এইদিন ওয়েবডেস্ক,সন্দেশখালি,২১ ফেব্রুয়ারী : উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালিতে তৃণমূল কংগ্রেসের কুখ্যাত নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে রেশন দুর্নীতি মামলায় অভিযানে গেলে ইডির আধিকারিকদের বেদম মারধর করে দুর্বৃত্তরা । শেষে তারা পালিয়ে প্রাণ বাঁচান৷ তখন থেকেই বেপাত্তা শাহজাহান । যদিও আজ পর্যন্ত শাহজাহানকে গ্রেফতার করতে পারিনি পুলিশ । ওই ঘটনার পর থেকেই জাতীয় ও রাজ্য রাজ্যের সংবাদমাধ্যমিকগুলির শিরোনামে রয়েছে সন্দেশখালি । শাহজাহান এবং তার দুই ডান হাত শিবু হাজরা ও উত্তম সর্দারের মারাত্মক সব অপরাধ একের পর এক ফাঁস হচ্ছে । সন্দেশখালি মহিলাদের অভিযোগ যে এলাকার সুন্দরী মহিলাদের গভীর রাতে পার্টি অফিসে ডেকে ধর্ষণ ও গণধর্ষণ করত শাহজাহানের বাহিনী । যদিও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কথায়, সন্দেশখালীর ‘ঘটনা ঘটানো হয়েছে ।’ তিনি মূলত বিজেপির দিকে আঙুল তুলে দাবি করেছেন যে সন্দেশখালিতে তারা ‘আগুন লাগানোর চেষ্টা করছে’ ।
দিন দুয়েক আগে বীরভূমের সিউড়ির জনসভায় মুখ্যমন্ত্রীর মমতা ব্যানার্জির বক্তব্যের ক্লিপিং সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেছেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় । পাশাপাশি সংবাদ মাধ্যমের ক্যামেরার সামনে এক নির্যাতিতার বয়ানও তিনি পোস্ট করেছেন । নির্যাতিত স্পষ্ট বলেছেন যে তৃণমূলের দুর্বৃত্তরা তাদের বাড়িতে ঢুকে তাকে ধর্ষণ বা গণধর্ষণের চেষ্টা করেছিল । কিন্তু বাধা পেয়ে তারা তাকে বেদম মারধর করে । মহিলার আরো অভিযোগ যে তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গিয়েছিলেন কিন্তু তার অভিযোগ নেয়নি পুলিশ । বিজেপি সাংসদ লকেট চ্যাটার্জি ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন,’মমতার নির্দেশে ধর্ষকদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করছে চটি চাটা প্রশাসন ।’
রাজ্য পুলিশের ভূমিকাকে প্রশ্ন চিহ্নের মুখে তুলে দিয়েছে রিপাবলিক বাংলার সাংবাদিক সন্তু পানের গ্রেফতারির পর । সন্দেশখালিতে জাতীয় মহিলা কমিশনের সরজমিনের তদন্তের সময় খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন সন্তু । আর তখনই তাকে গ্রেফতারির কথা বলে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যায় পুলিশ ।
সাংবাদিককে গ্রেফতারির প্রতিবাদে পরের দিন ‘ব্ল্যাক ডে’ পালন করেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী । সন্তু পানকে পরেরদিন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তিনি মারাত্মক সব অভিযোগ তুলেছেন ।
সন্তু পান অভিযোগ করেন যে পুলিশ তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করেছে । জোর করে অ্যারেস্ট মেমোতে স্বাক্ষর করিয়েছে । টোটোতে চাপিয়ে সন্তু পানকে তিন পুলিশ কর্মী নিয়ে যাওয়ার সময় চিৎকার করে তাকে বলতে শোনা যায়,’গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে । গোটা বাংলার মানুষ জানতে চায় হচ্ছেটা কি! বাংলার মানুষ দেখুন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে । বাংলার বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সন্তু পান প্রশ্ন করেছে, তাই গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে । আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে । আমাকে জোর করে তিনবার অ্যারেস্ট মেমোতে সই করানো হয়েছে । আমাকে অ্যারেস্ট মেমো দেখতে পর্যন্ত দেওয়া হয়নি । আমরা চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করেছিলাম । বাংলার মানুষ দেখুন যে সন্তু পাল আপনাদের হয়ে কথা বলে সেই সন্তু পান কে গ্রেপ্তার করেছে সন্দেশখালি থানার পুলিশ । সন্দেশখালীর মা-বোনেদের সুরক্ষা দিতে পারেনা আর একজন সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে সন্দেশখালি থানার পুলিশ । আমাকে অত্যাচার করা হয়েছে । গোটা বাংলার মানুষ দেখুন । হচ্ছেটা কি গণতন্ত্র নিয়ে ?’
সাংবাদিককে একটা টোটো করে চাপিয়ে ফেরিঘাটে নিয়ে যায় পুলিশ কর্মীরা । তারপর লঞ্চে চাপিয়ে তাকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে নিয়ে যাওয়া হয় । যদিও লঞ্চে অন্য সাংবাদিকদেরকে উঠতে দেওয়া হয়নি ।’
সন্তু পানকে নিয়ে যাওয়ার ভিডিওটি নিজের এক্স হ্যান্ডেলের শেয়ার করেছেন বিজেপি নেত্রী কেয়া ঘোষ । সন্দেশখালীর ঘটনায় মঙ্গলবার হাইকোর্টে রাজ্য সরকার ও পুলিশকে তিরস্কারের মুখে পড়তে হয়েছে । আদালত শেখ শাহজাহান এখনো কেন গ্রেপ্তার হলো না তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ।।