প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৮ আগষ্ট : টাকা হাতানোর জন্য বীরভূমের এক ব্যবসায়ী ও তাঁর পিকআপ ভ্যান চালককে অপহরণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে দুস্কৃতিদের বিরুদ্ধে । এই ঘটনার পর পেরিয়ে গিয়েছে ২৪ টা দিন । অপহৃতদের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার পুলিশ মামলা রুজু করে তদন্তে নেমে হুগলির ডানকুনি এলাকার তিন দুস্কৃতিকে গ্রেপ্তার করে । দুই দফায় ৩ দুস্কৃতিকে ১৪ দিন নিজেদের হেপাজতে নিয়ে পুলিশ ডানকুনির খালে তল্লাশী চালিয়েও আজ অবধি অপহৃতদের হদিশ উদ্ধত করতে পারেনি । এই অবস্থায় পুলিশি তদন্তের উপর আর ভরসা রাখতে না পেরে অপহৃতদের পরিবার শুক্রবার রাতে জামালপুর থানায় হাজির হয়ে সিআইডি তদন্তের দাবি জানিয়ে গেলেন । তদন্তভার সিআইডির হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের কর্তারা যদিও বিশেষ কিছু বলতে চাননি ।
পুলিশ জানিয়েছে ,অপহৃতরা হলেন বীরভূমের ইলামবাজারে ব্যবসায়ী শামিম খাঁন (২১) ও তার পিকআপ ভ্যানের চালক বরুণ মুর্মু (২৬)।ব্যবসার ফাস্টফুড সামগ্রী কেনার জন্য গত ৪ আগষ্ট পিকআপ ভ্যানে চড়ে তাঁরা কলকাতা যাচ্ছিলেন।ব্যবসায়ীর সঙ্গে ছিল ৭০ হাজার টাকা। পরদিন জামালপুর থানার নবগ্রাম এলাকায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি ধাবার সামনে থেকে উদ্ধার হয় ব্যবসায়ীদের পিকআপ ভ্যানটি ।ওই গাড়ির চালকের কোন হদিশ না পেয়ে জামালপুর থানার পুলিশ একটি মামলা রুজু করে পিকআপ ভ্যানটি বাজেয়াপ্ত করে।এরপর ৮ আগষ্ট ব্যবসায়ী
শামিমের পরিবার সদস্য শামিত খাঁন জামালপুর থানায় এসে শামিম ও বরুণকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন।তার ভিত্তিতে মামলা রুজু করে তদন্তে নামে জামালপুর থানার পুলিশ । হুগলির ডানকুনি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় আকতার আলী মল্লিক , শেখ শামিম ওরফে বাবু ওরফে গোলতাবলে ও করিম শেখ ওরফে কালো নামে তিন দুস্কৃতি কে। জেরায় ধৃতরা শামিম ও বরুনকে অপহরণ করার পর খুন করে দেহ ডানকুনির খালে ফেলে দেওয়ার কথা পুলিশকে জানায় । দেহ উদ্ধারের জন্য পুলিশ তিন ধৃতকে দুই দফায় ১৪ দিন নিজেদের হেপাজতে নিয়ে ডানকুনির খালে তল্লাশি চালায় ।কিন্তু ব্যবসায়ী ও তাঁর পিকআপ ভ্যান চালকের কোন হদিশ এখন উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।দেহ উদ্ধার না হওয়ায় মামলায় খুনের ধারাও পুলিশ যুক্ত করতে পারেনি । এদিকে হেপাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ায় পুলিশ তিন ধৃতকেই শুক্রবার পেশ করে বর্ধমান আদালতে । সিজেএম ধৃতদের বিচার বিভাগীয় হেপাজতে পাঠিয়ে ১১ সেপ্টেম্বর ফের আদলতে পেশের নির্দেশ দিয়েছেন ।
জামালপুর থানায় এসে সিআইডি তদন্তের দাবি জানানোর পর অপহৃতদের পরিবার রাতে সাংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হন । শামিমের মা সামেনা বিবির বলেন , ‘তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গিয়েছে । তাঁর ছেলে শামিম ও তার গাড়ির চালক মৃত না জীবিত তা আজও তাঁরা জানেন না ।পুলিশ তো অনেক তদন্ত করল। এ বার তদন্তভার সিআইডি হাতে তুলে দেওয়া হোক ।’ একই দাবির কথা পুলিশকে জানিয়েছেন বলে জানান শামিমের দিদি মোমেনা খাতুন সহ পরিবারের অন্য সকল সদস্যরা । অন্যদিকে এক বছরের ছেলেকে কোলে নিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বরুণ মুর্মুর স্ত্রী তুলসীদেবী বলেন, ‘তাঁর দুই ছেলেই এখন শিশু । বড় ছেলের বয়স আড়াই বছর, আর ছোট ছেলের বয়স মাত্র এক বছর। স্বামী বরুণ মুর্মুই ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ব্যক্তি । স্বামীর হদিশ না মেলায় তিনি চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন ।’ তাঁর স্বামীর হদিশ উদ্ধারের দায়িত্ব এবার পুলিশ সিআইডির হাতে তুলে দিক এটাই তিনি চান বলে জানান ।
জেলার পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন অবশ্য এদিন জানান ,তাঁরা গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার তদন্ত করছেন । এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘ধৃতদের দেখানো জায়গায় দেহ খুঁজে বের করার জন্য তল্লাশি চালানো হয়েছে। ঘটনায় আরও কিছু সূত্র মিলেছে। সেই সূত্র ধরেও অপহৃতদের খোঁজ করা হচ্ছে।’।