প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৩ আগস্ট : স্কুলের প্রধান শিক্ষক হয়েও স্কুলে যান না! গণস্বাক্ষর সম্বলিত এমন অভিযোগ পেয়ে শিক্ষক তপন পোড়েল কে বহু দূরের স্কুলে বদলি করে দেয়
প্রথমিক শিক্ষা সংসদ।সেই মতো ওই শিক্ষক মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানের কালনা পূর্ব চক্রের খাঁপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ’রিলিজ’ নিতে যেতেই ফাঁস হয়েে গেল চমকে দেওয়ার মত জালিয়াতির ঘটনা।
জালিয়াতি ধরা পড়তেই সামনে চলে আসে, গ্রামের অনেকের পাশাপাশি মৃত ব্যক্তিদের নামেও জাল সই করে দু’জন ব্যক্তি তপন পোড়েলের নামে প্রথমিক শিক্ষা সংসদে মিথ্যা অভিযোগ জানিয়েছিল।শিক্ষক তপন পোড়েল কে ’রিলিজ’ নিতে না দিয়ে গোটা ঘটনার ষড়যন্ত্রকারী ওই দুই ব্যক্তিকে গ্রামবাসীরা দীর্ঘক্ষণ স্কুলে আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখায়।অন্যের সই জাল করার কথা জনসমক্ষে স্বীকার করে নেওয়ার পর তারা ছাড়া পায় ।
পেশায় শিক্ষক তপন পোড়েল রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও যথেষ্ট পরিচিত মুখ । কালনা-১ ব্লকের নান্দাই গ্রাম পঞ্চায়েতের খাঁপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপনবাবু কালনা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পদেও রয়েছেন।গ্রামসাসীদের অভিযোগ,রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার হয়েছেন তপন পোড়েল। চক্রান্তকারীরাই তপন বাবু স্কুলে আসেন না এমন অভিযোগপত্র লিখে তাাতে অন্যের নামে জাল সই করে দিয়ে কয়েক মাস আগে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে জমা দেয়।সেই অভিযোগের ভিত্তিতে তপন পোড়েল কে অনেক দূরে ভাতারের বেরয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করে দেওয়া হয়।তপনবাবু সংসদের নির্দেশ মেনে মঙ্গলবার খাঁপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ’রিলিজ’ নিতে গেলে গ্রামে হুলস্থুল পড়ে যায়। প্রধান শিক্ষক তপন পোড়েলকে স্কুল থেকে রিলিজ নিতে না দিয়ে আটকে দেন গ্রামবাসীরা ।
গ্রামবাসীরাই তপনবাবুকে বলেন,গ্রামের কেউ নিজে স্বাক্ষর করে তার বিরুদ্ধে প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে অভিযোগ জানায়নি । এলাকার দুই দুষ্ট ব্যক্তি গ্রামের মৃত ও জীবিত ব্যক্তিদের সই জাল করে মিথ্যা অভিযোগপত্র প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে জমা দিয়েছে।তাই আপনাকে আমরা খাঁপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে রিলিজ নিতে দিচ্ছি না । গ্রামবাসী মনোজ পাল বলেন,শিক্ষক তপনবাবুর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে জমা পড়েছে তাতে আমার নামে সই করা রয়েছে। অথচ ওই সই আমি নিজে করিনি।আমার সই জাল করা হয়েছে’। গ্রামের মৃত ব্যক্তিদের নামেও অভিযোগ পত্রে সই করা রয়েছে বলে অনেক গ্রামবাসী দাবি করেছেন। সবারই বক্তব্য ,’প্রধান শিক্ষক তপন পোড়েলের স্কুলে না আসার অভিযোগ সত্য নয়। অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা’।নারায়ণ চৌধুরি নামে এক গ্রামবাসী বলেন,’তপন বাবুকে আমাদের স্কুলেই রাখার জন্য আমরা তিন-চারশো গ্রামবাসীরা মিলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে আবেদন জানাবো’। এই ঘটনার জন্য গ্রামবাসী রুইদাস পাল আবার তৃণমূলেরই এক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করেছেন ।
এদিকে যাকে নিয়ে এত শোরগোল সেই শিক্ষক তপন পোড়েল অবশ্য সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে চাননি।তিনি শুধু বলেন,আমি ’রিলিজ’ নিতে গিয়েছিলাম ।গ্রামের মানুষ আমাকে আটকে দিয়েছে ।’ প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ তাদের সিদ্ধান্ত নিশ্চয়ই বদলাবেন,এমন প্রত্যাশা করছেন গ্রামবাসীরা ।।