এইদিন ওয়েবডেস্ক,পিরোজপুর(বাংলাদেশ),১৬ ফেব্রুয়ারী : বাংলাদেশের পিরোজপুরের নাজিরপুরে জিহাদি কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় হিন্দু সম্প্রদায়ের সার্বজনীন দুর্গা মন্দির ও দোকানে হামলার ঘটনা ঘটেছে । এই ঘটনায় ১০ জন আহত হয় । শুক্রবার রাতে নাজিরপুর উপজেলার মাঠিভাংঙ্গা ইউনিয়নের সামন্তগাতী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- সামন্তকাঠী পশ্চিম চরপাড়া শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির সভাপতি মিলন গাইন ও তার স্ত্রী ইরানী গাইন এবং ব্যবসায়ী রেবতী গাইন ও তার স্ত্রী বীথি গাইন। তারা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। বাকি আহতদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় জড়িত থাকা ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) নাসরিন জাহান। ধৃতদের নাম ছাব্বির সেখ (২৩), মুস্তাকিন সেখ (২০), নয়ন সেখ (২০)। তারা নাজিরপুর উপজেলার মাঠিভাংঙ্গা ইউনিয়নের সামন্তগাতী গ্রামের বাসিন্দা।
হামলার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) নাসরিন জাহান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরূপ রতন সিংহ, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহম্মদ মিজানুর রহমান দুলাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। মন্দির ও দোকান ভাঙচুরের ঘটনায় নাজিরপুর থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে। হামলায় আহত ব্যবসায়ী রেবতী গাইন বলেন, ‘দুই-তিন দিন আগে আমার চায়ের দোকানে বসে স্থানীয় কয়েকজন ছেলে চা খাচ্ছিল ও ফ্রি ওয়াইফাই (ইন্টারনেট) ব্যবহার করছিল অনেকক্ষণ ধরে। এ নিয়ে তাদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। পরে তারা ওই দিন আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়। এ নিয়ে শুক্রবার সকালে স্থানীয় পর্যায়ে সালিশিসভার কথা থাকলেও হয়নি৷ এরপর শুক্রবার রাতে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি গ্রুপ এসে আমার দোকানে হামলা করে আমাকে মারধর করে এবং দোকানের মালপত্র লুটপাট করে ও ভাঙচুর ।’
রেবতী গাইন আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় আমার স্ত্রী বিথি গাইন বাধা দিতে এলে তাকেও মারধর করে কিশোর গ্যাং। দোকাটিতে হামলা করে যাওয়ার সময় স্থানীয় সামন্তগাতী পশ্চিম চরপাড়া শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির হামলা করে হামলাকারীরা। এসময় দুর্গা মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। মন্দিরে হামলা ঠেকাতে এলে মন্দির কমিটির সভাপতি মিলন গাইনের স্ত্রী ইরানী গাইনকেও মারধর করে ওই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।’
এ বিষয়ে হামলায় আহত সামন্তগাতী পশ্চিম চরপাড়া শ্রী শ্রী দুর্গা মন্দির সভাপতি মিলন গাইন বলেন, ‘যখন রেবতী গাইনের ওপর হামলা করা হয় তখন তার চিৎকার শুনে আমরা ছুটে যাই। এরপর হামলাকারীরা আমাদের ওপর চড়াও হয়ে হামলা করে। এতে ৬ থেকে ৭ জন আহত হয়। হামলা শেষে যাওয়ার পর আমাদের মন্দিরের দুর্গা প্রতিমা ভাঙচুর ও মন্দির ভাঙচুর করে। হামলাকারীদের হাতে রড, জিআই পাইপ ছিল। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানাই।’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছে হোগলাবুনিয়া গ্রামের মাটিভাঙ্গা গ্রামের কৃষক লীগের সভাপতি মামুন শেখ। এ বিষয়ে মামুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে সে বলে, ‘যারা এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের আমি বিচার চাই এবং বিষয়টি অতীব নিন্দনীয়। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মহল আমার নাম ব্যবহার করছে।’ নাজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহম্মদ মাহামুদ আল-ফরিদ ভুঁইয়া জানান, ঘটনার খবর শুনতে পেয়েই সেখানে পুলিশ পাঠানো হয় । পরে দোকান-মন্দিরে হামলা ও মারমারি ঘটনায় রেবতী গাইন বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে । বাকিদেরও আটক করার চেষ্টা চলছে। ঘটনা প্রসঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) নাসরিন জাহান জানান, এ ঘটনায় ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দোকান ভাঙচুরের সাথে যারা জড়িত তারা মন্দির ভাঙ্গায় জড়িত কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।।