কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর উপর হামলার ঘটনা নিয়ে ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকা উগ্র বামপন্থা ফের একবার আলোচনায় চলে এসেছে ৷ এই সেই বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে শ্লোগান ওঠে ‘ভারত তেরে টুকড়ে হোঙ্গে… ইনশাল্লাহ ইনশাল্লাহ’, ‘কাশ্মীর মাঙ্গে আজাদী’ প্রভৃতি । ব্রাত্য বসুর গাড়ির ধাক্কায় আহত ছাত্রটির সোশ্যাল মিডিয়ার কিছু পোস্ট বর্তমানে ভাইরাল হয়েছে । যেখানে ইসলামী সন্ত্রাসবাদের সমর্থন এবং দেশ ও হিন্দু বিরোধী মন্তব্য লক্ষ্য করা যায় । যে কারণে বামপন্থার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে এ রাজ্যে । অনেকেই বলছেন যে পৃথিবীতে বামপন্থার চেয়ে বড় ভণ্ডামি এবং প্রতারণা আর কিছু নেই ।
আপনি যদি বামপন্থা বুঝতে চান, তাহলে ১৯৮৯ সালে চীনের বেইজিংয়ের তিয়ানানমেন স্কয়ারের ঘটনাটি স্মরণ করুন । ভারতে এই বামপন্থীরা গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা, দারিদ্র্য থেকে মুক্তি নিয়ে বড় বড় কথা বলে । কিন্তু যখন চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সরকার ছাত্রদের দমন করে এবং প্রায় ৩,০০০ ছাত্রকে হত্যা করে তখন এই ভারতীয় বামপন্থীরা চীনা সরকারকে সমর্থন করে। বামপন্থীদের ভন্ডামীর এটা একটা জলন্ত উদাহরণ ।
বেইজিংয়ের তিয়ানানমেন স্কয়ারের নরসংহার :
এক অর্থে এই ঘটনাটি ছিল হৃদয়বিদারক, মর্মান্তিক এবং অমানবিক । বামপন্থীদের সেই বর্বরতার কাহিনী পড়ে আপনার চোখে জল চলে আসবে। আসলে, মাও সে তুং-এর নেতৃত্বে কমিউনিস্ট পার্টি ক্ষমতা দখলের পর থেকে,একনায়কতন্ত্রের অধীনে চীন শাসন করে আসছে কমিউনিস্ট পার্টি । কখনোই নির্বাচন হয় না চীনে । মানুষের কোন নাগরিক অধিকার নেই। তবে, যখন চীনের অর্থনীতি ভেঙে পড়তে শুরু করে, তখন চীন কমিউনিজমের আড়ালে একটি সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে । আর এর ফলে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত ব্যক্তিরা এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনা জেনারেলরা হাজার হাজার কোটি ডলার মূল্যের একটি সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির এই শিল্পপতিরা ব্যাপকভাবে শ্রমিকদের শোষণ শুরু করে । এখন আর চীনের শ্রমিকদের কোন অধিকার নেই, কোন শ্রম আইন নেই । স্বল্প মূল্যে চীনা স্মার্টফোন এবং বৈদ্যুতিক সামগ্রী বিশ্ববাজারে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে শ্রমিকদের শোষণের ফলেই । যেকারণে চীনে কমিউনিস্টদের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ বাড়তে শুরু করে ৷ কারণ বামপন্থী নীতির কারণে চীনের ধনীরা আরও ধনী হতে শুরু করে এবং দরিদ্ররা আরও দরিদ্র হতে শুরু করে।
১৯৮৯ সালে বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একটি বিশাল আন্দোলন শুরু করে, যা ধীরে ধীরে চীনের ৪০০ টিরও বেশি শহরে ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রদের পাশাপাশি, শ্রমিক এবং সাধারণ মানুষও বামপন্থী শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে রাস্তায় নেমেছিল । চীনা সরকার ছাত্র আন্দোলনকে খুব কঠোরভাবে দমন করেছিল । তারা ছাত্রদের উপর ট্যাঙ্ক ব্যবহার করেছিল। ছাত্রদের উপর অত্যাধুনিক রাইফেল দিয়ে গুলি চালানো হয়েছিল, ৩০০০ জনেরও বেশি ছাত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। বিশ হাজার মানুষকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল এবং এখনও বহু মানুষ চীনা কারাগারে বন্দী ।
