এইদিন ওয়েবডেস্ক,নিউ দিল্লি,১৮ জুলাই : করোনার দ্বিতীয় লহরের পর তৃতীয় লহর নিয়ে আশঙ্কিত গোটা বিশ্ব । তারই মাঝে রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (CDC) মানুষের উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ৷ শুক্রবার সিডিসি জানিয়েছে, আমেরিকার টেক্সাস শহরে ‘ম্যানকিপক্স ভাইরাস সংক্রমণের’ একটি বিরল ঘটনা পাওয়া গেছে । এর আগে ২০০৩ সালে আমেরিকার কিছু শহরে মাঙ্কিপক্সের প্রকোপ দেখা গিয়েছিল । সিডিসির বয়ান অনুযায়ী, মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত ওই ব্যক্তি সম্প্রতি নাইজেরিয়া থেকে আমেরিকায় এসেছিলেন । ফলে ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা একাধিক মানুষও সংক্রমিত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সিডিসির আধিকারিকরা । তাঁর জানিয়েছেন,বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বিরল মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটি চিকেনপক্স ভাইরাস পরিবারের অন্তর্গত । আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে বড়বড় ফুসকুরির মত দেখা যায় । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন(WHO)-এর মতে, ১৯৭০ সালে প্রথমবার মাঙ্কিপক্স দেখা গিয়েছিল । তারপর থেকে এযাবৎ আফ্রিকা মহাদেশের ১১ টি দেশে এই ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে । আফ্রিকার বাইরে আমেরিকায় ২০০৩ সালে এই ভাইরাসে সংক্রমনের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল । দীর্ঘ ১৮ বছর পর ফের এই ভাইরাসের দেখা মিললো ।
রিপোর্ট অনুযায়ী,ঘানা থেকে আমদানি করা পোষ্য কুকুরের সংস্পর্শে আসার কারনেই আমেরিকায় এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছিল । তবে ভারতসহ এশিয়ার কোনও দেশেই মাঙ্কিপক্স সংক্রমনের ঘটনা এযাবৎ সামনে আসেনি । স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মাঙ্কিপক্স মূলত সংক্রমিত পশুদের থেকেই ছড়ায় । পশুদের রক্ত,শারিরীক তরল পদার্থ বা শরীরের ঘায়ের সংস্পর্শে আসার জন্যই এই ভাইরাস মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে । তবে এই ভাইরাস নির্দিষ্ট কোন পশুর শরীর থেকে ছড়ায় সেই বিষয়ে স্পষ্ট করে বলতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন হু’র অনুসারে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণের Incubation period বা সংক্রমণ থেকে লক্ষণগুলির সূত্রপাত পর্যন্ত সময়সীমা ৬-১৩ দিন পর্যন্ত হতে পারে । কোনও কোনও রোগীর ক্ষেত্রে ৫-২১ দিন পর্যন্তও হয় । এই সংক্রমের প্রধান লক্ষন হল লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া বা Lymphadenopathy । এছাড়া জ্বর,অসহ্য মাথাব্যাথা,পিঠ ও মাংস পেশিতে ব্যাথা, প্রভৃতির সঙ্গে খুব দুর্বলতা অনুভব করে সংক্রমিত মানুষ । এর সঙ্গে রোগীর গোটা শরীরে বড় দানার আকৃতির ফোস্কার মত দেখা যায় । কিছু গুরুতর সংক্রমণের ক্ষেত্রে এই ফুসকুড়ি চোখের কর্নিয়াকেও প্রভাবিত করতে পারে । এই সংক্রমনে মৃত্যুর হার ১১ শতাংশ । তবে মাঙ্কিপক্স সংক্রমিত শিশুদের মধ্যে মৃত্যুর আশঙ্কা বেশ থাকে ।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসটি অর্থোপক্সভাইরাস বিভাগের অন্তর্গত । গুটি বসন্ত ও কাউপক্সও এই বিভাগের মধ্যে পড়ে । তবে মাঙ্কিপক্সের ক্ষেত্রে এক ব্যক্তি থেকে অপর ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে মনে করে ডবলুএইচও । আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি ও কাশি থেকে সৃষ্টি হওয়া ড্রপলেটস, সংক্রামিত ব্যক্তির ত্বকের ঘা বা সংক্রামিতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কারণেই অন্যান্য মানুষের মধ্যে মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে ।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত মাঙ্কিপক্সের কোনও চিকিৎসা বের হয়নি । একমাত্র গুটি বসন্তের জন্য যে vaccinia vaccine ব্যবহৃত হয় ওই টিকাকেই মাঙ্কিপক্সের জন্য নিরাপদ বলে মনে করা হয় । এই ভ্যাকিসিন মাঙ্কিপক্স আটকানোর ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকারী বলে একাধিক গবেষণায় প্রমান পাওয়া গেছে ।
ডবলুএইচও’র মতে, মাঙ্কিপক্স সংক্রমনের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সচেতনতামূলক প্রচার এর সংক্রমণ রোধে সফল হতে পারে । এছাড়া বিদেশ ভ্রমনকালে যে সমস্ত ব্যক্তিরা পশুর সংস্পর্শে এসেছিলেন, পরবর্তী সময়ে তাঁদের মাঙ্কিপক্সে লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ায় আবেদন জানিয়েছে হু ।।
** সচেতনতামূলক প্রতিবেদন **