এইদিন ওয়েবডেস্ক,আউশগ্রাম,১২ ফেব্রুয়ারী : ‘এইদিন’ খবরের জের । দীর্ঘ ১৬ বছরের বন্দী জীবন কাটিয়ে খোলা আকাশ দেখলেন আউশগ্রাম থানার বড়া গ্রামের মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা সবিতা ঘোষ । মানসিক ভারসাম্য হারানোর পর থেকেই একটি ছোট্ট ঘরের মধ্যে সাবিত্রীদেবীকে বন্দি করে রাখার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর দাদা ও বউদির বিরুদ্ধে । বৃহস্পতিবার এই খবর ‘এইদিন’-এ প্রকাশিত হতেই নড়েচড়ে বসে আউশগ্রাম-১ ব্লক প্রশাসন । শুক্রবার ব্লক প্রশাসনের প্রতিনিধিদল বড়া গ্রামে গিয়ে ওই মহিলার দুর্দশা সচক্ষে প্রত্যক্ষ করে । অবশ্য প্রশাসনের প্রতিনিধিদল যাওয়ার আগেই একটি মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিদল গ্রামে পৌঁছে যায় । দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর ধরে নরকযন্ত্রনা ভোগ করা সাবিতাদেবীর পরিনতি দেখে তাঁরা শিহরিত হয়ে ওঠেন । পরিবারের সদস্যদের অমানবিকতার তীব্র নিন্দা করার পাশাপাশি স্থানীয় পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন মানবধিকার সংগঠনের সদস্যরা । অবশেষে আউশগ্রাম-১ বিডিওর নির্দেশে সবিতাদেবীকে উদ্ধার করে হোমে পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে ।
মানবাধিকার সংগঠনের সদস্য সনাতন মণ্ডল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,’সবিতা ঘোষের প্রতি যা অমানবিক আচরন করা হয়েছে তাতে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে । এর দায় স্থানীয় পঞ্চায়েত থেকে ব্লক প্রশাসন অস্বীকার করতে পারেন না। শুধু ওই মহিলাই নয় বড়া গ্রামে আরও কয়েকজন মনোরোগীর সন্ধান আমরা পেয়েছি ৷ তাঁরা কোনও সরকারি সুযোগ সুবিধাই পান না । এনিয়ে আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করব ।’
এলাকায় মেধাবী ছাত্রী হিসাবে সুখ্যাতি ছিল বড়া গ্রামের বাসিন্দা সবিতা ঘোষের । মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ন হন তিনি । কিন্তু তার দু’এক বছর পর থেকেই তাঁর মানসিক রোগের লক্ষন দেখা দিতে থাকে । ইতিমধ্যে সবিতাদেবীর মা-বাবা মারা যান । ফলে বন্ধ হয়ে যায় চিকিৎসা । শেষে চিকিৎসার অভাবে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন সবিতাদেবী । তারপর সবিতাদেবীর দাদা উজ্জ্বল ঘোষ ও বৌদি চম্পা ঘোষ তাঁকে একটি ঘরে বন্দি করে রেখে দেন বলে অভিযোগ । ঘরটিতে নেই জল,নেই কোনও আলোর ব্যাবস্থা । একটা বিছানা পর্যন্ত নেই । এদিকে ঘরটি বাইরে থেকে বন্ধ থাকায় ঘরের মধ্যেই শৌচকর্ম সারতে হত সবিতাদেবীকে । আর ওই দুর্গন্ধময় পরিবেশের মধ্যে টানা ১৬ বছর কাটাতে বাধ্য হয়েছেন ওই অসহায় মহিলা । বৃহস্পতিবার এই খবর ‘এইদিন’-এ প্রকাশিত হয় । তারপরেই টনক নড়ে প্রশাসনের ।
এদিন দুপুর নাগাদ প্রশাসনের একটি প্রতিনিধিদল বড়া গ্রামে আসেন । ওই দলে ছিলেন পঞ্চায়েত উন্নয়ন আধিকারিক, আউশগ্রাম-১ ব্লকের সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্প আধিকারিক, আইসিডিএস বিভাগের সুপারভাইজার ও আউশগ্রাম-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি মৃণালকান্তি রায় । অবশ্য তাঁরা আসার আগেই বড়া গ্রামে পৌঁছে যায় মানবধিকার সংগঠনের প্রতিনিধিরা ।
আউশগ্রাম-১ ব্লকের পঞ্চায়েত উন্নয়ন আধিকারিক সঞ্জীব রায়চৌধুরী বলেন,’ ওই মহিলাকে সর্বশেষ ২০০৬ সালে ডাক্তার দেখানো হয়েছিল ।তারপর থেকে আর কোনও চিকিৎসাই হয়নি । তবে মানসিক ভারসাম্য হারালেও মাঝে মধ্যে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলছেন ওই মহিলা । ঠিকমত চিকিৎসা করালে অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠার আশা করা যায়। এই সমস্ত রিপোর্ট উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হবে ।”।