জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী,হাওড়া,১৭ জুলাই : পিতা স্বপ্নাশিষ ভৌমিক এলাকার সুপরিচিত চিকিৎসক এবং অর্পিতা ভৌমিক পেশায় সেবিকা (নার্স)। এইরকম হাইপ্রোফাইল পরিবারের সন্তানের জন্মদিন মানেই সাজোসাজো রব, উৎসবের মেজাজ। বড় প্যাণ্ডেল, মায়াবী আলোর ঝলকানি, বাড়িতে আত্মীয় স্বজনের ভিড়, নিজেদের পেশার জগতের মানুষের উপস্থিতি যেখানে স্বাভাবিক ঘটনা সেখানে সম্পূর্ণ অন্য ধরনের পরিবেশে পালিত হলো সন্তানের জন্মদিন এবং তার সাক্ষী থাকল এলাকাবাসী ।
গত ১৬ ই জুলাই সকালে অন্যান্য দিনের থেকে একটু আলাদা পরিস্থিতি দেখা গেল হাওড়ার ফুলেশ্বরে ‘আনন্দ ভবন ডেফ এন্ড ব্লাইন্ড স্কুল’ চত্বরে। এখানেই থাকে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা। জীবন তাদের সাদা-কালো ছবির মত বর্ণহীন। স্হানীয় মানুষ অতিরিক্ত আগ্রহ প্রকাশ করেনা। ওদের ওরা নিত্যদিন দেখছে। হঠাৎ সেখানে এসে দাঁড়ালো কয়েকটি বড়সড় গাড়ি। গাড়ি থেকে নামল কয়েকজন মানুষ। জানা গেল উলুবেড়িয়ার ভৌমিক দম্পতি তাদের ছয় বছরের সন্তান আর্যরূপ ভৌমিকের জন্মদিন আজ এখানেই পালন করবে। শুধু আজ নয় দীর্ঘদিন ধরেই প্রচারের আলোর বাইরে থেকে নিজের দুই সন্তানের জন্মদিন বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পালন করে আসছেন তারা।
জন্মদিনের অঙ্গ হিসাবে চিরাচরিত কেক কাটা বা মোমবাতি নেভানো নয় ভৌমিক পরিবারের পক্ষ থেকে বিশেষ চাহিদা সম্পূর্ণ শিশুদের জন্য মধ্যাহ্নভোজনের সঙ্গে সঙ্গে একটি সুন্দর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করাও হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কবি অলোক কুমার কুন্ডু ও মুরলী চৌধুরী , বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী আর ডি গৌতম ও দীপেন্দু বিকাশ কর, দীপেন্দু বিকাশ মান্না প্রমুখ। অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের শিশুরাও অংশগ্রহণ করে। আবৃত্তি, সঙ্গীত পরিবেশন সবকিছু মিলিয়ে এক জমজমাট অনুষ্ঠানের সাক্ষী থাকে শিশুরা। সমগ্র অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী অন্তরা সিংহরায়।
আর্যরূপের অভিভাবকদের ধন্যবাদ জানিয়ে আনন্দ ভবনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অজয় দাস বলেন – কার্যত পৃথিবীর সমস্ত রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ থেকে ওরা বঞ্চিত। জন্মগত ত্রুটির জন্য ওদের সেভাবে বাইরে নিয়ে যেতে পারিনা। ভৌমিক পরিবারের মত সহৃদয় ব্যক্তিরা যদি এখানে আসেন তাহলে শিশুগুলি আনন্দ পাবে। নিজেদের অসহায় ভাববে না ।
নীরবে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পচ্ছন্দ করা ডাঃ স্বপ্নাশিষ ভৌমিক নীরব থাকলেও বহু পীড়াপীড়ি করার পর অর্পিতা দেবী বললেন – আমরা প্রচারের বাইরে থাকতে বেশি পচ্ছন্দ করি। সত্যি কথা বলতে এইসব অসহায় শিশুদের মাঝে আমার সন্তানদের জন্মদিন পালন করে একটা আলাদা তৃপ্তি পাই। ওদের মুখের হাসি দেখে মনে হয় স্বর্গ থেকে ঈশ্বর যেন আমার সন্তানদের উপর আশীর্বাদ বর্ষণ করছেন। পার্থিব উপহারসামগ্রীর চাইতে এটা মহামূল্যবান। আগামী দিনেও আমরা অন্য কোথাও আমাদের সন্তানদের জন্মদিন পালন করব। আমরা চাই আমাদের সন্তানরাও বড় হয়ে যেন একইভাবে সমাজ সেবামূলক কাজে যুক্ত হয় ।।