প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৮ মে : ’ইয়াসের’ প্রভাবে ১২৫ কোটি টাকারও বেশী মূল্যের ফসলের ক্ষতি সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে রাজ্যের শস্যগোলা বলে পরিচিত পূর্ব বর্ধমান জেলায়। এমনটাই প্রাথমিক হিসাব কৃষি দপ্তরের। এছাড়াও জেলায় ১৭৫ টি বাড়ির যেমন ক্ষতি হয়েছে তেমনই বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থারও কোটি টাকার বেশী ক্ষতি হয়েছে । শুরু হয়েছে ক্ষতি সংক্রান্ত রিপোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো । “ইয়াস’এর প্রভাবে হওয়া ঝড় বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি পর্যালোচনা নিয়ে শুক্রবার জেলা পর্যায়ের বৈঠক হয়। সেইবৈঠকে রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ ছাড়াও ,জেলাশাসক প্রিয়াঙ্কা সিংলা ,
জেলাপরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধারা , সহ সভাধীপতি দেবু টুডু ছাড়াও জেলার অন্য সব বিধায়ক ও বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন।বৈঠকে ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় ।
কৃষি দপ্তর সূত্রে এদিন জানা গিয়েছে ,জেলায় কমবেশী ২৫ হাজার হেক্টরের মত জমিতে , তিল চাষ হয় । বৃষ্টিতে তার মধ্যে ১২৮৯৮ হেক্টর জমির তিল নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।এছাড়াও ৩৭৩ হেক্টর আখ ও ৭১৪২ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন আনাজ নষ্ট হয়েছে। উপ-কৃষি অধিকর্তা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন,“ মূলত টানা বৃষ্টিই ফসলের ক্ষতি করে গেল। কৃষি দপ্তরের প্রাথমিক হিসাব সব মিলিয়ে জেলায় ১২৫ কোটি ৭৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকার ফসল ক্ষতির মুখে পড়েছে ।বৃষ্টি থেমে গেলে ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব সম্পূর্ণ করেফেলা হবে।
প্রশাসন সূত্রে খবর ,’ইয়াস’ এর প্রভাব
মূলত পড়েছে জেলায় বর্ধমান ১,গলসি ১, মেমারি ২, রায়না ২,পূর্বস্থলী ১ ও ২ -সহ আটটি ব্লকে।‘ইয়াস’ বা তার পরবর্তী প্রভাবে জেলায় ১৫ হাজারের মত মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কৃষি ও সেচ দফতর সূত্রে খবর গোটা জেলার মধ্যে জামালপুর ও মেমারি ব্লকে বৃষ্টিপাত সবথেকে বেশী হয়েছে ।
দুর্যোগের দিন জামালপুরে ১২৬ মিলিমিটার ও মেমারিতে ১০৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে । এছাড়াও বর্ধমানের কানাইনাটশালে ৪৬ মিলিমিটার, ইদিলপুরে ৪২ মিলিমিটার, সেহারাতে ৩৩ মিলিমিটার, কাটোয়াতে ২৬ মিলিমিটার, বলগোনায় ৬৫ মিলিমিটার, মাঝেরগ্রামে ৩৬ মিলিমিটার, মঙ্গলকোটে ৬১ মিলিমিটার ও কালনাতে ৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে ।সেচ দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে ,জেলার নদীগুলিতে জল বাড়লেও জল এখন বিপদসীমার অনেকটা নীচে দিয়েই বইছে। প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে ,ঘূর্ণিঝড়ের জন্যে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার ১কোটি ৬০ লক্ষ টাকার মত ক্ষতি হয়েছে ।
ঘূর্ণিঝড়ের জন্যে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থারও অনেকটা ক্ষতি হয়েছে । ক্ষতি হয়েছে ১৪১ টি
বিদ্যুৎতের খুঁটি ,১৩০ টি মতো ট্রান্সফরমার সহ অন্য বেশ কিছু বৈদুতিক সরঞ্জাম । যার আনুমানিক মূল্য ১কোটি ৬০ লক্ষ টাকার মত বলে প্রশাসন সূত্রে খবর মিলেছে ।
মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন,“কোন ক্ষেত্রে কি ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে তা তা সরকারী ভাবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে । এই বিষয়ে প্রতিটি ব্লকে নির্দিষ্ট কমিটি করা হয়েছে । যারা ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করবেন তাঁদের আবেদন খতিয়ে দেখা হবে ।যারা ক্ষতিপূর্ণ পাবার জন্যে বিবেচিত হবেন তাঁডের এ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকে যাবে । একই সঙ্গে মন্ত্রী জানান ,সরকারী সহায়ক মূল্যে ধান কেনার কাজ শিঘ্র শুরু হবে । যাবা ইতিমধ্যে নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন,
তাঁদের ধান নেওয়া হবে । তা রাইসমিল গুলিকে জানানো হয়ে গিয়েছে’ । অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অনির্বাণ কোলে জানিয়েছেন, “বিভিন্ন দফতর ও ব্লক থেকে ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট জমা পড়ছে। সেই রিপোর্ট রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হচ্ছে। সরকারের নির্দেশ এলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।’।