ঠিক কতজন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে তা জানতে জাতিসংঘ চীনে একটি প্রতিনিধিদল পাঠাতে চেয়েছিল । যেকারণে সেই সময়ে ভারতের বামপন্থী দলগুলি জাতিসংঘের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছিল যে যে কোনও দেশেরই তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে চীনের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পূর্ণরূপে ন্যায্য। এমনকি AISA, SFI, ডেমোক্র্যাটিক স্টুডেন্টস ইউনিয়ন ইত্যাদির মতো বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলিও শিক্ষার্থীদের উপর ট্যাঙ্ক চালানোর জন্য চীনা সেনাবাহিনীকে সমর্থন করেছিল।
চীনের বিভিন্ন শহরে এই আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতা উ’র কাইক্সি, চাই লিং, কং কিং ডং, ওয়াং ডান, শেন টং, লিউ গ্যাং, ফেং কংদে, ওয়াং হুই, লি লু প্রমুখকে চীনা সেনাবাহিনী গ্রেপ্তার করে এবং কোনও বিচার ছাড়াই জনসমক্ষে গুলি করে হত্যা করে । এই আন্দোলনকে সমর্থনকারী চীনের চারজন বিশিষ্ট লেখককেও গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। ২০,০০০ এরও বেশি মানুষকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
এই আন্দোলনে, একজন অজ্ঞাত ছাত্রের ছবি সারা বিশ্বে খুব বিখ্যাত হয়ে ওঠে । কেউ তার নাম জানত না,যাকে “ট্যাঙ্ক ম্যান” নাম দেওয়া হয়েছিল। অকুতোভয় ছাত্রটি চীনা সেনাবাহিনীর ৩০০টি ট্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়েছিল৷ ট্যাঙ্ক চালক আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে ট্যাঙ্কটি অতিক্রম করার সাথে সাথে এই ছাত্রটি পালিয়ে যাবে, কিন্তু এই ছাত্রটি এক ইঞ্চিও নড়েনি।আর ট্যাঙ্কের চালক, সেই ছাত্রের সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে, তার পাশেই ট্যাঙ্কটি থামিয়ে দিলেন । পরে সেই ছাত্র এবং ট্যাঙ্ক চালক সৈনিককেও গুলি করে হত্যা করা হয় । কারণ ট্যাঙ্ক চালক সৈনিক সেই ছাত্রের সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং তাকে পিষে ফেলেননি ।
ভেবে দেখুন,ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে, এই বামপন্থীরা কত স্বাধীনভাবে “ভারত তেরে টুকড়ে হোঙ্গে.. ইনশাল্লাহ ইনশাল্লাহ” স্লোগান দেয় । আর যখন পদক্ষেপ নেওয়া হয় তখন তারা বলে যে দেশে কোনও স্বাধীনতা নেই । কিন্তু এই একই বামপন্থীরা চীনে তাদের দলের দমনকে ন্যায্যতা দেয় ! অবশ্য জ্যোতি বসুর সময়ে মরিচঝাঁপি এবং সাঁই বাড়ির গণহত্যা হয়েছিল । যার ন্যায় বিচার আজও হয়নি । সাঁই বাড়ির গণহত্যার মূল আসামি তৎকালীন বামপন্থী সিপিএমের মন্ত্রী নিরুপম সেন বার্ধক্য জনিত কারণে মারা গেছেন বহুদিন আগেই । আর, বাংলাদেশী বংশভূত হয়েও তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর নির্দেশে মরিচঝাঁপিতে বাংলাদেশী হিন্দু নমঃশূদ্রদের নির্মমভাবে নরসংহার করা হয়েছিল । শুধু তাই নয়, জ্যোতি বসুর হাত আনন্দমার্গী সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে । জ্যোতি বসু আজ নেই । কিন্তু ভারতীয় বামপন্থীদের কাছে তিনি আজ ‘মহান কমরেড’ হিসেবে পরিচিত ।।