এইদিন ওয়েবডেস্ক,সিলেট,১০ মার্চ : বাংলাদেশের সিলেটের ওসমানীনগরে দিপা রানী সিংহ (১৪) নামের অষ্টম শ্রেণির এক হিন্দু ছাত্রীর রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায় । বৃহস্পতিবার ভোরে উপজেলার তাজপুর বাজারে স্কুল রোডে তাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অরুনোদয় পাল ঝলকের নির্মাণাধীন একতলা ভবনের ছাদে তার মৃতদেহটি পাওয়া যায় । দিপা কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার তলাগ্রামের পীযুষ চন্দ্র সিংহের মেয়ে এবং তাজপুর মঙ্গলচন্ডি নিশিকান্ত সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল । বিগত দু’বছর ধরে স্কুল রোডের দুলিয়ারবন্দ এলাকার চেয়ারম্যান ঝলকের মালিকানাধীন বহুতল ভবনের চারতলায় বসবাস করছিল দীপার পরিবার ।বৃহস্পতিবার ওসমানীনগর থানা পুলিশ খবর পেয়ে সকাল ৯ টার দিকে কিশোরীর মৃতদেহটি উদ্ধার করে নিয়ে যায় । পরে ময়নাতদন্তের জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃতদেহটি পাঠায় পুলিশ ।
নিহত দিপার মামী বিথিকা দে বলেন,বৃহস্পতিবার দিপা মারা যাওয়ার বিষয়টি জানার পর বালাগঞ্জ থেকে তাদের বাড়িতে আসার আগে জানতে পারি দিপা ইমন নামের একটি ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল । বালাগঞ্জে গিয়ে ইমনের সাথে সে একাধিকবার সাথে দেখাও করেছিল বলে জানতে পারছি এখন । এছাড়াও বালাগঞ্জের আরেকটি ছেলেও নাকি দিপাকে পছন্দ করত । এনিয়ে ইমন ও সেই ছেলেটির মধ্যে দিপাকে নিয়ে ঝগড়ারও হয়েছে ।’ তাঁর সন্দেহ দুই মুসলিম যুবকের সাথে ত্রিকোণ প্রেমের সম্পর্কের জেরেই দীপার এই মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছে । এদিকে ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিহত দিপার কথিত প্রেমিক বালাগঞ্জের মুসলিম যুবক ইমনকে আটক করেছে পুলিশ ।
মিডিয়া রিপোর্টে জানা গেছে,দিপা সিংহ প্রতিদিন স্কুল যাবার নাম করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে কয়েকজন বন্ধবীকে সাথে নিয়ে তার কথিত প্রেমিক বালাগঞ্জ উপজেলার মধ্যবাজারের প্রান্ত বস্ত্রালয়ের কর্মচারী ইমনের সাথে দেখা করত । দিপার স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বিগত দু’মাসে বেশীর ভাগ দিনই সে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিল । চলতি মাসে এযাবৎ মাত্র এক দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিল দিপা ।
মৃতের পরিবার সূত্রে খবর,বুধবার রাতের খাবার খেয়ে বাবা পীযুষ চন্দ্র সিংহের সাথে একই ঘরে ঘুমতে চলে যায় দিপা । কিন্তু বৃহস্পতিবার ভোর ৫ টা নাগাদ পিতা পীযুষবাবুর ভেঙে গেলে দেখেন মেয়ে পাশে নেই । ফ্লাটের প্রধান গেট খোলা । মা ও দাদার মোবাইল এবং ঘরের চাবি নির্দিষ্টস্থানে নেই । কাপড় পাল্টিয়ে নতুন পোশাক পরে দিপা কোথায় যেন চলে গেছে । এরপর পীযুষবাবুরা খোঁজাখুঁজি শুরু করলে আবাসনের পাশের একতলা নির্মাণাধীন একটি ভবনের ছাদে দিপার রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন । পরিবারের লোকজন দিপাকে উদ্ধার করে স্থানীয় প্যারাডাইস মেডিকেলে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন । দিপার মাথায় গুরুতর আঘাতের চিহ্ন এবং পিটের একাংশ থেঁতলানো ছিল বলে জানা গেছে ।
নিহত কিশোরীর মা শিল্পী রানী সিংহ বলেন, আমাদের কোনো শত্রু নেই। আজ দিপা মারা যাবার পর জানতে পারছি তার সাথে ইমন নামের একটি ছেলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল । গত সোমবার জানতে পারি দিপা স্কুলে দীর্ঘ দিন অনুপস্থিত । এনিয়ে দিপাকে অনেক বোঝানো হয় এবং স্কুলে অনুপস্থিত থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করি । কিন্তু সে কোনো কথাই আমাদের কাছে কবুল করেনি ।’ তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েকে কে বা কারা হত্যা করেছে এটা পরিস্কার । আমি চাই ঘটনার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমুলক শান্তির ব্যবস্থা করা হোক ।’ ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি এসএম মাঈন উদ্দিন জানান, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ।।