প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,১৪ জুন : এয়ার কন্ডিশন মেশিন লাগিয়ে ঘরের শিতলতা সুরক্ষিত করা গেলেও প্রকৃতিকে সুরক্ষিত করা যায় না।প্রকৃতিকে সুরক্ষিত করতে হলে লাগাতে হবে প্রচুর গাছ’।এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে নজির বিহীন এক কর্মযজ্ঞে সামিল হলেন পূর্ব বর্ধমানের মাধবডিহির ঘুষ্ঠিয়া নন্দনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও পড়ুয়ারা।হাজার খানের গাজের বীজ সঙ্গে নিয়ে শুক্রবার তাঁরা বের হলেন শিক্ষামূলক ভ্রমণে।বাসে চড়ে ভ্রমণ করার সময় যেখানেই তাঁরা ফাঁকা জায়গা দেখতে পেলেন সেখানেই ফেললেন কাদা দিয়ে পাকানে গাছের বীজের গোলা। শিক্ষক ও খুদে পড়ুয়াদের প্রত্যাশা আসন্ন বর্ষায় বৃষ্টির জলে ওই বীজ অঙ্কুরিত হবে।পরে তা গাছে রূপান্তরিত হবে।গ্রামীণ এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়া ও শিক্ষকদের এমন কর্মকাণ্ড নেটিজেন মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
ঘুষ্ঠিয়া নন্দনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে এলাকা বাসীর গর্বের শেষ নেই। পঠন পাঠনের পাশাপাশি সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডে সামিল হওয়ার সুবাদে এই বিদ্যালয়ের পরিচিতি বেড়েছে।এহেন বিদ্যলয় কর্তৃপক্ষ খুদে পড়ুয়াদের নিয়ে শিক্ষামূলক ভ্রমণের সিদ্ধান্ত নেন।ভ্রমণের স্থান হিসাবে তাঁরা বেছে নেন জয়রামবাটি কামারপুকুর কে। ভ্রমণের এমন স্থান বাছার পিছনেও রয়েছে শিক্ষকদের এক অনবদ্য চিন্তা ভাবনা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় মালিক এই প্রসঙ্গে বলেন,রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এবং সারদা মায়ের জন্মভূমি জয়রামবাটি কামারপুকুর।এমন এক পবিত্র স্থান দর্শনের একটা আলাদা মাহাত্ম রয়েছে।এমন স্থান ঘুরে দেখার পর পড়ুয়াদের মধ্যে শৃঙ্খলা পরায়ণ হওয়া ,নিয়ম-নীতি ও শিষ্টাচার মেনে চলার প্রবণতা জাগ্রত হওয়াটাই স্বাভাবিক । তাই শিক্ষামূলক ভ্র্মণের স্থান হিসাবে জয়রামবাটি কামারপুকুরে বেছে নেওয়া হয়েছে বলে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন।
সে না হয় হল , কিন্তু শিক্ষামূলক ভ্রমণে বেরিয়ে গাছের বীজ ছড়াতে ছড়াতে যাওয়ার ভাবনাটা কি থেকে এল ? এর উত্তরে প্রধান শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় মালিক বলেন,“দিন যত গড়াচ্ছে আবহাওয়া ও প্রকৃতি ততই যেন বিরুপ হচ্ছে। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চড়ছে উত্তাপের পারদ। বাড়ছে বজ্রপাত। বৃক্ষ নিধন ও দূষণ এর একটা বড় কারণ বলেই মনে করছেন পরিবেশ ও আবহাওয়াবিদরা । প্রধান শিক্ষক জানান,এই কারণেই ভ্রমণ পথে বৃক্ষ রোপনের উদ্যোগ বিদ্যালের তরফে নেওয়া হয়। সেই মতো আম,জাম, কাঁঠাল‘ লিচু, অর্জুন সহ নানান গাছের বীজ কাদায় পুরে গোলা তৈরি করা হয়। বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা এমন গোলা প্রায় হাজার খানেক তৈরি করে ফেলে ।
মৃত্যুঞ্জয়বাবু দাবি করেন,তিনিও ১০০ টি বীজের গোলা নিজের উদ্যোগে তৈরি করেন । ভ্রমণ পথে যেখানেই ফাঁকা জায়গা দেখা গিয়েছে সেখানেই ওইসব বীজের গোলা ফেলতে ফলেতেই পড়ুয়া ও সকল শিক্ষকরা মিলে গিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক মৃত্যুঞ্জয় মালিক দাবি করেন,“আসন্ন বর্ষায় বৃষ্টির জলে ওই বীজ অঙ্কুরিত হবে।পরে তা গাছে রূপান্তরিত হবে । প্রধান শিক্ষক এও বলেন, বর্তমান সময়ে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করা ও গাছ লাগানো অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে ।কারণ এয়ারকন্ডিশন মেশিন লাগিয়ে কেউ তাঁর নিছের ঘরের শিতলতা হয়তো সুরক্ষিত রাখতে পারেন। কিন্তু মেশিন দিয়ে প্রকৃতিকে সুরক্ষিত রাখা যায় না ।তাই প্রকৃতিকে সুরক্ষিত করতে হলে সবাইকে গাজ লাগাতেই হবে ।
প্রকৃতিকে নিয়ে স্কুলের এমন ভাবনা ও কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন পড়ুয়াদের অভিভাবকরা। । গাছ মাষ্টার নামে খ্যাত রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত অরূপ চৌধুরী বলেন,“শিক্ষামূলক ভ্রমণে বেরিয়েও যে বৃক্ষ রোপণে সামিল হওয়া যায় তার এক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে ঘুষ্ঠিয়া নন্দনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও খুদে পড়ুয়ারা। এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে ।।