প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,০৮ আগস্ট : বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতির সাথে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে আছে তাঁত শিল্প।বাংলার সেই তাঁত শিল্প এবার জাতীয় স্তরেও কুড়োলো সুনাম ও খ্যাত। কটন-খাদির নজরকাড়া জামদানি শাড়ি বুনে বুধবার জাতীয় তাঁত দিবসে জাতীয় তাঁত পুরস্কার পেলেন বাংলার পূর্বস্থলির তাঁতি খয়েরউদ্দিন শেখ।এদিন দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে বস্ত্রমন্ত্রকের এই পুরস্কার খয়েরউদ্দিন শেখের হাতে তুলে দেন দেশের উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়। অনুষ্ঠানে উপ-রাষ্ট্রপতি ছাড়াও কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী গিরিরাজ সিং সহ অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।জাতীয় তাঁত দিবসে ‘জাতীয় তাঁত পুরস্কার’ পেয়ে খয়েরউদ্দিন তাই স্বাভাবতই আনন্দে আপ্লুত।
জাতীয় সন্মানে ভূষিত খয়েরউদ্দিন শেখের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর লক্ষ্মীপুর স্টেশন বাজার এলাকায়। বছর ৪৮ বছর বয়সী খয়েরউদ্দিন শেখ কোন বিত্তশালী পরিবারের সদস্য নয়। তিনি দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারেরই একজন সদস্য । পাওয়ারলুমের দাপট বৃদ্ধিতে তাঁত শিল্পে অস্তিত্ব সংকটের পরিস্থিতি তৈরি হয়। তবে তাতে তিনি দমে যাননি। প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও তিনি নিজের হস্ত চালিত তাঁতকেই আঁকড়ে থাকেন।সেই তাঁতে বুনেই তিনি একের পর এক নিত্যনতুন ডিজাইনের নজরকাড়া শাড়ি তৈরি করার চেষ্টা চালিয়ে যান।
তবে এই লড়াই চালাতে গিয়ে খয়েরউদ্দিন শেখকে অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। নিজের ১০ কাঠা জমিও তাঁকে বন্ধক রাখতে হয়। তবুও সামান্য হস্তচালিত তাঁতে শাড়ি বোনাতেই তিনি অবিচল থাকেন।সামান্য রোজগার করেও তিনি তাঁর দুই ছেলেমেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন। এহেন তাঁতি খয়েরউদ্দিন শেখ দীর্ঘ চার মাসেরও বেশি সময় ধরে নিজের হস্তচালিত তাঁতযন্ত্রের সাহায্যে ’কটন-খাদির নজরকাড়া এক জামদানি শাড়ি’ তৈরি করে তাক লাগিয়ে দেন। দুই মাকুর দুই টানে ঘোরানো ডিজাইনে তৈরি ‘অল ওভার বক্স’ -এর প্রায় ১ লক্ষ টাকা মূল্যের এই নরম শাড়ি তৈরি করে তিনি তা পাঠিয়ে দেন বস্ত্রমন্ত্রকে।ওই শাড়ির সৌন্দর্য ও তাতে থাকা তাঁতির হাতের শিল্পের প্রকাশ দেখে মুগ্ধ হয় বস্ত্র মন্ত্রক।জাতীয় তাঁত পুরস্কারের তালিকায় নির্ধারিত হয় খয়েরউদ্দিন শেখের নাম। অবশেষে বুধবার বস্ত্র মন্ত্রক খয়েরউদ্দিন শেখ কে দেয় তাঁর হাতে তৈরি তাঁতের শাড়ির স্বীকৃতি ও পুরস্কার ।
খয়েরউদ্দিন শেখ এদিন দিল্লী থেকেই জানান,’বস্ত্র মন্ত্রক পুরস্কার স্বরুপ তাঁকে একটি স্মারক ,শংসাপত্র,শাল ছাড়াও তাঁর ব্যাঙ্ক একাউন্টে ২ লক্ষ টাকা দিয়েছে’।খয়েরউদ্দিন আরো জানান,’এই পুরস্কার আমার জীবনের সেরা পুরস্কার।এদিন উপ-রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার পয়ে এটুকু বুঝেছি,ঐতিহ্যময় বাংলার তাঁতের শাড়ির কদর এখনও অটুট রয়েছে।পাওয়ারলুমের দাপট বেডেছে বলে তাঁতিদের হাল ছাড়লে চলবে না। হস্তচালিত তাঁতকে আঁকড়েই তিনি সারাজীবন চলতে চান। একই সঙ্গে খয়েরউদ্দিন বলেন ,দেশের সরকার আমার মত তাঁতশিল্পীকে যে ভাবে সম্মান জানিয়েছে তাতে আমি অভিভূত হয়েছি। জাতীয় পুরস্কার পেয়ে আমি সত্যি গর্বিত। পুরস্কারের অর্থ দিয়ে বন্ধক দেওয়া জমি ফিরিয়ে নেবন। বাকি অর্থ তাঁতশিল্পের কাজে লাগাবেন বলে খয়েরউদ্দিন শেখ জানিয়েছেন ।।