আজিজুর রহমান,বর্ধমান,২৭ মে : কেউ ফিরেও তাকান না। আবার যারা তাকান তাঁরা মনেকরে মাটির উঁচু ঢিবির উপরে আগাছা জন্মেছে। কিন্তু বাস্তবে সেটি মাটির ঢিবি নয়। সেটি আশলে পূর্ব বর্ধমানের গলসি ১ ব্লকের গলিগ্রামের হতদরিদ্র ব্রাহ্মন ত্রিপুরারী মুখোপাধ্যায়ের বাড়ি।বুধবার ইয়াসের’ প্রভাবে হওয়া ঝড় বৃষ্টির মধ্যে তাই জীবনের ঝঁকি নিয়ে আর ওই বিপদজনক বাড়িতেই থাকার শাহস দেখান নি ত্রিপুরারী বাবু । স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে চোখের জল ফেলে দিন কাটানো ব্রাহ্মন দম্পতি এই দিনটা কাটালেন অন্যের আশ্রয়েই। তবুও না প্রশাসন , না পঞ্চায়েত কেউ তাঁদের দিকে ফিরেও তাকালেন না ।
পুজো অর্চনা করে যে টুকু উপার্জন হয় তা দিয়েই দিন গুজরান হয় ত্রিপুরারী মুখোপাধ্যায়ের পরিবারের। তাঁর স্ত্রী আশাদেবী সাধারণ গৃহবধূ । দম্পতির দুই সন্তান নাবালক ।তাঁদের নিজের বাড়িটি মাটির দেওয়াল আর খড়ের চালার । অর্থের অভাবে মেরামতি করতে না পারায় বাড়িটি অনেকদিন হল জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে ।নিরুপায় ব্রাহ্মন পরিবারেয় এখন ভরসা অন্যের আশ্রয় । তাঁদের ভগ্নপ্রায় মাটির বাড়িটি এখন শুধু কোনওরকমে দাড়িয়ে আছে মাত্র ।
আশাদেবী এদিন চোখের জল ফেলতে ফেলতেই জানালেন , গত বছর আমফান ঝড়ে তাঁর শ্বশুর বাড়িটি ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় । আর্থিক সামর্থ না থাকায় নিজেদের বাড়িটির সংস্কার কাজ করাতে পারেন নি । তাঁর স্বামী সরকারী আবাস যোজনার একটা পাকা বাড়ি পাওয়ার জন্যে বিডিও অফিসে লিখিত আবেদন জমা দিয়ে ছিলেন । এছাড়াও স্থানীয় পঞ্চায়েত ,এলাকার নেতা,জনপ্রতিনিধি সবার দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছেন। ঘর মিলবে বলে সবাই কথাও দিয়েছিলেন।কিন্তু সরকারী ঘর পাওয়ার সৌভাগ্য আজও তাঁদের হয় নি । গুহা
মানবের মতো জরাজীর্ণ হয়ে পড়া নিজেদের বাড়িতে আর বসবাস করতে পারেন নি ।তাই
এই প্রাকৃতিক দূর্যোগের মধ্যে সন্তানদের নিয়ে এখন তাদের অন্যের আশ্রয়ে ঠাঁই নিতে হয়েছে ।রান্নাবান্না,খাওয়াদাওয়া বসবাস সবের জন্যে অন্যের আশ্রই তাঁদের এখন ও একমাত্র ভরসা ।
ব্রাহ্মন পুজারী ত্রিপুরারী মুখোপাধ্যায় বলেন ,
এখন তাঁদের বাড়িটির এমন অবস্থা হয়েছে যা একঝলক দেখে অনেকে আবার বাড়ি বলেই মনে করতে পারেন না । সবাই ভাবেন উঁচু মাটির ঢিবির উপরে আগাছা জন্মেছে । ত্রিপুরারী বাবু আক্ষেপ প্রকাশ করে এদিন বলেন ,গতবছর আমফান ঝড়ের সময় তাঁর বাড়িটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে যায় । সেই আমফানের পর তাঁদের এলাকার অনেক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সরকারী প্রকল্পে পাকা বাড়ি পেয়েছেন । কিন্তু তিনি প্রশাসনের দরজায় দরজায় অনেক ঘুরেও সরকারী প্রকল্পে ঘর আর পান নি । ত্রিপুরারীবাবু বলেন , ভাঙা বাড়ি টুকু ছাড়া তাঁদের সহায় সম্বল বলতে আর কিছু নেই । পুজো অর্চনা করে যে টুকু উপার্জন হয় তা দিয়েই কোনও রকমে তাঁদের পরিবারের পেট চালে । কপালে কোনদিন শাক ভাত ,তো কোনদিন নুনভাত জোটে ।এখন লকডাউনের কারণে পুজো পাঠও বন্ধ ।তারজন্যে করুন অবস্থা নেমেছে তার পরিবারে। একদিকে পেটের জ্বালা,অন্য দিকে বাসগৃহের চিন্তা। কোনটা নিয়ে যে ভাববেন তার কুল কিনারা গলসির গলিগ্রামের ব্রাহ্মন দম্পতি ।
এই বিষয়ে গলসি ১ ব্লকের বিডিও দেবলীনা দাস বলেন,“কয়েকমাস হল তিনি গলসি ১ ব্লকের বিডিও পদে দায়িত্ব পেয়েছেন । ব্রাহ্মন পরিবারের বাসগৃহ সমস্যা বিষয়ে তিনি অবগত নন ।তাই এই মুমুর্তে পরিবারটির জন্যে কি করা যাবে তা বলতে পারছেন না । পরিবারের আবেদন পেলে খতিয়ে দেখে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন“ । বিডিও এমনটা জানালেও পূজারী ব্রাহ্মন পরিবারের এমন দুর্দশার কথা জেনে ব্যথিত হন পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের সহকারী সভাধীপতি দেবু টুডু । তিনি জানিয়েছেন , ‘ওই ব্রাহ্মন পুজারী সরকারী প্রকল্পে ঘর পাওয়ার ব্যাপারে তাঁর কাছে যদি আবেদন জানায় তিনি দ্রুত তা পূরণের ব্যবস্থা করবেন ।’।