এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,০৩ ডিসেম্বর : কলকাতা দমদম নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভেতরে একটি মসজিদ রয়েছে, যা বাঁকড়া মসজিদ নামে পরিচিত। এটি বিমানবন্দরের দ্বিতীয় রানওয়ের মুখেই রয়েছে এবং এটি বিমানবন্দরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ এই মসজিদটি সম্প্রসারণের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ স্থানীয়দের জন্য একটি বাস পরিষেবা চালু করেছে, যাতে তারা সহজেই মসজিদে যেতে পারে। কিন্তু বিমানবন্দরের ভিতরে মসজিদের উপস্থিতিকে নিরাপত্তার জন্য উদ্বেগের বলে মনে করছে বিজেপি।
বিষয়টি রাজ্যসভায় উত্থাপন করেছেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ সমীক ভট্টাচার্য । রাজ্যসভায় এই সংক্রান্ত তার চারটি প্রশ্ন এবং কেন্দ্রীয় বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রমন্ত্রী মুরলীধর মহলের উত্তরের কপিটি এক্স-এ শেয়ার করেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় আইটি ইনচার্জ অমিত মালব্য।
পাশাপাশি তিনি লিখেছেন,’বিজেপির বাংলা রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য রাজ্যসভায় কলকাতা বিমানবন্দরের অপারেশনাল এরিয়ার ভেতরে মসজিদ নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন এবং সরকার এখন আনুষ্ঠানিকভাবে বাধার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় স্বীকার করেছে যে: একটি মসজিদ সেকেন্ডারি রানওয়ের কাছে অবস্থিত, এটি নিরাপদ কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করে, রানওয়ের থ্রেশহোল্ড ৮৮ মিটার সরিয়ে দেয়, এটি জরুরি পরিস্থিতিতে রানওয়ের ব্যবহারকে প্রভাবিত করে যখন প্রাথমিক রানওয়েটি অনুপলব্ধ থাকে । তোষামোদি রাজনীতির জন্য যাত্রীদের নিরাপত্তাকে বিসর্জন দেওয়া যাবে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এটা জানা উচিত।’
অমিত মালব্যর শেয়ার করা প্রশ্ন-উত্তরের কপিতে কলকাতা বিমানবন্দরে রানওয়ে নির্মাণ এবং টার্মিনাল সংস্কার সংক্রান্ত বিষয়ে শমীক ভট্টাচার্য জিজ্ঞেস করেন,'(ক) কলকাতা বিমানবন্দরের অপারেশনাল এলাকার মধ্যে অবস্থিত মসজিদটি, যা সেকেন্ডারি রানওয়ের সংলগ্ন, রানওয়ের নিরাপদ সম্প্রসারণ এবং পূর্ণ ব্যবহারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কিনা; (খ) যদি তাই হয়, বারবার নোটিশ এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ সত্ত্বেও মসজিদটি অপসারণ বা স্থানান্তর শুরু না করার কারণ; (গ) নতুন সমন্বিত টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব থাকা সত্ত্বেও কলকাতা বিমানবন্দরের পুরাতন টার্মিনাল ভবনগুলি ভেঙে ফেলা বিলম্বিত হয়েছে কিনা; এবং (ঘ) যদি তাই হয়, তাহলে এই বিলম্বের কারণ এবং নতুন টার্মিনাল প্রকল্পটি ভেঙে ফেলা এবং শুরু করার জন্য সংশোধিত সময়সীমা ?’
