শ্যামসুন্দর ঘোষ,কলকাতা,১০ মার্চ : বিজেপি ছেড়ে দেওয়ার মুচলেকা আদায়ের নামে একজন বিজেপি নেত্রীকে দলীয় কার্যালয়ে ডেকে এনে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে মেদিনীপুর জেলার নারায়ণগড় বিধানসভার তেঁতুলমুড়ি এলাকার এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে । এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা প্রসঙ্গে বিজেপি বিধায়িকা অগ্নিমিত্রা পালের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হল, ‘ভাবলেই গা শিউরে উঠছে ।’ এবার কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর তথা বিজেপি নেতা সজল ঘোষ ধর্ষক তৃণমূল নেতার ভিডিও প্রকাশ্যে আনলেন । তৃণমূল কার্যালয়ের ভিতরে ধর্ষক নেতার একটা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন তিনি । ওই নেতাকে তিনি ‘তৃণমূলের সম্পদ লক্ষ্মী শীট’ এবং ‘অঞ্চল সভাপতি ও পঞ্চায়েত সদস্য’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন ।
ভিডিও রেকর্ডকারী ব্যক্তি ষাটোর্ধ বৃদ্ধ ওই তৃণমূল নেতাকে ধিক্কার জানিয়ে বলতে শোনা গেছে,’একজন মহিলাকে পার্টি অফিসে ডেকে তুমি এমন কাজ করতে পারলে ?’ নেতা তখন বলেন, ‘শোন না আমার কথা ।’ উত্তরে ভিডিও রেকর্ডকারী ব্যক্তি বলেন,’কি শুনব ? তুমি পার্টি অফিসে একজন মহিলাকে ডেকে রেপ করলে, একজন অঞ্চল সভাপতি হয়ে?’ তখন তৃণমূল নেতাকে হাত জোড় করতে দেখা গেছে । এরপর ওই ব্যক্তি ফের বলেন,’বাবু হাত জোর করছে.. অ্যাঁ ! শালা, আমরা কি করে মুখ দেখাইব ? তোমাকে কত ভালবাসতাম, বিশ্বাস করতাম । একজন অঞ্চল সভাপতি হয়ে এরকম করলে ? চলো চলো, এখানে থেকো না, বাড়ি চলো, ফাঁসিয়ে দেবে এরা । অঞ্চল সভাপতি হয়ে তোমরা একটা মহিলাকে পার্টি অফিসে নিয়ে এসে রেপ করে…ইস্ । চলো চলো পালিয়ে চলো।’
প্রতিক্রিয়ায় সজল ঘোষ লিখেছেন,’ধর্ষককে চিনে রাখুন -আইন হয়তো এদের শাস্তি দেবে না, কিন্তু শাস্তি দেবে জনগণ l তৃণমূল করলে বয়স যাই হোক না কেন সে সাদা চুল কিংবা পাকা দাড়ি সবাই এক l হয় চোর নয় ধর্ষক l পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় বিধানসভার টেন্টুলমুড়ি এলাকায়, মকরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য ও আঞ্চল ১-এর তৃণমূল কংগ্রেস নেতা লক্ষ্মণ সিট এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতা শান্তি ভুঁইয়া, বিজেপির মহিলা মোর্চার এক প্রাক্তন সদস্যাকে তৃণমূল কার্যালয়ে ডেকে পাঠান এবং ধর্ষণ করেন বর্তমানে মহিলা মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি l’
গতকাল রবিবার এ নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছিলেন, ‘নারায়ণগড় বিধানসভার তেঁতুলমুড়ি এলাকায় আজ (রবিবার) সকাল ১০ টা নাগাদ মক্রামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য এবং ১নং অঞ্চলের সভাপতি তৃণমূল নেতা লক্ষ্মীকান্ত শীট ও তৃণমূলের স্থানীয় নেতা শক্তি ভুইঞ্যাঁ ভারতীয় জনতা পার্টির প্রাক্তন সক্রিয় মহিলা মোর্চার এক সদস্যা-কে স্থানীয় তৃণমূল কার্যালয়ে তিনি ‘বিজেপি করেন না’ এমন একটি মুচলেকা লেখার বাহানায় ডেকে নিয়ে এসে ধর্ষণ করেন। পরবর্তীতে ঐ মহিলা সেখানেই অচৈতন্য হয়ে পড়েন এবং স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মক্রামপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান। সেখান থেকে ওনাকে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে ঐ প্রাক্তন বিজেপি নেত্রী মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’
বিজেপি বিধায়িকা অগ্নিমিত্রা পাল এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছিলেন,’তৃণমূলের দলীয় অফিস এখন ‘ধর্ষণের’ কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাবলেই গা শিউরে উঠছে। নিশ্চই দলের অফিসে হাসিমুখে নেত্রীর ছবির সামনের দলের নেতারা এই কুকর্ম করছে।
এই মেয়েটি ২০২৪ এর লোকসভা ভোটে বিজেপির হয়ে কাজ করেছিল। আমার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। ভোটের পরে ওর পরিবারের সঙ্গে অত্যাচার করা হয়। ও বিজেপি করবে না, সেই মুচলেকা দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। পার্টি অফিসে মুচলেকা দিতে গেলে তৃণমূলের সমাজবিরোধী অঞ্চল সভাপতি লক্ষী শিট মেয়েটিকে নারায়ণগড়ে তৃণমূলের পার্টি ‘ধর্ষণ’ করে। কোথায় চলেছি আমরা? এরপরে হয়ত চক্রান্ত বলবে তৃণমূল। বা মেয়েটির চরিত্র নিয়ে কাঁটাছেড়া চলবে। এই দল কাটমানি, সিন্ডিকেট, চাকরি বিক্রিকে অগ্রাধিকার বলে মনে করে দিনের পর দিন বাংলাকে লুঠ করছে। এখন মহিলাদের টার্গেট করেছে বিধানসভা ভোটের আগে। মেয়েদের ভয় দেখাচ্ছে। ওই দলের হয়ে কাজ না করলে কী পরিনাম হতে পারে। ধর্ষণ এখন দলীয় কর্মসূচি। ধিক্কার৷’
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে আবেদন জানান, ‘এই অপরাধের ক্ষমা নেই। মেদিনীপুরের জনগণের কাছে আমার আবেদন প্রতিবাদে নামুন। বিপদ এখন আমাদের দোরগোড়ায়। মেয়েদের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু হয়েছে। রাস্তায় নামুন ।’।