যগুলিতে হিন্দু-মুসলিম উত্তেজনা নেই এবং ধর্মনিরপেক্ষতার চাষ করা হয়, সেখানে খ্রিস্টান ধর্মান্তরের একটি বিশাল ঢেউ ওঠে । এই কারণেই আসামে খ্রিস্টান ধর্মান্তর সফল হচ্ছে না, যেখানে হিন্দু-মুসলিম উত্তেজনা রয়েছে, কিন্তু তারা নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয়, সিকিম, ত্রিপুরা, অরুণাচল, মণিপুরেও অভূতপূর্ব সাফল্য পাচ্ছে, কারণ সেখানে বিরোধিতা রয়েছে। সেখানে খ্রিস্টান কোকি সম্প্রদায় রয়েছে।
একইভাবে, উত্তর ভারতে, হিন্দু-মুসলিম উত্তেজনাপূর্ণ রাজ্যে, খ্রিস্টান মিশনারিরা প্রত্যাশিত সাফল্য পাচ্ছে না, যেখানে পাঞ্জাবে মুসলমানদের নিয়ে টানাপোড়েন নেই, একইভাবে দক্ষিণ ভারতে তারা অভূতপূর্ব সাফল্য পাচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতা ব্যাপকভাবে বেড়ে উঠছে তাই খ্রিস্টান সেখানেও সাফল্য পাচ্ছে । বাকি দুটি মুসলিম দেশ ভাগ করার পর খ্রিস্টান দেশও প্রস্তুত, আমরা কিছু সময়ের জন্য এটি বন্ধ করতে পারি, এটি চিরতরে বন্ধ করার কোনও সঠিক পরিকল্পনা ভারতের শাসকদের নেই।
ইসরায়েলও জনসংখ্যা পরিবর্তন করে ইহুদি রাষ্ট পেয়েছে… একইভাবে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ নামের দুটি দেশ জনসংখ্যা পরিবর্তন করে ইসলামিক রাষ্ট পেয়েছে । স্পেনের খ্রিস্টানরা এতদূর এসেছে কারণ তারা জনসংখ্যার পরিবর্তনের বাস্তবতা বুঝতে পেরেছিল এবং যীশু মূসা সমগ্র বিশ্বে জনসংখ্যাগত পরিবর্তন এনেছেন কারণ তিনি জানেন যে এই জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের মধ্যেই তার শক্তি লুকিয়ে আছে। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে একটি দেশকে অস্থিতিশীল করা যায় বা একটি দেশকে সহজেই দখল করা যায় বা টুকরো টুকরো করা যায় এবং এই পরিবর্তনের ভিত্তিতে দেশটিকে অন্য কোথাও থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় । যেটা ভারতের উপর প্রয়োগ করছে খ্রিস্টান ও ইসলামি রাষ্ট্রগুলি । এমতবস্থায় ভারতকে টুকরো টুকরো হতে বাঁচানোর রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছে দেশের হিন্দুদের তথাকথিত মেকি ধর্মনিরপেক্ষতা ।।