।। তৃতীয় মুণ্ডকে প্রথমঃ খণ্ডঃ ॥
দ্বা সুপর্ণা সযুজা সখায়া
সমানং বৃক্ষং পরিষস্বজাতে।
তয়োরন্যঃ পিপ্পলং স্বাদ্বত্ত্য-
নশ্নন্নন্যো অভিচাকশীতি॥১
সরলার্থ: সুন্দর পালকযুক্ত একই রকম দেখতে দুটি পাখি সবসময় একই গাছে থাকে। তাদের মধ্যে একটি পাখি সুমিষ্ট ফল খাচ্ছে এবং অন্যটি কিছু না খেয়ে কেবল দেখছে।
সমানে বৃক্ষে পুরুষো নিমগ্লোঽ-
নীশয়া শোচতি মুহ্যমানঃ।
জুষ্টং যদা পশ্যত্যন্যমীশমস্য
মহিমানমিতি বীতশোকঃ॥২
সরলার্থ: জীবাত্মা পরমাত্মার সঙ্গে একই গাছে (অর্থাৎ একই দেহে) থাকলেও জীবাত্মা তার নিজ স্বরূপ সম্পর্কে অজ্ঞ। এই কারণে তাকে নানা দুঃখ ভোগ করতে হয়। কিন্তু যখন তার স্বরূপজ্ঞান হয় তখন সে সুখদুঃখের পারে চলে যায় এবং নিজ মহিমা উপলব্ধি করে।
যদা পশ্যঃ পশ্যতে রুক্মবর্ণং
কর্তারমীশং পুরুষং ব্রহ্মযোনিম্।
তদা বিদ্বান্পুণ্যপাপে বিধূয়
নিরঞ্জনঃ পরমং সাম্যমুপৈতি॥৩
সরলার্থ: সাধক যখন এই জ্যোতির্ময় স্রষ্টা, ব্রহ্মার কারণ (হিরণ্যগর্ভ), সেই পরমপুরুষ ঈশ্বরকে উপলব্ধি করেন, তখন তিনি পাপপুণ্যের ঊর্ধ্বে চলে যান এবং নির্লিপ্ত ও পবিত্র হয়ে পরম সাম্য লাভ করেন। অর্থাৎ সাধক তখন সব কিছুর সাথে একাত্মতা অনুভব করেন ।
প্রাণো হ্যেষ যঃ সর্বভূতৈর্বিভাতি
বিজানন্ বিদ্বান্ ভবতে নাতিবাদী।
আত্মক্রীড় আত্মরতিঃ ক্রিয়াবান্
এষ ব্রহ্মবিদাং বরিষ্ঠঃ॥৪
সরলার্থ: ঈশ্বর সব বস্তুর মধ্যে নিজেকে প্রকাশ করেন এবং সব প্রাণীর তিনিই প্রাণ-স্বরূপ। যখন কোন ব্যক্তি একথা জানেন, তখন তিনি কেবল ব্রহ্মেরই (অর্থাৎ ঈশ্বরীয় প্রসঙ্গ) আলোচনা করেন। তিনি নিজেই নিজের সাথে খেলা করেন। আনন্দস্বরূপ তিনি। ধ্যান ও অন্যান্য অধ্যাত্ম সাধনে তিনি মগ্ন। সকল ব্রহ্মজ্ঞানীদের মধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠ।
সত্যেন লভ্যস্তপসা হ্যেষ আত্মা
সম্যগ্জ্ঞানেন ব্রহ্মচর্যেণ নিত্যম্।
অন্তঃশরীরে জ্যোতির্ময়ো হি শুভ্রো
যং পশ্যন্তি যতয়ঃ ক্ষীণদোষাঃ॥৫
সরলার্থ: দেহের মধ্যে হৃৎপদ্মে এই শুদ্ধ ও জ্যোতির্ময় পরমাত্মাকে উপলব্ধি করতে হবে। কায়মনোবাক্যে সত্যের অনুসরণ, স্বরূপ চিন্তা এবং আত্মসংযম ও ব্রহ্মচর্য অভ্যাসের দ্বারাই আত্মজ্ঞান লাভ করতে হবে। সত্যদ্রষ্টা ঋষিগণ এই পরমাত্মাকে উপলব্ধি করেন।
সত্যমেব জয়তে নানৃতং
সত্যেন পন্থা বিততো দেবযানঃ।
যেনাক্রমন্তষয়ো হ্যাপ্তকামা
যত্র তৎসত্যস্য পরমং নিধানম্॥৬
সরলার্থ: একমাত্র সত্যেরই জয় হয়, অসত্যের জয় হয় না। কারণ স্বর্গদ্বারে পৌঁছবার প্রশস্ত পথটি সত্যের দ্বারাই লাভ করা যায়। পূর্ণকাম ঋষিরা (যাঁদের কোন কামনা বাসনা নেই) সত্যের মাধ্যমেই তাঁদের পরম লক্ষ্যে পৌঁছান।
