দিব্যেন্দু রায়,আউশগ্রাম(পূর্ব বর্ধমান),০৯ নভেম্বর : পূর্ব বর্ধমান জেলার আউশগ্রামের রামনগর অঞ্চলের পাণ্ডুক গ্রামে পাণ্ডুরাজার ঢিবিতে খনন কার্য চালিয়ে উদ্ধার হয়েছিল প্রাগৈতিহাসিক যুগের বহু নিদর্শন । সেগুলি বর্তমানে পুরাতত্ত্ব বিভাগের সংগ্রহশালায় রক্ষিত রয়েছে । কিন্তু এখনও হাজার হাজার বছরের প্রাচীন অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মাটি চাপা পড়ে আছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের । অথচ এনিয়ে পুরাতত্ত্ব বিভাগের বিশেষ আগ্রহই নেই বলে অভিযোগ । ফলে নিত্যান্ত অবহেলায় পড়ে রয়েছে এমনই এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গা । ক্রমশ পরিনত হয়েছে গোচারণ ভূমিতে । এদিকে ওই এলাকার উপর শ্যেণ দৃষ্টি রয়েছে পূরাতত্ব সামগ্রী পাচারচক্রের । তাই পাণ্ডুরাজার ঢিবিকে কেন্দ্র করে একটি সংগ্রহশালা গড়ে তোলার দাবি উঠছে । ‘পাণ্ডুরাজা প্রত্ন গবেষণা কেন্দ্র’-এর পক্ষ থেকে এনিয়ে এলাকায় প্রচারও শুরু হয়ে গেছে ।
আউশগ্রাম ব্লকের রামনগর অঞ্চলের পাণ্ডুক গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে অজয় নদ । আর অজয় নদের দক্ষিণ দিকে কিছুটা দুরেই রয়েছে প্রাচীন পাণ্ডুরাজার ঢিবি । এটিই পশ্চিমবঙ্গে আবিষ্কৃত প্রথম ক্যালকোলিথিক বা তাম্রযুগীয় প্রত্নক্ষেত্র । পাণ্ডু রাজার ঢিবির প্রধান ধ্বংসস্তুপটির সঙ্গে মহাভারতের রাজা পাণ্ডুর নামের যোগসূত্র পাওয়া যায় । নাম ঢিবি হলে আসলে একটি বিশাল ডাঙ্গা । ১৯৬২ সাল থেকে শুরু করে কয়েক দফায় পাণ্ডু রাজার ঢিবিতে খননকার্য চালিয়েছিল ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগ । সর্ব শেষ খননকার্য চালানো হয় ১৯৮৫ সালে । উদ্ধার হয় প্রাচীন নরকঙ্কালসহ বহু তাম্রযুগীয় সভ্যতার নিদর্শন ।
স্থানীয় বাসিন্দা তথা পাণ্ডুরাজা প্রত্ন গবেষণা কেন্দ্রের সম্পাদক রাধামাধব মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের এলাকার প্রাচীন ঐতিহ্য অবহেলার শিকার । একে চাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে । এলাকাটা তারাকাঁটা দিয়ে ঘিরে দিয়েই দায় সেরেছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ । যদিও বর্তমানে সীমানার অনেক খুঁটি ভেঙে পড়েছে । আগাছায় ভর্তি পাণ্ডু রাজার ঢিবি এখন গোচারণ ভূমিতে পরিনত হয়েছে । এমনকি মাঝে মাঝে পুরাতাত্ত্বিক সামগ্রী চুরিরও চেষ্টা চলছে । তাই আমরা চাই এই এলাকায় ফের খননকাজ চালানো হোক । উদ্ধার করা হোক প্রাচীন নিদর্শনগুলি । সেগুলি দিয়ে গড়ে তোলা হোক একটি সংগ্রহশালা । পর্যটকদের দেখার সুযোগ করে দেওয়া হোক। এনিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরে কাছে আবেদনও জানানো হয়েছে । যদি দাবি পূরণ না হয় তাহলে হলে আমরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব ।’
এই প্রসঙ্গে গঙ্গাধর দাস নামে পান্ডুরাজার ঢিবির দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিক বলেন,’স্থানীয়দের দাবির কথা উর্দ্ধতন বিভাগের কাছে জানানো হবে। তারপর ওনারা যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নেবেন ।’।