শেখ মিলন,ভাতাড়(পূর্ব বর্ধমান),১৩ জানুয়ারী : চিকিৎসার গাফেলতিতে শিশু মৃত্যুর অভিযোগ উঠল পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতার স্টেট জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে । বুধবার সকালে শিশুটির মৃত্যুর পরেই বিক্ষোভের আশঙ্কায় হাসপাতাল থেকে তড়িঘড়ি ভাতাড় থানায় খবর দিলে পুলিশবাহিনী চলে আসে । ফলে কোনও প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি । তবে মৃত শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে এনিয়ে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে । বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন ভাতার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সংঘমিত্রা ভৌমিক।
জানা গেছে,গত সোমবার সকাল ৭ টা নাগাদ প্রসব বেদনা নিয়ে ভাতাড় স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন ভাতাড় থানার আড়া গ্রামের গৃহবধূ পূর্ণিমা দাস । ওদিনই সকাল ৯ টা নাগাদ তিনি একটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন । এটিই ছিল তাঁর প্রথম সন্তান । আড়াই কেজি ওজনের ওই শিশুটির জন্মানোর পর কোনও শারিরীক সমস্যা ছিল না বলে পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে ।
পূর্ণিমাদেবীর স্বামী সুশান্ত দাস বলেন, ‘গতকাল রাতে আমি বাড়ি চলে যাই । রাতে হাসপাতালে স্ত্রীর কাছে আমার পিসি ছিলেন । আজ আমার স্ত্রীকে ছেড়ে দেওয়ার কথা ছিল । তাই এদিন খুব সকালে আমি হাসপাতালে চলে আসি । কিন্তু এসে দেখি আমার ছেলের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, চোখে পিচুটি কাটছে । তখন নার্সদের কাছে বলি । কিন্তু নার্সরা জানান সাড়ে আটটা, নটা নাগাদ ডাক্তারবাবু এসে দেখবেন । এদিকে আমার ছেলের শ্বাসকষ্ট বাড়ছে দেখে নার্সদের বারবার অনুরোধ করি যাতে তাঁরা এসে আমার ছেলের চিকিৎসা করেন । কিন্তু নার্সরা তখন মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন । তারই মধ্যে নার্সরা বলেন গরম জল এনে বাচ্ছার চোখ দুটো পরিস্কার করে দিতে । নার্সদের কথামত আমি তাই করি । তারপর ৭ টা নাগাদ ছেলের তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয় । এই দেখে ছেলেকে কোলে নিয়ে আমি নার্সদের কাছে যাই । তখন নার্সরা জানায় আমার ছেলে মারা গেছে ।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে,নার্সদের কাছ থেকে এই কথা শোনার পরে মৃত শিশুর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে । এদিকে বিক্ষোভের আশঙ্কায় হাসপাতাল থেকে ভাতাড় থানায় খবর দেওয়া হয় । খবর পেয়েই হাসপাতালে চলে আসে পুলিশবাহিনী । যার ফলে কোনও প্রকার অপ্রীতিকর অবস্থার মুখে পড়তে হয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
মৃত শিশুর কাকা বিনয় দাসের অভিযোগ, ‘শিশুটিকে ঠিক সময়ে অক্সিজেন ও ওষুধ দিলে হয়তো এই ঘটনা ঘটত না । হাসপাতালের গাফিলতির কারনেই বাচ্ছাটির এই পরিনতি হল । ভাতাড় হাসপাতালকে স্টেট জেনারেল হাসপাতালে উন্নীত করার পর শুধু হাসপাতাল ভবন রঙচঙে করা হয়েছে মাত্র । সেভাবে চিকিৎসা পরিষেবার উন্নতি হয়নি ।’
বিনয়বাবু জানিয়েছেন, তাঁরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ জানিয়েছেন । উপযুক্ত তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন মৃত শিশুর পরিবারের লোকজন । এই বিষয়ে ভাতার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সংঘমিত্রা ভৌমিক বলেন, ” অভিযোগ পেয়েছি । বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে । এনিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও জানিয়েছি ।”