প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৯ আগষ্ট : হাইকোর্টের নির্দেশে ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসার ঘটনার তদন্তের জন্য রবিবার পূর্ব বর্ধমানে পা রাখলো সিবিআই দল।চার সদস্যের সিবিআই আধিকারিক এদিন দুপুরে পৌছান জেলার জামালপুর থানার আঝাপুর পঞ্চায়েতের নবগ্রামে।সিবিআই তদন্তের নিরপেক্ষতা নিয়ে জেলার শাসক দলের নেতৃত্ব প্রশ্ন তুলেছেন ।তেমনি নবগ্রামের নিহত বিজেপি সমর্থকের পরিবার সদস্যরা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ।
বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর দিন রাজনৈতিক হিংসায় উত্তপ্ত হয় জামালপুর থানার নবগ্রাম। সেই হিংসার ঘটনায় নিহত হন দুই তৃণমূল কর্মী শাজাহান শা ওরফে শাজু (৩০) এবং বিভাষ বাগ ওরফে বিনোদ (২৭)। একই হিংসার ঘটনায় ওই দিন প্রাণ হারাণ নবগ্রামের বিজেপি শক্তি প্রমুখ আশিস ক্ষেত্রপালের মা কাকলি ক্ষেত্রপাল । নিহতদের মধ্যে কাকলি ও বিভাসের বাড়ি নবগ্রামে ।অপর নিহত শাজু শেখের বাড়ি জামালপুর থানার ভেড়িলি গ্রামে। রাজনৈতিক হিংসার এই ঘটনায় পুলিশ ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে পরদিন বর্ধমান আদালতে পেশ করে । ধৃতদের মধ্যে ১০ জন বিজেপি সমর্থক । একজন ছিল তৃণমূল কর্মী।
সিবিআই আধিকারিকরা এদিন প্রথম
নিহত বিজেপি সমর্থক কাকলি ক্ষেত্রপালের বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন। পরে তাঁরা যান নবগ্রামের রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা নিয়ে পুলিশের সাক্ষী করা এলাকার বাসিন্দা মামনি ক্ষেত্রপালের বাড়িতে। নিহত কাকলি ক্ষেত্রপালের পরিবার সদস্যদের সঙ্গে তাঁরা কথা বলে সেদিনের ঘটনা বিষয়ে জানতে চান ।মামনি ক্ষেত্রপাল যদিও সিবিআই আধিকারিকদের জানিয়েদেন, ’তিনি ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না । ঘটনার দিন তিনি বাড়িতেও ছিলেন না বলে সিবিআই আধিকারিকদের জানান । একই সঙ্গে মামনিদেবী সিবিআই আধিকারিকদের জানিয়েদেন, পুলিশ কেন- কি জন্য তাঁকে স্বাক্ষী করেছে তার বিষয়েও তিনি কিছুই জানেন না“। এনাদের বক্তব্য নথিভুক্ত করার পাশাপাশি ভিডিওগ্রাফিও করেন সিবিআই আধিকারিকরা । কড়া পুলিশি পাহারায় এই দু’ জনের সঙ্গে কথা বলে সিবিআই আধিকারিকরা নবগ্রাম ছাড়েন ।
নিহত কাকলি ক্ষেত্রপালের স্বামী অনিল ক্ষেত্রপাল বলেন,তিনি সিবিআই অফিসারদের জানিয়েছেন তাঁর ছেলে আশিষ বিজেপি পার্টি করে । সেই কারণে তৃণমূলের লোকজন তাঁর ছেলেকে ও তাঁদের শত্রু বানিয়ে ফেলে । ভোটের ফল বের হওয়ার পরদিন তৃণমূলের সশস্ত্র দুস্কৃতিরা তাঁর ছেলের বাড়িতে আক্রমণ করে ।ছেলেকে না পেয়ে তৃণমূলের দুস্কৃতিরা তাঁকে ও তাঁর স্ত্রী কাকলিকে মারধোর শুরু করেদেয়। তারা টাঙ্গি দিয়ে তাঁর পায়ে মারে ।
ওই সময়ে তাঁর স্ত্রী কাকলি তাঁকে বাঁচাতে গেলে তৃণমূলের দুস্কৃতিরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকেও আঘাত করে । তার জেরে কাকলি প্রাণ হারায় ।মারধোরে মারাত্মক জখম হয়ে এখন সাবলিল ভাবে পায়ে হেঁটে চলার শক্তি হারিয়েছেন বলে অনিল ক্ষেত্রপাল জানান ।
অনিলবাবুর ছোট ছেলে, নবম শ্রেণির ছাত্র দীপঙ্করের সঙ্গেও সিবিআই আধিকারিকরা কথা বলেন।কাকলিদেবীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সিবিআই আধিকারিকরা জানতে পারেন আশিস এখনও ঘরছাড়া হয়ে রয়েছে। তবে আক্ষেপ প্রকাশ করে অনিলবাবু বলেন ,’তাঁর সিবিআই কর্তাদের আরও অনেক কথা বলার ছিল । কিন্তু ওনারা তাঁদের সব কথা সেই ভাবে সুনতেই চাইলেন না ।’ এদিন নিহত দুই তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে যদিও যান নি সিবিআই আধিকারিকরা । তা নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন নিহত তৃণমূল কর্মীদের পরিবার ।
নিহত বিভাস বাগ ও শাজাহান শেখের পরিবার সদস্যরা এদিন অভিযোগে বলেন, সিবিআই তাঁদের বাড়িতে না আসা থেকেই প্রমাণ হয়ে গেল সিবিআই পক্ষপাত দুষ্ট হয়ে কাজ করছে । সিবিআই কেন তাঁদের কথা শুনবে না সেই প্রশ্ন এদিন তুলেছেন নিহত তৃণমূল কর্মী বিভাস বাগের স্ত্রী ঝর্ণাদেবী।
জেলা তৃণমূলের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘সিবিআই বিজেপির হয়ে কাজ করছে বলেই নিহত দুই তৃণমূল কর্মীর বাড়িতে গিয়ে কথা বলার সদিচ্ছা দেখায় নি ।’ যদিও জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক সৌম্যরাজ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘সিবিআই তদন্ত হওয়ায় তৃণমূল অশনি সংকেত দেখছেন । সে জন্যেই এই সব মন্তব্য করছেন তৃণমূলের নেতারা ।’।