এইদিন ওয়েবডেস্ক,নয়াদিল্লি,০৭ আগস্ট : শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ও তার বোন শেখ রেহানাকে (Sheikh Rehana) গ্রেফতার করে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারতের কাছে দাবি জানালো বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন (এসসিবিএ) সভাপতি, এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন (AM Mahbub Uddin Khokon) । ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় ছিলেন শেখ হাসিনা ৷ গত সোমবার তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন এবং জামাত জঙ্গিদের হাত থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে বাংলাদেশের সেনার সি-১৩০ পরিবহন বিমানে চড়ে উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের হিন্দন এয়ার বেসে অবতরণ করেন । যেখানে তিনি একটি নিরাপদ বাড়িতে(safe house) রয়েছেন । মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে যে তিনি লন্ডনে যেতে পারেন, যেখানে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চাইতে পারেন। যদিও ব্রিটিশ সরকার এখনো তার আবেদনের কোনো উত্তর দেয়নি । তবে ব্রিটেন ছাড়াও আমেরিকা ও ইউরোপের অনান্য দেশসহ সৌদি আরবের সাথে শেখ হাসিনার আশ্রয়ের জন্য কথা বলছে নয়াদিল্লি ।
হাসিনা চলে যাওয়ার একদিন পর, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে(Muhammad Yunus) বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। “দরিদ্রতম দরিদ্রের ব্যাংকার” হিসাবে পরিচিত এবং ক্ষমতাচ্যুত হাসিনার দীর্ঘদিনের সমালোচক, ইউনূস নতুন নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কাজ করবেন। মঙ্গলবার গভীর রাতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যাতে ছাত্র বিক্ষোভ নেতা, সামরিক প্রধান, সুশীল সমাজের সদস্য এবং ব্যবসায়ী নেতারা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
মঙ্গলবার, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন সংসদ ভেঙে দিয়েছেন এবং বিক্ষোভ থেকে বন্দীদের মুক্তির নির্দেশ দিয়েছেন । পাশাপাশি মুক্তি দেওয়া হয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকেও । যাকে দুর্নীতির জন্য দোষী সব্যস্ত করে ২০১৮ সালে কারাগারে পাঠায় বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট ।
এদিকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অবশ্যই মানবাধিকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি করা যাবে না বলে সতর্ক করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল । মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক স্মৃতি সিং বলেন, ‘যে কোনো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম কাজ হওয়া উচিত মানুষের জীবনের অধিকার, বাকস্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করা এবং আরও সহিংসতার যে কোনো সম্ভাবনা প্রশমনের উপায় খুঁজে বের করা।’তিনি বলেন, ‘গত তিন সপ্তাহে যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে, হাজার হাজার আহত ও নির্বিচারে গ্রেপ্তার হয়েছে, তার স্বচ্ছতার সঙ্গে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত ।’
স্মৃতি সিং আরও বলেন, ‘আমরা আবারও প্রতিবাদে নিহত ও আহতদের বিষয়ে একটি দ্রুত, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। যারা দায়ী তাদের জবাবদিহিতা করতে হবে এবং সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন ও পুনরাবৃত্তি না করার গ্যারান্টিসহ রাষ্ট্রের কাছ থেকে পূর্ণ ক্ষতিপূরণ পেতে হবে।’
বাংলাদেশের ইতিহাসের এই রক্তাক্ত অধ্যায় থেকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যে কোনো পদক্ষেপ ন্যায়বিচার, জবাবদিহিতা এবং পুনরাবৃত্তি না করার নীতির ওপর ভিত্তি করে হতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের যেকোন নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য এটি একটি উপযুক্ত সময়, জনগণের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ, সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণদের রক্ষা এবং অতীতের ভুলের পুনরাবৃত্তি না করা।’।