প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়,বর্ধমান,২৫ আগষ্ট : নির্মমভাবে পিটিয়ে এক তৃণমূল কর্মীকে খুনের ঘটনায় দলেরই ৩ মহিলা সহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ।শহর বর্ধমানের খালাসিপাড়া নিবাসী তৃণমূল কর্মী অশোক মাঝি (৩৮)কে খুনের ঘটনায় ধৃতরা হল টুম্পা দাস ,
সেফালি বিবি ,পপি বেগম ও বাবলু বাগ ।
ধৃতরা সকলেই খালাসি পাড়ার বাসিন্দা । বুধবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে নিহত তৃণমূল কর্মীর দেহের ময়নাতদন্ত হয় । এদিনই খুনের ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ চার ধৃতকে পেশ করে বর্ধমান আদালতে। তদন্তের প্রয়োজনে ও ঘটনায় জড়িত বাকিদের হদিশ পেতে তদন্তকারী অফিসার ধৃতদের ১০ দিন নিজেদের হেপাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানান । সিজেএম ধৃতদের ৮ দিন পুলিশি হেপাজতের নির্দেশ দিয়েছেন ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে,এলাকায় রাজনৈতিক দখলদারি কায়েম তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিরোধের জেরে কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত হয়ে ছিল বর্ধমান পৌরসভার ৬ নম্বরওয়ার্ড এলাকা।ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলার সৈয়দ মহম্মদ সেলিম ও জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক শিবশকর ঘোষ গোষ্ঠীর বিরোধ মঙ্গলবার দুপুরে চরমে ওঠে । সশস্ত্র বিরোধী গোষ্ঠীর নির্মম আক্রমণে প্রাণ হারান মহম্মদ সেলিম গোষ্ঠীর তৃণমূল কর্মী অশোক মাঝি।আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই দিনই অশোকের স্ত্রী চন্দনা মাঝিকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় বর্ধমান মেডিকেল হাসপাতালে ।
প্রাক্তন কাউন্সিলার সৈয়দ মহম্মদ সেলিম আক্রমনের সবিস্তার উল্লেখ করে মঙ্গলবার রাতে বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন । তাঁর অভিযোগ,মঙ্গলবার দুপুর ৩ টে নাগাদ তিনি পৌরসভা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন । পথে খালাসীপাড়া এলাকায় সশস্ত্র অবস্থায় থাকা ৫০-৬০ জন অতর্কিতে তাঁর উপর আক্রমন চালায় । তাঁকে মারতে দেখে খালাসী পাড়া নিবাসী দলের কর্মী অশোক মাঝি ও তাঁর স্ত্রী চন্দনা মাঝি ছুটে আসে । মহম্মদ সেলিম বলেন ,আক্রমণকারীদের হাত থেকে তিনি নিজেকে কোনরকমে বাঁচাতে সক্ষম হন । তবে আক্রমণকাীদের নির্মম মারধোরের হাত থেকে রেহাই পায়নি অশোক মাঝি ও তাঁর স্ত্রী চন্দনা । রক্তাত অবস্থায় তাঁরা ঘটনাস্থলে পড়ে থাকে । তাঁদের দু’জনকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করা হয় । সন্ধ্যায় সেখানেই দলের কর্মী অশোক মাঝি মারা যায় ।আক্রমণকারী সকলে বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস সহ তৃণমূল নেতা শিবশংকর ঘোষ,আব্দুল রব ,ইফতিকার আহমেদের অনুগামী। এইসব নেতাদের মদতে ও নির্দেশেই চলেছে আক্রমণ । আক্রমণকারী সহ আক্রমণে মদতকারী
সকলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের মদতে ও নির্দেশে করেছেন বলে সৈয়দ মহম্মদ সেলিম এদিন দাবি করেন ।একই দিনে মৃতর স্ত্রী চন্দনা মাঝিও বর্ধমান থানায় ১০ জনের নামে বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন । পুলিশ বাকি অভিযুক্তদের সন্ধান চালাচ্ছে ।
মৃত তৃণমূল কর্মীর মা কল্পনা মাঝি এদিন বলেন , “তাঁর ছেলে অশোক পেশায় ছিল গাড়ি চালক। শিবশংকর ঘোষের দলে না ভিড়ে সেলিমের সঙ্গে থাকাটাই কাল হল ছেলে ও বৌমার । নির্মম মারধোরে অকালে প্রাণ হারাতে হল ছেলে অশোককে ।বৌমা চন্দনাও মারাত্মক জখম হয়েছে । ছেলেকে খুনের ঘটনায় জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবি করেছেন কল্পনাদেবী
পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় যদিও এদিন দাবি করেন,“ যা ঘটেছে তা গোষ্ঠীদন্দের কোন ঘটনা নয়। এটা পাড়া গত বিবাদ।পুলিশ ঘটনার উচ্চপর্যায়ে তদন্ত শুরু করেছে ।দোষীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি হবে“। বিধায়ক খোকন দাস ও শিবশংকর ঘোষ এই ঘটনা বিষয়ে মুখে কুলুপ আঁটায় তাঁদের কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ।।