উত্তরব বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়ের রাষ্ট্রমন্ত্রী মুরলীধর মহল জানান, ‘(ক) এবং (খ): কলকাতা বিমানবন্দরের দুটি সমান্তরাল রানওয়ে রয়েছে, যথা, প্রাথমিক রানওয়ে (১৯এল-০১আর) এবং মাধ্যমিক রানওয়ে (১৯আর-০১এল)। প্রাথমিক রানওয়েটি নিয়মিত, দৈনন্দিন বিমানবন্দর কার্যক্রমের জন্য মনোনীত। প্রাথমিক রানওয়েটি কেবল তখনই ব্যবহৃত হয় যখন প্রাথমিক রানওয়েটি অনুপলব্ধ থাকে, যেমন নির্ধারিত রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমের সময়। মাধ্যমিক রানওয়েটির অ্যাপ্রোচ এলাকায় একটি মসজিদ অবস্থিত যা উত্তর দিকের প্রান্তিক স্থানকে ৮৮ মিটার দ্বারা স্থানচ্যুত করে।
(গ) এবং (ঘ): কলকাতা বিমানবন্দরের পুরাতন টার্মিনাল ভবন ভেঙে ফেলার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন পাওয়ার জন্য ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বেসামরিক বিমান চলাচল সুরক্ষা ব্যুরো (বিসিএএস)-এর কাছে বিষয়টি তুলে ধরেছে। ভাঙার এবং নতুন টার্মিনাল প্রকল্প শুরু করার সময়সীমা এই অনুমোদনের উপর নির্ভরশীল।’
প্রসঙ্গত,যশোর রোডে বিরাটি ছাড়িয়ে আরও উত্তরে গেলে বাঁকড়া। বাঁকড়া মোড়ের উল্টো দিকে বিমানবন্দরের সাত নম্বর গেটের ভিতরে ওই মসজিদ । মসজিদটি ১৭০ বছরের পুরনো বলে দাবি করা হয়। এর আগে ২০২০ সালে কোঝিকোড়ে বিমান দুর্ঘটনার পরে যাত্রী-নিরাপত্তার কথা ভেবে কলকাতা বিমানবন্দরের দ্বিতীয় রানওয়ের মুখে থাকা মসজিদ সরানোর প্রসঙ্গ উঠেছিল । বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, রাজারহাটের দিক থেকে নেমে কোনও কারণে রানওয়েতে বিমান দাঁড় করাতে না-পারলে মসজিদের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বড়সড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন, যে মুষ্টিমেয় মানুষ ওই মসজিদে নিয়মিত নমাজ পড়তে যান, তাঁদের জন্য এত বিপুল সংখ্যক বিমানযাত্রী কেন ভুগবেন? এর ফলে তাঁদের আরও বড় বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে না তো?
যদিও ওই মসজিদের ইমাম মহম্মদ মনিরুল ইসলাম তখন দাবি করেন, এখন করোনার জন্য লোক কম আসছেন ঠিকই। কিন্তু অন্য সময়ে প্রতি শুক্রবার প্রায় ২০০ মানুষ ওই মসজিদে নমাজ পড়তে আসেন। নিয়মিত বহু মানুষ পাঁচ বার সেখানে গিয়ে নমাজ পড়েন। মসজিদ কমিটির প্রধান তথা রাজ্যের মন্ত্রী ও জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দ-এর রাজ্য সভাপতি সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীও জানান, ইফতার, সবে বরাত-সহ নানা অনুষ্ঠানে মসজিদে ভিড় হয়। তিনি জানিয়েছেন, মসজিদ সরানোর জন্য উপযুক্ত স্তরে আলোচনার প্রয়োজন।’ তিনি এও বলেছিলেন,’কেউ চাইলেই কোথাও থেকে মসজিদ সরানো যায় না। ভারতে মুসলিমদের তিনটি প্রধান সংগঠন রয়েছে। তাদের মধ্যে জমিয়তে একটি। অন্য দু’টি হল দারুল উলুম দেওবন্দ এবং মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড। মসজিদ সরানোর বিষয়টি এই তিনটি সংগঠনকে চিঠি দিয়ে জানানোর কথা আমি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম। এ-ও বলেছিলাম, আমাকে যেন সেই চিঠির প্রতিলিপি দেওয়া হয়। মাস পাঁচেক আগে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ওই তিনটি সংগঠনকে চিঠি দেন এবং সেটির প্রতিলিপি তাঁর কাছেও পাঠান। কিন্তু তার পরে বিষয়টি আর এগিয়েছে কি না, জানা নেই আমার ।’ যদিও কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য স্পষ্ট জানান যে চিঠি পাঠানো হয়েছিল । কিন্তু জবাব দেওয়া হয়নি ।
অবশ্য কলকাতা বিমানবন্দরের ভিতরে মসজিদ সমস্যা আজকের নয়,বহু পুরনো । জ্যোতি বসু এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সময়েও ওই মসজিদটি সরানোর বিষয়ে বিস্তর চিঠি চালাচালি হয়৷ কিন্তু এবং বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের আলোচনা হয়েছিল। রাজীব গাঁধী প্রধানমন্ত্রী থাকা থাকাকালীন একটি আইন তৈরি করে গিয়েছিলেন । তাতে বলা হয়েছিল যে বাবরি মসজিদ ছাড়া দেশের আর কোনও মসজিদকে বর্তমান অবস্থান থেকে সরানো যাবে না। এই আইনই এখন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে ।।

