এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,২৩ এপ্রিল : সংশোধিত ওয়াকফ আইনের সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে পেশ হয়েছে অনেকগুলি আবেদন। সেই ইস্যুতেই প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই ও বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ ম্যাসির বেঞ্চে কেন্দ্রের পক্ষে সওয়াল করেন সলিসিটার জেনারেল তুষার মেহতা। তিনি বলেন, সরকারি জমিতে অন্য কারও অধিকার থাকতে পারে না। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টেরও একটি রায় রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছিল, সরকারি সম্পত্তিকে যদি ওয়াকফ বলে দাবি করা হয়, তাহলে সেই সম্পত্তিকে সরকার রক্ষা করতে পারে।
এই বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে দিয়েছেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক প্রসূন মৈত্র । প্রসঙ্গত,তিনি ওয়াকফ নিয়ে একটি বই লিখেছেন । যার নাম “ওয়াকফের করাল গ্রাস” । সুপ্রিম কোর্টে চলা সংশোধিত ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে আজ নিজের ফেসবুক পেজে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেছেন । পাশাপাশি বিভিন্ন রাজ্যে ওয়াকফ রেজিষ্ট্রেশনের তালিকাও ভাগ করে নিয়েছেন তিনি ।
প্রসূন মৈত্র লিখেছেন,’গত তিনদিন ধরে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ওয়াকফ সংশোধনী আইন নিয়ে শুনানি কতজন ফলো করেছেন জানিনা তবে যারা করেননি তারা সুযোগ পেলে অবশ্যই Bar & Bench বা Live Law এর X থ্রেড অবশ্যই দেখে নেবেন। SG তুষার মেহতা, কপিল সিবাল, অভিষেক মনু সিংভি, গুরু কৃষ্ণকুমার, রাজীব দ্বিবেদী, রঞ্জিত কুমার, গোপাল শঙ্করনারায়ণের মত সিনিয়র আইনজীবীদের সওয়াল-জবাব এবং সংবিধানের চুল চেরা বিশ্লেষণ নিঃসন্দেহে একটা বড় প্রাপ্তি।
তবে এই পোস্ট শুধু সেটা বলার জন্যে নয় বরং এটা জানাতে যে শুনানির এক পর্যায়ে ওয়াকফ রেজিষ্ট্রেশন তথ্য নিয়ে WAMSI পোর্টালে ব্যপক পরিবর্তন ও ২০১৩ সালের সংশোধনী নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেটা নিয়ে বক্তব্য রাখার সময় সিবাল এই লাইন অফ আর্গুমেন্ট নেন যে আগে রেজিষ্ট্রেশন প্রক্রিয়া করতে সময় লাগতো, এখন প্রক্রিয়া সহজ এবং অফিস তৎপর হওয়ায় রেজিস্ট্রেশনের পরিমাণ বেড়েছে। ভাবুন, ২০১৩ সালে ও তার আগে ছিল সিবালদের সরকার আর তখন রেজিস্ট্রেশন হয়নি আর ২০১৪ তে মোদী আসতেই ওয়াকফ বেড়ে গেল। দ্বিতীয়ত, ওয়াকফ রেজিষ্ট্রেশন হয় রাজ্যের অধীনে সেই দায় কেন্দ্র সরকার কিভাবে নিতে পারে?
