এইদিন ওয়েবডেস্ক,কলকাতা,১১ জানুয়ারী : শুক্রবার বিষাক্ত স্যালাইনে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে এবং আরও চার প্রসূতির অবস্থা আশঙ্কাজনক । পশ্চিমবঙ্গের যে সংস্থা ওই সেলাইন সরবরাহ করেছিল, একই সেলাইনে ইতিপূর্বে কর্নাটকেও প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটে । একথা জানিয়ে “পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড”কে নিয়ে কিছু মারাত্মক অভিযোগ তুললেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ।
এই বিষয়ে শুভেন্দু অধিকারী নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেজে লিখেছেন,’মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে সন্তানকে জন্ম দেওয়ার পর একজন মহিলার মৃত্যু এবং ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) এবং ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) তে আরও চারজন গর্ভবতী মহিলার চিকিৎসাধীন অবস্থায় থাকা নিয়ে রাজ্য জুড়ে তোলপাড় চলছে। এনাদের প্রত্যেকেই “পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড” সংস্থার “মেয়াদ উত্তীর্ণ” ও নিম্নমানের বিষাক্ত স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল এবং যার ফলে এই মহিলারা “গুরুতর অসুস্থ” হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।’
তিনি লিখেছেন,’গত বছর কর্ণাটকে ঠিক একই ধরণের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিলো। হাসপাতালে চারজন প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে এবং সেখানেও “পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড” সংস্থাটিই “ত্রুটিপূর্ণ” রিঙ্গার্স ল্যাকটেটেড (আরএল) স্যালাইন সরবরাহ করেছিল যা ঐ প্রসূতিদের শরীরে দেওয়া হয়েছিল।
কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী এরপর কর্ণাটক স্টেট মেডিক্যাল সাপ্লাইস কর্পোরেশন লিমিটেড (কেএসএমএসসিএল) কে নিম্নমানের রিঙ্গার্স ল্যাকটেট সলিউশন সরবরাহকারী “পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড” কে কালো তালিকাভুক্ত করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। উক্ত কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলাও সেই সময় দায়ের করা হয়।
কর্নাটক সরকার এর পর নিম্নমানের ঔষধ সরবরাহ করার অভিযোগে, কলকাতার সেন্ট্রাল ড্রাগস ল্যাবরেটরি (সিডিএল) কর্তৃক জারি করা স্ট্যান্ডার্ড কোয়ালিটি (এসকিউ) সার্টিফিকেশন তদন্তের জন্য ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই) কে চিঠি দেয়, এবং পরবর্তীকালে ওই কোম্পানিকে উৎপাদন বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপরই, পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দপ্তর এই ফার্মের সাথে যুক্ত স্যালাইন ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। ড্রাগস কন্ট্রোল অথরিটির আদেশের পর, পশ্চিমবঙ্গের ১৪টি অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসা সামগ্রীর প্রধান সরবরাহকারী; পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যালকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এই সমস্ত তথ্য পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য দপ্তরের স্টোর ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমে আপডেট করার কথা বলা হয়। তারপরেও দুর্ভাগ্যজনক ভাবে রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর নির্ভরশীল সাধারণ দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী মহিলারা চরম ক্ষতিগ্রস্থ হলেন।’
শুভেন্দু অধিকারীর অভিযোগ,’আমার কাছে নির্দিষ্ট সুত্রে খবর আছে যে “পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড” নামক কোম্পানিটির ডিরেক্টরদের নামে কয়েক’শ ভুয়া কোম্পানি নিবন্ধিত রয়েছে। তাদের ফার্মের উপর এত গুরুতর নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও,কি ভাবে তারা পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকার পরিচালিত স্বাস্থ্য পরিসেবা কেন্দ্রগুলিতে নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহ করার অনুমতি পায়?’
তিনি কিছু প্রশ্ন তুলে লিখেছেন,’আজ সকালে আমি অবিলম্বে ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (DCGI) এবং সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন কে অনুরোধ জানাই যথাযথ তদন্ত শুরু করার জন্য। কিভাবে এই ফার্মটি রাতারাতি ফুলেফেঁপে উঠল, এবং রাজ্যের শাসক দলের সাথে তাদের যোগসূত্রই বা কি? কোন উপায়ে তারা সরকারি হাসপাতাল গুলিতে এখনও নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহ করে চলেছে?’
এর পরে শুভেন্দু অধিকারী লিখেছেন,’স্বাস্থ্য দফতরের টনক নড়ে এবং চটজলদি নির্দেশ জারি করা হয়েছে যে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালগুলিতে “পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড” সংস্থার সরবরাহ করা কোন কোন ওষুধ কত পরিমানে মজুত রয়েছে? বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালগুলিতে যাতে তা আর ব্যবহার না করা হয়।এই কাজটা আগে করলে এক সদ্যোজাত শিশুর জন্মদাত্রী মায়ের প্রাণ যেত না।’।