এইদিন ওয়েবডেস্ক,রংপুর,২৯ জুলাই : বাংলাদেশের রংপুরের গঙ্গাচড়ায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে এক কিশোর (১৭) গ্রেপ্তার হলেও স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন ওই কিশোরের বাড়িসহ হিন্দুদের দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে৷ ভাঙচুরের পর সর্বস্ব লুটপাট করে নিয়ে গেছে মুসলিম জনতা । এই ঘটনায় সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক বিরাজ করছে এবং ভয়ে অনেকে বাড়ির জিনিসপত্র নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম এই খবর জানিয়ে বলেছে,হামলার ঘটনার পরে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে । তবু হিন্দুপল্লীর লোকজনের আতঙ্ক কাটছে না। তারা বাড়ির জিনিসপত্র মোটরভ্যানে চাপিয়ে দূরে নিজের নিজের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, ‘দোষীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তার শাস্তি হোক। কিন্তু মাইকিং করে হিন্দুপল্লীতে হামলা, বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে।’
পুলিশ বলছে, সামাজিক মাধ্যমে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ পেয়ে শনিবার রাতে ওই কিশোরকে আটক করে থানায় আনা হয়। পরদিন সাইবার সুরক্ষা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। রবিবার দুপুরে আদালত তাকে শিশু পুনর্বাসনকেন্দ্রে পাঠান। ওই কিশোর একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে তৃতীয় পর্বের শিক্ষার্থী।
এদিকে এই ঘটনায় জামাত ইসলামি, বিএনপি,হিযবুত প্রভৃতি উগ্রপন্থী দলগুলির জঙ্গিরা দলবেঁধে শনিবার রাতে ওই কিশোরের বিচারের দাবিতে মিছিল করে। পরে তার বাড়িতে হামল, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। একই সময় আশপাশের কয়েকটি বাড়িতেও হামলা চালায় স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন । পরে রাতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
কথিত ধর্ম অবমাননার প্রতিবাদে রবিবার নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের বাংলাবাজার এবং খিলালগঞ্জ এলাকায় মানববন্ধন হয়। মাইকিং করে সেখানে লোকজন জড়ো করে বিকেলে ওই হিন্দুপল্লীর অন্তত ১৮টি বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। এদিন গ্রামের প্রমোদ মোহন্ত, সুজন রায়, কিশোব রায়, জয়চাঁদ রায়, অমিত মোহন্ত, রবিন্দ্রনাথ রায়, ধরনী মোহন্ত, অতুল রায়, সুমন রায়, ধনঞ্জয় রায়, কমলাকান্ত রায়, সুবল রায়, অবিনাশ রায়, লালমোহন রায়, হরিদাস রায়, মনোরঞ্জন শীল, লিটন মোহন্ত ও উপিন চন্দ্র মোহন্তর বাড়িতে হামলা,ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের দাবি, হামলাকারীরা অধিকাংশ কিশোরগঞ্জের বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা । তারা শুধু বাড়িঘর ভাঙচুর করেনি, সোনার গহনা, নগদ টাকা, চালের বস্তা, গরু, কাপড়-চোপড় ও আসবাবপত্র লুটপাট করেছে।
সোমবার দুপুর পর্যন্ত অন্তত ২৫টি পরিবার গ্রাম ছেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য পরেশ চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন নম্বর থেকে মোবাইলফোনে হুমকি পাচ্ছে হিন্দু গ্রামবাসীরা । ফলে ভয়ে অনেকে গ্রাম ছাড়ছে। ভয়ে অনেকে বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না।’ এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল এমরান বলেন, ‘কিছু পরিবার আতঙ্কে বাড়ি ছেড়েছে। অনেকে হামলার ভয় করছেন। তবে আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি । ওই গ্রামে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘হামলার ঘটনায় এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। তাই এ ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।’ ভীতসন্ত্রস্ত হিন্দুদের অনুমান যে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িত কাউকে আদপেই গ্রেপ্তার করা হবে না ।
গঙ্গাচড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, ‘ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার ওই কিশোরের পরিবার ও স্বজন ভয়ে বাড়ি ছেড়েছেন। এ ছাড়া কিছু পরিবার হামলার ভয়ে বাড়ি ছেড়েছে বলে জেনেছি। তবে আমরা গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করেছি, বাড়ি ছাড়ার প্রয়োজন নেই।’ পরিস্থিতি এখন শান্ত দাবি করে তিনি বলেন, ‘ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।’।