এবার আসি এই পোস্টের মূল প্রসঙ্গে। কালকে সিবাল মুসলমানদের হয়ে সব দায় রাষ্ট্রের উপর চাপিয়ে দিলেন এবং সেটা মেনেও নিতে হবে কারণ বিপক্ষ পার্টি সেখানে ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া। আদালতে সলিসিটর জেনারেল কখনোই পার্টি লাইনে হেঁটে এই প্রতিপ্রশ্ন করতে পারেননা যে অবিজেপি শাসিত রাজ্যের দায় কেন্দ্র কেন নেবে। একইভাবে, পৃথিবীর যাবতীয় বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় মতামত দেওয়া যেসব জাতীয়তাবাদীরা ওবিসি বিষয়ে চুপ করে বসে আছেন পাছে তাদের কোন কাজের দায়িত্ব নিতে হয়, তারাও বুঝুন যে আদালতের আইনি যুদ্ধের বাইরেও আরেকটা যুদ্ধ চলে যেটাতে অংশ না নিলেও তার দায়ভার কিন্তু আপনার উপরেই বর্তাবে। গত ১২ বছরে এই রাজ্যে ওয়াকফ সম্পত্তি বেড়েছে ৩৫০ শতাংশের বেশী। ১২ বছরের পুরনো তোষণমূলক ওবিসি আইন আত্মদীপ-এর উদ্যোগে বাতিল হয়েছে, ওয়াকফ নিয়েও সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ চলছে। এই ধর্মযুদ্ধের সময় কেউ যদি বলরামের মত তীর্থযাত্রা করতে যায় তাহলে সেটা যে ধার্মিক আচরণ নয়, বরং দায় এড়ানোর চেষ্টা সেটা স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ বলে গিয়েছেন।’
প্রসূন মৈত্রের শেয়ার করা ওয়াকফ সম্পত্তির তালিকা 👇

তাঁর দেওয়া লিস্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে ২০১৪ সাল থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে ওয়াকফ সম্পত্তি বেড়েছে ৩২০.৯% । সর্বোচ্চ সম্পত্তি বেড়েছে জম্মু-কাশ্মীরে । এই রাজ্যে ওয়াকফ সম্পত্তি বৃদ্ধির হার চমকে দেওয়ার মত…..৩২৫৩২০০% । গুজরাটে বেড়েছে ১১৯৯.৩% । জাতীয় রাজধানী দিল্লিতে বেড়েছে ১১৫৩৩.৩% । একমাত্র ঝাডখণ্ডে ওয়াকফ সম্পত্তির কোনো বৃদ্ধি হয়নি বলে তালিকায় বলা হয়েছে ।
প্রসঙ্গত,গত মঙ্গলবার সংশোধিত ওয়াকফ আইন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে দীর্ঘ শুনানি চলে । সকাল সাড়ে ১১টার কিছু পরে মামলার শুনানি শুরু হয় শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি বিআর গবই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহ-র বেঞ্চে। মাঝে কিছু ক্ষণের বিরতি। তার পর আবার শুনানি। চলল প্রায় বিকেল ৪টে পর্যন্ত। সংশোধিত ওয়াকফ আইনের একটি ধারার উপর সম্পূর্ণ স্থগিতাদেশের আর্জি জানানো হয় আদালতে । বুধবার ও বৃহস্পতিবার মামলার ফের শুনানি হয় শীর্ষ আদালতে প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে।সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে মামলাকারীদের আইনজীবীরা শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, ওয়াকফ বোর্ডে কেন অমুসলিম সদস্য থাকবেন ? হিন্দুদের দেবোত্তর সম্পত্তি সংক্রান্ত বোর্ডে সাধারণত হিন্দুরাই থাকেন, এমন দাবিও করা হয় আদালতে। মামলাকারীদের আইনজীবী কপিল সিব্বল সওয়াল করেছিলেন, ওয়াকফ বোর্ড আসলে একটি ধর্মীয় বিষয়।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের যুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে কপিল সিব্বল বলেন “ওয়াকফ হল ঈশ্বরের প্রতি উৎসর্গীকৃত, পরকালের জন্য। অন্যদের মতো নয়, ওয়াকফ হল ঈশ্বরের প্রতি দান। দান একটি সম্প্রদায়ের জন্য। এটি ভবিষ্যতের জন্য দান, আধ্যাত্মিক সুবিধার জন্য।” এরপর প্রধান বিচারপতি মন্তব্য করেন, “হিন্দুদের মধ্যে মোক্ষের ধারণা রয়েছে”। বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহ প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একমত হয়ে খ্রিস্টান ধর্মে অনুরূপ একটি বিধানের উল্লেখ করে বলেন, “আমরা সবাই স্বর্গে যাওয়ার চেষ্টা করি”।
কেন্দ্রের যুক্তির বিরোধিতা করে আইনজীবী রাজীব ধাওয়ান বলেন, ”বেদ অনুযায়ী, মন্দিরগুলি হিন্দু ধর্মের অপরিহার্য অংশ নয়। প্রকৃতি পুজোর বিধান রয়েছে। আগুন, জল এবং বৃষ্টির দেবতা রয়েছে। পর্বত, মহাসাগর ইত্যাদি রয়েছে”। উল্লেখ্য, আবেদনকারীরা আগেই দাবি করেছিলেন, ওয়াকফ মূলত ঈশ্বরের নামে করা দান। এরপরই প্রধান বিচারপতি বলেন, ”দান অন্যান্য ধর্মেরও একটি মৌলিক নীতি।”।