জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,কলকাতা,১৮ জুন : ১৯৮০ সালের ২৪ শে জুলাই। ভেসে এল দুঃসংবাদ। চলচ্চিত্রপ্রেমী বাঙালির নয়নের মণি, বাঙালি তরুণীদের হার্টথ্রব মহানায়ক উত্তম কুমার আর নাই। অন্ধকার নেমে এল টলিউড ইণ্ডাস্ট্রিতে। এরপর কি বাঙালিরা আর হলমুখী হবে! চরম অনিশ্চয়তা যখন ধীরে ধীরে কলাকুশলীদের গ্রাস করছে ঠিক তখনই সাদাকালো ‘শত্রু’ তীব্র দাবদাহের পর একফোঁটা বৃষ্টির মত নিয়ে এল আশার আলো। রঙিন করে তুলল চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে যুক্ত কলাকুশলীদের। চলচ্চিত্রপ্রেমীরা আবার হলমুখী হলেন। অতীতের মত প্রায় প্রতিটি ‘শো’ হাউসফুল হতে থাকল।
যার হাত ধরে বাংলা চলচ্চিত্র জগত আবার প্রাণ ফিরে পেল, চলচ্চিত্র জগতে বিপ্লব ঘটে গেল তিনি হলেন অঞ্জন চৌধুরী। ‘গুরুদক্ষিণা’ থেকে শুরু করে একের পর এক ‘হিট’ সিনেমা তিনি উপহার দিলেন বাঙালি চলচ্চিত্র প্রেমীদের। ‘বড় বৌ’ থেকে শুরু করে ‘ছোট বৌ’ – পারিবারিক কাহিনীর মধ্যে বাঙালি বধূরা নিজেদের মিল খুঁজে পেলেন। যতদিন বাংলা চলচ্চিত্র জগত তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে ততদিন অঞ্জন চৌধুরীর নাম বাঙালি চলচ্চিত্র প্রেমীদের হৃদয়ে থেকে যাবে। ২০০৭ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি তিনিও চলে গেলেন।
এবার তাহলে কী হবে? ব্যস্ত বাঙালি কি আবার হলমুখী হবে? এদিকে তো একের পর এক হল বন্ধ হয়ে গেছে! একরাশ প্রশ্ন যখন বাঙালির মনে মনে ঘুরছে তখনই ‘কোথায় আছো গুরুদেব…’ ঢঙে তারই ভাবশিষ্য সত্যপ্রিয় সরকারের হাত ধরে ‘অঞ্জনবাবু আবার ফিরে এলেন’। গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তিনি স্মরণ করলন রবীন্দ্রনাথকে। তাঁরই লেখা সঙ্গীত ব্যবহার করে তিনি যেন বলতে চাইলেন ‘… তোমার পরে ঠেকাই মাথা’- আমাকে আশীর্বাদ করো গুরুদেব।
জানা যাচ্ছে, ‘অঞ্জনবাবু আবার ফিরে এলেন’ কিন্তু অঞ্জন চৌধুরীর বায়োপিক নয়। এটা আদপে অঞ্জন চৌধুরীর ঘরানার মত ৮ থেকে ৮০ সবাইকে নিয়ে দেখার মত একটি নিটোল পারিবারিক চলচ্চিত্র। এর মধ্যে হাসি, কান্না, অ্যাকশন, রোমান্স সবই আছে। ঠিক যেমন অঞ্জন চৌধুরীর বিভিন্ন চলচ্চিত্রে দেখা যেত। অঞ্জন চৌধুরী বেঁচে থাকলে তাঁর ‘বৌ’ ঘরানার এই চলচ্চিত্রের নাম হতে পারত ‘সোনা বৌ’। মনের মধ্যে সেই ইচ্ছে থাকলেও এক্ষেত্রে সত্যপ্রিয় বাবু সেই দুঃসাহস দেখাননি। অকপটে তিনি বললেন, ‘আমি অঞ্জন চৌধুরী নই।’
যেকোনো চলচ্চিত্রের অন্যতম সম্পদ হলো সঙ্গীত। অসাধারণ দক্ষতায় সঙ্গীত পরিচালক ছ’টি রবীন্দ্র সঙ্গীত এই চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেছেন। সঠিক জায়গায় সঠিক সঙ্গীতের ব্যবহার চলচ্চিত্রটিকে অন্যমাত্রা এনে দিয়েছে। শিল্পীদের কথা বলতে গেলে অবশ্যই নায়িকা রীমা লাহিড়ীর কথা বলতেই হয়। অঞ্জন বাবু বেঁচে থাকলে রীমা হয়তো তাঁর মানসকন্যা ‘সোনা বৌ’ হিসাবে বাঙালির কাছে পরিচিতি লাভ করতেন। সদ্য স্নাতক উত্তীর্ণা রীমার অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করবেই। এছাড়াও অন্যান্য ভূমিকায় প্রিয়া চ্যাটার্জ্জী, রিম্পা চক্রবর্তী, সন্দীপ রায় চৌধুরী, কল্যাণ মজুমদার, চঞ্চল দাস সহ অন্যান্যদের হাত ধরে অঞ্জন চৌধুরীর ঘরানার ঝলক দেখা যাবে। যদিও গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েও পরিচালক তার নিজস্বতা বজায় রেখেছেন।
জয়শ্রী চৌধুরী এণ্টারটেইণ্টমেণ্ট নিবেদিত এই চলচ্চিত্রের কাহিনী, চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় আছেন সত্যপ্রিয় সরকার। এটি পরিচালকের প্রথম নিবেদন। সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন স্নিগ্ধা মজুমদার, চিত্রগ্রহণ প্রীতম দত্ত ও সম্পাদনায় আছেন সন্দীপ বর্ধন। গল্পের নায়িকা ‘সোনা বৌ’ রীমা বললেন আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। চলচ্চিত্রপ্রেমী দর্শকদের ভাল লাগলে নিজেদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে মনে করব।
সত্যপ্রিয়বাবু দীর্ঘদিন ধরেই অঞ্জন চৌধুরীর পরিচালনার কাজকর্ম নিজের চোখে দেখে এসেছেন। নিজের অজান্তেই তাঁকে গুরু বলে মেনেছেন। গুরুদক্ষিণা হিসাবে তিনি চলচ্চিত্রটির নামকরণ গুরুদেবের নামেই করেছেন। তার আশা এই চলচ্চিত্রটি দর্শকদের মনে আবার তাঁর স্মৃতিকে উসকে দেবে।
সঙ্গত কারণেই চলচ্চিত্রের কাহিনী বলা যাবেনা। খুব শীঘ্রই চলচ্চিত্রটি বিভিন্ন হলে মুক্তি পেতে চলেছে। এখন দেখার ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে’ প্রায় দু’ঘণ্টার এই চলচ্চিত্রটি দর্শকদের মনের তৃষ্ণা মেটাতে পারে কিনা? পাশাপাশি এই চলচ্চিত্রটির হাত ধরে সত্যপ্রিয় সবার কাছে সত্যিই প্রিয় হয়ে উঠতে পারছে কিনা সেটা জানার জন্য কয়েকদিন অপেক্ষা করতেই হবে।।