বৃহচ্চ তদ্ দিব্যমচিন্ত্যরূপং
সূক্ষ্মাচ্চ তৎ সূক্ষ্মতরং বিভাতি।
দূরাৎ সুদুরে তদিহান্তিকে চ
পশ্যৎস্বিহৈব নিহিতং গুহায়াম্॥৭
সরলার্থ: ব্ৰহ্ম অনন্ত, ইন্দ্রিয়াতীত এবং কল্পনার অতীত। ইনি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম (সূক্ষ্মতমের চেয়েও সূক্ষ্মতর), তিনি দূরতমের চেয়েও দূরে রয়েছেন আবার একই সাথে খুব কাছেও রয়েছেন। মানুষের হৃদয়-পদ্মেই তিনি বিরাজ করেন।
ন চক্ষুষা গৃহ্যতে নাপি বাচা
নান্যৈর্দেবৈস্তপসা কর্মণা বা।
জ্ঞানপ্রসাদেন বিশুদ্ধসত্ত্ব-
স্ততস্তু তং পশ্যতে নিষ্কলং ধ্যায়মানঃ॥৮
সরলার্থ: আত্মা নিরাকার তাই তাঁকে দেখা যায় না। ভাষা দিয়েও তাঁকে প্রকাশ করা যায় না। আত্মা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তু নন। তপস্যা বা যাগযজ্ঞের দ্বারাও তাঁকে পাওয়া যায় না। সাধক যখন ইন্দ্রিয়সুখে সম্পূর্ণ অনাসক্ত হন তখন তাঁর চিত্তশুদ্ধি হয়। তখন তিনি নিরাকার ব্রহ্মের অর্থাৎ আত্মার দর্শন লাভ করেন।
এষোঽণুরাত্মা চেতসা বেদিতব্যো
যস্মিন্ প্রাণঃ পঞ্চধা সংবিবেশ।
প্রাণৈশ্চিত্তং সর্বমোতং প্রজানাং
যস্মিন্ বিশুদ্ধে বিভবত্যেষ আত্মা॥৯
সরলার্থ: প্রাণবায়ু পাঁচভাগে ভাগ হয়ে দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। একই দেহে সূক্ষ্ম আত্মাও রয়েছেন যা শুদ্ধ বুদ্ধির গোচর। এ কথা সত্য যে, সকল বস্তু ও ইন্দ্রিয়ের মধ্যেও শুদ্ধ চৈতন্য (আত্মা) বিরাজ করেন। চিত্তশুদ্ধি হলে আত্মা তখন নিজেকে প্রকাশ করেন
যং যং লোকং মনসা সংবিভাতি
বিশুদ্ধসত্ত্বঃ কাময়তে যাংশ্চ কামান্।
তং তং লোকং জয়তে তাংশ্চ কামাং-
স্তস্মাদাত্মজ্ঞং হ্যর্চয়েদ্ ভূতিকামঃ॥১০
সরলার্থ: যিনি শুদ্ধ মনের অধিকারী তিনি যে যে লোক বা যে সকল বস্তু পেতে ইচ্ছা করেন, সেই সকল লোক ও কাম্য বস্তু তিনি লাভ করে থাকেন। এই কারণে কল্যাণকামী বা ঐশ্বর্যপ্রার্থী ব্যক্তি এরকম পুরুষের পূজা করবেন।
যং যং লোকং মনসা সংবিভাতি
বিশুদ্ধসত্ত্বঃ কাময়তে যাংশ্চ কামান্।
তং তং লোকং জয়তে তাংশ্চ কামাং-
স্তস্মাদাত্মজ্ঞং হ্যর্চয়েদ্ ভূতিকামঃ॥১০
সরলার্থ: যিনি শুদ্ধ মনের অধিকারী তিনি যে যে লোক বা যে সকল বস্তু পেতে ইচ্ছা করেন, সেই সকল লোক ও কাম্য বস্তু তিনি লাভ করে থাকেন। এই কারণে কল্যাণকামী বা ঐশ্বর্যপ্রার্থী ব্যক্তি এরকম পুরুষের পূজা করবেন।
।। ইতি মুণ্ডকোপনিষদি তৃতীয়মুণ্ডকে প্রথমঃ খণ্ডঃ ॥

