এইদিন ওয়েবডেস্ক,কাটোয়া(পূর্ব বর্ধমান),২৭ আগস্ট : তালিবানদের হাত থেকে কোনও রকমে বেঁচে বাড়ি ফিরলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া থানার গাঁফুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা চন্দন নন্দী । দিন পাঁচেক আগে তিনি দিল্লি বিমানবন্দরে নামেন । তারপর ক’টা দিন সেখানে এক বন্ধুর বাড়িতে কাটিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে তিনি গ্রামে ফেরেন । বাড়ি ফেরার পর খুশিতে মেতে ওঠেন চন্দনবাবুর পরিবারের সদস্যরা ।আফগানিস্তানে ডেনমার্ক ও নরওয়ের দূতাবাসে নিরাপত্তারক্ষীদের সুপারভাইজার পদে চাকরি করতেন চন্দনবাবু । তবে তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আর আফগানিস্তান মুখো হবেন না । চন্দনবাবু বলেন, ‘মাস দুয়েক আমি পরিবারের সঙ্গে কাটাবো। তারপর পশ্চিমবঙ্গের মধ্যেই কিছু একটা কাজের সন্ধান করবো । আর আফগানিস্তান যাবো না ।’
গাঁফুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা চন্দন নন্দীর বাড়িতে রয়েছেন বাবা লক্ষীকান্ত নন্দী,মা মঞ্জুদেবী,স্ত্রী রিয়াদেবী ও চন্দনবাবুর পাঁচবছরের সন্তান রেয়ন । লক্ষীকান্তবাবু বাড়িতে মুদিখানা দোকান চালান । নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার । ২০১৬ সালে একটি বৃটিশ সংস্থার অধীনে নিরাপত্তারক্ষীদের সুপারভাইজারের চাকরি পান চন্দনবাবু । কর্মস্থল ছিল আফগানিস্তানের ডেনমার্ক ও নরওয়ের দূতাবাস ।
তালিবানদের আফগানিস্তান দখলের দিনটির কথা বলতে গিয়ে কার্যত শিউরে ওঠেন চন্দনবাবু । তিনি বলেন, ‘দিনটা ছিল ১২ ই আগস্ট । সারাদিন ডিউটি শেষে রাতে খাওয়া দাওয়া করে নিজের আবাসনে ঘুমতে চলে যায় । তখন গভীর রাত । আমি ঘুমে আচ্ছন্ন । সঙ্গীসাথীরা ডাকাডাকি করে আমায় ঘুম থেকে তোলে । তারা জানায় তালিবান ঢুকে গেছে । তার কিছুক্ষণ পরেই দেখতে পাই দূতাবাসের অফিসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে তালিবানরা । এদিকে তার আগেই অফিসের বেশ কয়েকজন দূতাবাস ছেড়ে চলে যান । আমরা প্রায় ৯০ জনের মত থেকে যাই । তবে বাইরে বের না হওয়ার জন্য অফিস থেকে আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয় । আমরা সেই নির্দেশ মেনে চলি ।’
তিনি বলেন, ‘ওই রাতটা জেগেই কাটিয়ে দিই । পরে দিনরাত আবাসনেই থেকে যাই । এরপর ১৪ আগষ্ট আমাদের আবাসনে আসে তালিবানের দলবল । হাতে সব অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র । হাড় হিম করা অভিজ্ঞতা । তাদের নির্দেশে আমি আবাসনের গেটের তালা খুলে দিই । ওরা আমাদের পাসপোর্ট পরীক্ষা করে দেখে । পাশাপাশি আশ্বস্ত করে আমরা যাতে আতঙ্কিত না হই । কিন্তু ওদের উপর ভরসা হচ্ছিল না । প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা সর্বদা থেকেই যাচ্ছিল । কেবল সুযোগ খুঁজছিলাম কিভাবে বিমানবন্দরে যাওয়া যায় । অবশেষে ১৭ আগস্ট একটি ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া করে আবাসন ছেড়ে বিমানবন্দরে উদ্দেশ্যে রওনা হই ।’
তিনি বলেন, ‘রাস্তায় ৩ বার আমাদের আটকে পড়তে হয় । প্রতিটা মুহুর্ত কাটে চরম উৎকন্ঠার মধ্যে । শেষে ২০ তারিখ রাতে কোনও রকমে বিমানবন্দরে এসে পৌঁছোই । বিমানে ছাড়ার পর তবে কিছুটা আস্বস্ত হই ।’ তিনি জানান আবাসন থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত যাত্রাপথের মধ্যে দূতাবাসের আধিকারিকরা নিয়মিত ফোন করে তাঁদের আশ্বস্ত করে গিয়েছেন । চন্দনবাবু বলেন, ‘আমার যে কয়েকজন আফগান সহকর্মী ও বন্ধু ছিলেন তার সপরিবারে ডেনমার্ক চলে গিয়েছেন । ওদের সঙ্গে আমার ফোনে যোগাযোগ হয় ।ওরা খুব ভালো আছেন । ওরাও আর আফগানিস্তান ফিরতে চাননা বলে জানিয়েছেন ।’।